সুস্থতার জন্য মৌসুমি ফল

বর্ষাকাল শুরু হলেও বৃষ্টির দেখা মিলছে না তেমন। এদিকে গ্রীষ্মের প্রচণ্ড তাপ এখনও বিদায় নেয়নি। তীব্র গরমে প্রাণ ওষ্ঠাগত যেন! এ সময়ে একটু সচেতন না হলেই দেখা দিতে পারে নানা অসুখ-বিসুখ। কারণ আবহাওয়া পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখতে হয়।

আম: আম কেবল মিষ্টি স্বাদের জন্যই নয় বরং এর পুষ্টিকর বৈশিষ্ট্যের জন্যও পরিচিত। প্রোটিন, ভিটামিন এ, বি-৬, সি, আয়রন, ফোলেট, ম্যাগনেসিয়াম, রাইবোফ্লাভিন এবং ডায়েটি ফাইবার জাতীয় স্বাস্থ্য সমৃদ্ধকারী পুষ্টিতে ভরপুর এই ফল। আমে বিশটিরও বেশি ভিটামিন এবং খনিজ থাকে, যা একে সুপারফুড হিসেবে তৈরি করতে সহায়তা করে। ৩/৪ কাপ আম আপনার প্রতিদিনের ভিটামিন সি-এর ৫০ শতাংশ, ভিটামিন এ-এর ৮ শতাংশ এবং ভিটামিন বি-৬-এর ৮ শতাংশ সরবরাহ করে। তৃষ্ণা নিবারণের জন্য পাকা আম, আমের রস, আমের লাচ্ছির চেয়ে ভালো উপায় নেই। আম দিয়ে তৈরি করা যায় নানা স্বাদের শরবত, কুলফি, আইসক্রিম ইত্যাদি।

কাঁঠাল: এ মৌসুমের আরেকটি সুস্বাদু ফলের নাম কাঁঠাল। গ্রামে কিংবা শহরে অথবা বাজারে আপনার সঙ্গে এ ফলের দেখা হবেই। এতে আছে প্রচুর পরিমাণে মিনারেল। কাঁঠালে আছে প্রচুর পরিমাণে থায়ামিন, রিবোফ্লাভিন, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, আয়রন, সোডিয়াম, জিঙ্ক এবং নায়াসিনসহ বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদান। অন্যদিকে কাঁঠালে প্রচুর পরিমাণে আমিষ, শর্করা ও ভিটামিন থাকায় শরীরের জন্য বিশেষ উপকারী ফল। কাঁঠালে চর্বির পরিমাণ অনেক কম। এ ফল খাওয়ার কারণে ওজন বৃদ্ধির আশঙ্কা সবচেয়ে কম। এটি উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে এবং রাতকানা রোগ প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে।

লিচু: রসে টইটম্বুর একটি ফলের নাম লিচু। বাইরের লাল রঙের আবরণের নিচে থাকে সাদা রঙের মিষ্টি একটি মাংসালো অংশ। লিচুতে রয়েছে প্রচুর শ্বেতসার, ভিটামিন ও খনিজ লবণ। লিচুতে ভালো পরিমাণে ভিটামিন সি, ভিটামিন বি-কমপ্লেক্স এবং ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট ফ্ল্যাভোনয়েড থাকে। এটি পুষ্টির একটি সমৃদ্ধ উৎস যা রক্তের উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয়। এতে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। আছে প্রচুর পটাশিয়াম, যা সোডিয়াম স্তর বজায় রাখতে প্রয়োজনীয়। এটি রক্তচাপ বজায় রাখতে সহায়তা করে। স্ট্রোক এবং হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি হ্রাস করে। এছাড়াও এতে ম্যাঙ্গানিজ, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন, তামা এবং ফোলেট জাতীয় খনিজ রয়েছে যা রক্তচাপ বজায় রাখে।

