সেই শিশু রুহির পাশে দাঁড়ালেন শিক্ষা বোর্ড কর্মকর্তা

নিজস্ব প্রতিবেদক:

অসুস্থ বাবার চিকিৎসা ও নিজের পড়াশুনা খরচের জন্য সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রী রুহি খেলনা বিক্রি করছিল রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সামনে। এ নিয়ে সিল্কসিটি নিউজে খবর প্রকাশের পর সেই শিশুর পাশে দাঁড়িয়েছেন রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের এক কর্মকর্তা।

 

এর ফলে শিশু রুহির জীবনযুদ্ধে চালানোর পথে আকাশ ভরাকালো মেঘের মাঝে যেন কিছুটা হলেও সূর্যের আলোকিত আলো এসে দেখা দিল। এখন আর তাকে অন্তত পড়াশোনার খরচ নিয়ে ভাবতে হবে না।

 

খাতুনে জান্নাত রুহির বাড়ি নগরীর কোর্ট এলাকায়। সে মিশন গার্লস স্কুলের সপ্তম শ্রেণীর শিক্ষার্থী। পরিবারের অভাব অনটন আর অসুস্থ বাবার চিকিৎসার টাকা যোগাড় করতে বসেছে নিত্য সামগ্রী বিক্রয়েরে উদ্যেশ্যে বসে রামেক হাসপাতালের বর্হিবিভাগের সামনে।
গত বৃহস্পতিবার (৬ অক্টোবর) সিল্কসিটি নিউজে ‘বাবার চিকিৎসার জন্য খেলনা নিয়ে রাস্তায় শিশু রুহি’  শিরোনামে সংবাদটি প্রকাশ হওয়ার পর বিষয়টি অনেকের নজরে আসে। ফেসবুকেও শিশু রুহি  আলোচিত হয়ে উঠে। অত:পর প্রতিবেদনটি নজরে আসে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের  উপ-সচিব (প্রশাসন) ওয়ালিদ হোসেনের।
শুক্রবার রাতে তিনি খোদ ফোনে যোগাযোগ করেন সিল্কসিটি নিউজের সাথে। এরপর রোববার শিশু রুহিকে তার কার্যালয়ে ডাকেন শিক্ষা বোর্ডের ওই কর্মকর্তা। এদিন বিকেল তিনটার দিকে রুহির সাথে ছিলেন তার মা জান্নাতুল ফেরদৌস।
এ সময় উপ-সচিব (প্রশাসন) ওয়ালিদ হোসেন রুহির মায়ের হাতে ব্যাক্তিগত ভাবে নগদ ৫ হাজার টাকা তুলে দেন। তিনি রুহির বিষয়টি নিয়ে মিশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের সাথে যোগাযোগ করেন এবং রুহির স্কুলের সম্পূর্ণ বেতন মওকুফের ব্যবস্থা করে দেন। এছাড়াও তিনি রুহির শিক্ষাক্ষেত্রে সার্বিক সহযোগীতার আ্শ্বাস দেন।
এ সময়  রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের উপ-সচিব (প্রশাসন) ওয়ালিদ হোসেন বলেন, এই ধরনের ঘটনা বা শিক্ষা জীবন অত্যন্ত মর্মস্পর্শী। আমি যখনই কোন শিক্ষার্থীর এমন অবস্থা দেখি, তাদের পাশে নিজেই ছুটে যাই। পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করি। আর যেহেতু শিক্ষা নিয়েই আমাদের কাজ, তাই শিক্ষার্থীর কোন সমস্যা আমাদের খুব দূর্বল করে। কারণ ওদের নিয়েই আমাদের প্রতিষ্ঠান।’
ওয়ালিদ হোসেন বলেন, ‘সমাজের আনাচে-কানাচে এমন অনেকেই আছেন যারা শিক্ষার্জন করতে চায় কিন্তু পারে না। সংবাদ মাধ্যমগুলোর মাধ্যমে আমরা তাদের সম্পর্কে জানতে পারি। এই ধরনের সংবাদ প্রকাশ হলে সমাজের অনেক হৃদয়বান মানুষ সেসব শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়াতে পারে। এর জন্য তিনি গণমাধ্যমের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। শিশু রুহি নিয়ে খবর প্রকাশ করায় সিল্কসিটি নিউজ পরিবারকেও ধন্যবাদ জানান ওই শিক্ষা কর্মকর্তা।

 

এ সময় রুহি বলে, ‘আমি চাইনি আমার মা রাস্তায় বসুক। মা পরিবারে অনেক পরিশ্রম করেন। পুথির ব্যাগ তৈরী করেন-যা আমি এখানে ওখানে বিক্রি করি। আর বাবার এই অবস্থায় কিছুই করার নাই। তাই আমি নিজেই বাধ্য হয়ে মা কে বলেছিলাম খেলনা বিক্রির কথা। এখন অনেক ভালো লাগছে আমাদের পাশে শিক্ষা বোর্ডের একজন স্যার দাঁড়িয়েছেন।’

 

এদিকে অনুদান পেয়ে আবেগে আপ্লুত রুহির মা বলেন, আমি সব সময় চাই আমার মেয়ে অনেক বড় হবে। কিন্তু স্বামর্থের কাছে আমরা অসহায় হয়ে পড়ি। কুলোয় না। এই অনুদানটা কিছুটা হলেও আমাদের কাজে আসবে। আমার যত কষ্টই হোক আমার মেয়েকে আমি পড়াব। ওর স্বপ্ন পূরণ করার চেষ্টা করব।’

 

স/আর