সেই নাইচকে চাকরি দিল ইসলামিক ফাউন্ডেশন

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

বগুড়ার ধুনটে বাবার কোলে চড়ে এইচএসসি পরীক্ষা দেয়া সেই প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী নাইচ খাতুনকে চাকরি দিয়েছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন।

বগুড়া জেলা ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপপরিচালক আবদুর রাজ্জাক মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রমের আওতায় শিক্ষিকা হিসেবে বুধবার বিকালে তার হাতে নিয়োগপত্র তুলে দিয়েছেন।

নাইচ খাতুন ধুনট উপজেলার চৌকিবাড়ী ইউনিয়নের বিশ্বহরিগাছা বাহালগাছা গ্রামের কৃষক নজরুল ইসলামের মেয়ে। তিনি এ বছর বিশ্বহরিগাছা বহালগাছা বহুমুখী মহাবিদ্যালয়ের এইচএসসি পরীক্ষার্থী।

এক ভাই ও এক বোনের মধ্যে নাইচ খাতুন ছোট। বড় ভাই রবিউল করিম বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজে অনার্সের ছাত্র। মাত্র দেড় বিঘা জমির ওপর চলে তাদের লেখাপড়া ও সংসার।

নাইচ খাতুনের দুটি পা থাকলেও জন্ম থেকে তা শক্তিহীন। ডান হাতেও নেই শক্তি। সম্বল তার বাম হাত। এ নিয়েই চলছে তার নিরন্তন লড়াই। রাতদিন পরিশ্রম করে শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে পেছনে ফেলে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।

শারীরিক প্রতিবন্ধকতার কাছে হার না মানা নাইচ খাতুন গত ১ এপ্রিল বাবার কোলে চড়ে ধুনট সরকারি ডিগ্রি কলেজ কেন্দ্রে চলতি এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিতে আসেন। বাবা নজরুল ইসলাম তাকে কোলে তুলে নিয়ে ধুনট সরকারি ডিগ্রি কলেজের ১২১ নম্বর কক্ষের একটি ব্রেঞ্চে বসিয়ে দেন। আবার পরীক্ষা শেষে একইভাবে তাকে বাড়ি ফিরে নিয়ে যান।

এভাবেই নাইচ বিশ্বহরিগাছা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০১৭ সালে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ৩.৫৫ পেয়েছিলেন।

নাইচের চিকিৎসার জন্য অনেক ডাক্তার ও কবিরাজের কাছে গেছে তার পরিবার। কিন্তু অর্থাভাবে তাকে সুস্থ করতে পারেননি। এ নিয়ে গত ২ ও ৩ এপ্রিল কয়েকটি জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকায় সচিত্র রিপোর্ট প্রকাশিত হয়।

বগুড়া জেলা ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপপরিচালক আবদুর রাজ্জাক বলেন, পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের মাধ্যমে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী নাইচ খাতুনের অদম্য ইচ্ছাশক্তি ও মনোবলের বিষয়ে জানতে পারি। এ কারণে তাকে মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রমের আওতায় ইসলামিক ফাউন্ডেশনের একজন শিক্ষিকা হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। সে লেখাপড়ার পাশাপাশি তার সুবিধামতো সময়ে বাড়িতে বসেই ক্লাস নেবে।

তিনি বলেন, প্রথম অবস্থায় নাইচকে মাসে ৫ হাজার টাকা বেতন দেয়া হবে। এতে কিছুটা হলেও নাইচের দরিদ্র পরিবার উপকৃত হবে বলে তিনি আশাবাদ করেন। নাইচ খাতুন বলেন, আমি কারও মাথায় বোঝা হয়ে থাকতে চাই না। তাই ইচ্ছাশক্তি ও মনোবল নিয়েই এক হাত দিয়ে শিক্ষাজীবন শুরু করেছি। এবার এইচএসসি পাস করতে পারলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার ইচ্ছা রয়েছে। তবে আমার দরিদ্র পিতার পক্ষে লেখাপড়ার খরচ জোগাতে অনেক কষ্ট হবে। তার পরও কষ্ট করে লেখাপড়া করে একজন আদর্শ শিক্ষক হতে চাই।

তিনি বলেন, ইসলামিক ফাউন্ডেশনে শিক্ষকতার চাকরি আমার জীবনে সফলতা বয়ে আনবে। এ কারণে আমি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।

চৌকিবাড়ী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জুলফিকার আলী ভুট্টো বলেন, নাইচ খাতুন প্রতিবন্ধী ভাতা পায় না। তাকে প্রতিবন্ধী ভাতা প্রদানসহ তার লেখাপাড়ার সার্বিক খোঁজখবর নিচ্ছি।