ফুটি: গরমের একটি তাজা ফল যা আপনার শরীরকে প্রচুর হাইড্রেশন দেয়। এটি কাঁচা কিংবা জুস করে খাওয়া যায়। ফুটির শরবতও এ গরমে তরতাজা রাখতে সাহায্য করে। এটি কেবল স্বাদেই নয়, সুন্দর গঠন এবং আকর্ষণীয় গন্ধের জন্যও পরিচিত। ভিটামিন এ, ডি, বি -৬, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম এবং ডায়েটি ফাইবারের মতো পুষ্টিতে ভরপুর হল ফুটি। এটি কেবল হাইড্রেটিং নয়, কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো সমস্যা থেকে মুক্তি পেতেও সাহায্য করে। ফুটিতে উচ্চ ক্যারোটিনয়েডের উপস্থিতি ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে। এ ছাড়া এতে ভিটামিন সি থাকার কারণে তা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।

জাম: মিষ্টি স্বাদের জাম খেয়ে মুখ রঙিন করার স্মৃতি প্রায় সবারই আছে। জাম ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য খুব উপকারী। এর গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম। ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, ভিটামিন সি, থিয়ামিন, রাইবোফ্লাভিন সমৃদ্ধ জাম খেলে পেট ভালো থাকে। দাঁত আর মুখের স্বাস্থ্য ভালো রাখতেও কালোজাম অপরিহার্য। জামে আছে প্রচুর ভিটামিন সি এবং ভিটামিন এ। পেটের সমস্যা দূর করতে এবং ক্ষুধামন্দা দূর করতে জামের জুড়ি নেই।

বেল: বেল একটি গ্রীষ্মকালীন ফল, যা শীতল বৈশিষ্ট্যের জন্য পরিচিত। গরমের কারণে সৃষ্ট পেটের অসুখ এবং অন্যান্য হজমজনিত সমস্যা দূর করতে এ গ্রীষ্মকালীন ফলটি একটি দুর্দান্ত প্রতিকার। এ ছাড়া উডেন আপেল হিসেবে পরিচিত বেল ডায়েটরি ফাইবারের একটি দুর্দান্ত উৎস, যা প্রাকৃতিক রেচক হিসেবে কাজ করে এবং হজমে উন্নতি করতে সাহায্য করে। এটি কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি দেয়। এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন সি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। এর ট্যানিন সারায় ক্রনিক পেট খারাপের সমস্যা। কমায় গ্যাসট্রিক। এটি অ্যান্টি ভাইরাল ও অ্যান্টি মাইক্রোবায়ালও বটে। বেলের শাঁস কমায় কনস্টিপেশনের আশঙ্কা।

জামরুল: জামরুল স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। এতে খনিজ পদার্থ রয়েছে কমলার তিন গুণ এবং আম, আনারস ও তরমুজের সমান। লিচু ও কুলের সমান এর ক্যালসিয়ামের পরিমাণ এবং আঙুরের দ্বিগুণ। আয়রনের পরিমাণ কমলা, আঙুর, পেঁপে ও কাঁঠালের চেয়েও বেশি। ফসফরাসের পরিমাণ আপেল, আঙুর, আম ও কমলার চেয়ে বেশি। সহজলভ্য জামরুলে আছে আশ্চর্য সব ঔষধি গুণ। এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘সি’। এর বিচি ডায়রিয়া প্রতিরোধে ওষুধের মতো কাজ করে। এ ফল হজমশক্তি বৃদ্ধিতে সহায়ক, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ভূমিকা রাখে। এ ছাড়া এ ফলে রয়েছে ক্যান্সার প্রতিরোধের উপাদান। এটি কলস্টেরলের মাত্রা কমাতে দারুণ কার্যকর, মস্তিষ্ক ও লিভার সুরক্ষায় টনিক হিসেবে কাজ করে, বাত নিরাময়ে উপকারী। শুধু তা-ই নয়, লিভার আর কিডনির বিষ দূর করে বিপাকক্রিয়া সুষ্ঠু রাখতেও অব্যর্থ টোটকা এ জামরুল।