সু চি-সেনাপ্রধানের বিচার না হওয়া পর্যন্ত ফিরতে চায় না রোহিঙ্গারা

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বর্বরতার শিকার হয়ে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারা স্বদেশে ফেরত যেতে চাচ্ছে না। তারা স্লোগান দিচ্ছে, মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চি এবং সেনাপ্রধানের বিচার না হওয়া পর্যন্ত দেশে ফিরবে না।

বৃহস্পতিবার থেকে বহুল আলোচিত রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তন শুরুর কথা থাকলেও রোহিঙ্গাদের অনীহার দাবিতে তা স্থগিত করা হয়েছে।

টেকনাফের উনচিপ্রাং পুটিবনিয়া ক্যাম্পের রোহিঙ্গারা প্রত্যাবাসনবিরোধী বিক্ষোভ করেছে। বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত এ বিক্ষোভ চলে।

এ সময় তারা ‘ন যাইয়ুম, ন যাইয়ুম, বিচার চাই, বিচার চাই’ (যাব না যাব না, বিচার চাই বিচার চাই) বলে স্লোগান দিতে থাকে।

একপর্যায়ে তারা স্লোগান দিতে দিতে মিছিল সহকারে ক্যাম্পের ভেতরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এ সময় ত্রাণ ও শরণার্থী প্রত্যাবাসন কমিশনার আবুল কালাম আযাদসহ সরকারি ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার দায়িত্বশীল প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

বিক্ষোভে প্রত্যাবাসন তালিকায় থাকা রোহিঙ্গাদের সঙ্গে তালিকার বাইরের রোহিঙ্গারাও অংশগ্রহণ করে।

জানা যায়, ১৫ নভেম্বর ছিল আলোচনাসাপেক্ষে বাংলাদেশ-মিয়ানমার রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের নির্ধারিত দিন। বান্দরবানের ঘুমধুম পয়েন্ট দিয়ে এই প্রত্যাবাসন কার্য্যক্রম শুরুর জন্য প্রথম দফায় টেকনাফের হোয়াইক্যং পুটিবনিয়া ক্যাম্পের ২৭ পরিবারের ১২৭ জনকে তালিকাভুক্ত করা হয়।

রেজিস্ট্রিকৃত এসব রোহিঙ্গাদের নেয়ার জন্য যানবাহন আসলে রোহিঙ্গারা গায়েব হয়ে যায়। তখন ক্যাম্পসংশ্লিষ্ট প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বেকায়দায় পড়ে যান। শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার আবুল কালামসহ সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ঘটনাস্থলে এসে তাদের বুঝানোর চেষ্টা করেন। তখন অনেক রোহিঙ্গা মিয়ানমারের ন্যাশনালিটি কার্ড ছাড়া ফিরে না যাওয়ার জন্য কান্নায় ভেঙে পড়ে।

এরপর রোহিঙ্গারা সংঘবদ্ধ হয়ে ব্যানার নিয়ে প্রত্যাবাসনবিরোধী স্লোগান দেয়। এরপর তারা অং সান সু চি এবং সেনাপ্রধানের বিচারসহ ন্যাশনালিটি কার্ড দাবি করেন। উশৃঙ্খল পরিস্থিতি ঠেকাতে ক্যাম্পে নিয়োজিত আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তারক্ষী বাহিনীর সদস্যরা তাদের শান্ত করেন।

বেলা আড়াইটার দিকে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে রাবি করাতে না পেরে শেষমেষ ফিরে যাওয়ার পথে ত্রাণ ও শরণার্থী প্রত্যাবাসন কমিশনার আবুল কালাম আযাদ সাংবাদিকদের জানান, পূর্ব নির্ধারিত তারিখ অনুযায়ী তালিকাভুক্ত রোহিঙ্গাদের ঘুমধুম ট্রানজিট ঘাটে নিয়ে যাওয়ার জন্য বাস, মাইক্রো, ট্রাক, চিকিৎসা দল, খাদ্যসামগ্রী নিয়ে অপেক্ষা করছিল। কিন্তু নির্দিষ্ট সময় শেষ হলেও রোহিঙ্গারা সেচ্ছায় ফিরতে নারাজ। একজন রোহিঙ্গাও স্বেচ্ছায় ফিরতে রাজি নন বলে জানান তিনি।

এরপর তিনি থাইংখালী জামতলী (১৫ নং ক্যাম্প) ক্যাম্পের উদ্দেশে রওনা দেন।

এদিকে বিকাল ৪টার দিকে রোহিঙ্গাদের আরও একটি বড় অংশ সংগঠিত হয়ে প্রত্যাবাসনবিরোধী মিছিল করার চেষ্টা চালালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বাধার সম্মুখীন হয়।

এ ব্যাপারে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রণয় চাকমা জানান, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য নির্ধারিত দিনক্ষণ ঠিক থাকায় এই ক্যাম্পের নিবন্ধিত রোহিঙ্গাদের স্বদেশে প্রত্যাবাসনের জন্য আরআরসিসহ টেকনাফ উপজেলা প্রশাসন যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করেন। হঠাৎ করে তারা প্রত্যাবাসনবিরোধী স্লোগান দিতে থাকে। তাদের বুঝানোর চেষ্টা চলছে। এতে তারা স্বেচ্ছায় নিজ দেশে ফিরতে চাইলে তাদের যে কোনো মুর্হুতে স্বদেশে প্রত্যাবাসনের জন্য প্রশাসন প্রস্তুত রয়েছে।

স্থানীয় বিভিন্ন সূত্র জানায়, কতিপয় এনজিও রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরে না যেতে উসকানি দিয়েছে। তবে সেসব এনজিও কারা তা জানাতে পারেনি ওইসব সূত্র।