সুন্দরবন ও লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান পর্যটকদের জন্য খুলছে ১ নভেম্বর

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

 

কভিড-১৯ মহামারির কারণে প্রায় সাত মাস বন্ধ থাকার পর আগামী ১নভেম্বর থেকে পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হচ্ছে সুন্দরবন ও মৌলভীবজারের লাউয়াছড়া বনাঞ্চল। স্বাস্থ্যবিধি মেনে পর্যটকদের এসব স্থানে ভ্রমণ করতে হবে।

সমকালকে এ তথ্য দিয়েছেন বন ও পরিবেশ উপমন্ত্রী বেগম হাবিবুন নাহার। তিনি জানান, সুন্দরবনে পর্যটক প্রবেশের অনুমতি প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বন বিভাগ। সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভায় এসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। বন বিভাগকেও মৌখিকভাবে বলা হয়েছে। এছাড়া ট্যুর অপারেটরদেরও প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে। তবে, করোনা পরিস্থিতির বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে একটি জাহাজে ৫০ জনের বেশি না যাওয়া এবং শারীরিক ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ ট্যুর অপারেটর ও পর্যটকদের সব স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে।

মোংলা (বাগেরহাট), স্থানীয় বন বিভাগ সূত্র জানায়, সুন্দরবন খুলে দেয়ার জন্য ইতিমধ্যে বনঅধিদপ্তর একটি গেজেটও প্রণয়ন করেছে। বনবিভাগের খুলনা, সাতক্ষীরা, শরণখোলা, বাগেরহাট ও মোংলাসহ সকল জায়গায়। বন বিভাগের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মেনেই পর্যটকদের বনে ভ্রমণ করতে হবে। এ ছাড়া করোনাকালে একসঙ্গে বেশি লোকজন নিয়ে ভ্রমণ করা যাবে না। মানতে হবে সামাজিক ও শারীরিক দুরত্বও। সেই সঙ্গে অবশ্যই পর্যটন ব্যবসায়ীদেরকে সতর্ক অবস্থানে থাকতে হবে।

এর আগে চলতি বছরের ১৯ মার্চ করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণে সুন্দরবনে পর্যটকদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। সুন্দরবনের ৯টি পর্যটন এলাকায় পর্যটন মৌসুমে (নভেম্বর থেকে মার্চ) কোনো কোনো দিন ৪৫ হাজারেরও বেশি পর্যটক অবস্থান করে থাকে। নিষেধাজ্ঞা জারির ফলে পর্যটকশূন্য থাকায় চরম আর্থিক হুমকির মুখে পড়ে ট্যুর অপারেটরসহ সুন্দরবনকেন্দ্রিক পর্যটন ব্যবসায়ীরা। এরপর থেকে বেকার হয়ে পড়ে এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত পর্যটন ব্যবসায়ী, মালিক ও শ্রমিক-কর্মচারীরা। তারা সুন্দরবন পর্যটনদের জন্য খুলে দেয়ার দাবিতে মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচিও পালন করে আসছিল। এর পর গত ১৯ অক্টোবর বন ও পরিবেশবিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভায় সুন্দরবনকে পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়ার পক্ষে আলোচনা হয়। সভায় আসন্ন পর্যটন মৌসুমকে সামনে রেখে সুন্দরবনকে উন্মুক্ত করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বন বিভাগের সিদ্ধান্তের পর পরই প্রস্তুতিও নিতে শুরু করেছেন ট্যুরিজম ব্যবসায়ীরা। তারা তাদের নৌযানগুলোকে মেরামতসহ নান কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন।

করমজল পর্যটন কেন্দ্র ও বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ইনচার্জ মো. আজাদ কবির বলেন, বন্ধের ৭ মাসে কম হলেও অন্তত প্রায় ১০ লাখ টাকা রাজস্ব আয় হতো এখান থেকে। ঠিক অন্যান্য কেন্দ্রগুলো থেকেও বেশ পরিমাণ রাজস্ব হতো, করোনা দুর্যোগের কারণে সেই ক্ষতিটাতো বনবিভাগের হয়েই গেছে।

ট্যুরিজম ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান মিজান বলেন, আমাদের তো সবই শেষ। নৌযান অলস পড়ে থেকে সেগুলোতে নানা ধরণের ত্রুটি দেখা দিয়েছে। বসিয়ে বসিয়ে বেতন দিতে হয়েছে কর্মচারীদের। ধার দেনা করে পুঁজি খাটিয়ে যে ব্যবসা শুরু করেছিলাম তা এখন যেন মরার উপর খড়ার ঘায়ে পরিণত হয়েছে। তারপরও যেহেতু অনুমতি দেওয়া হচ্ছে আমরা সকল বিধি নিষেধ মেনেই ট্যুরিজম ব্যবসা পরিচালনা করবো।

কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি প্রনীত রঞ্জন দেবনাথ জানান, করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর আগামী ১ নভেম্বর খুলছে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান।

এ ব্যাপারে বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের সিলেট বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ‘আগামী ১ নভেম্বর থেকে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান দশনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে, এমন সিদ্ধান্তের কথা তিনি মন্ত্রণালয় থেকে শুনেছেন। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা পেলেই এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এর ফলে শুধু লাউয়াছড়াই নয়, সিলেটের বিভাগের বিভিন্ন জাতীয় উদ্যানেও একই সিদ্ধান্ত ঘোষিত হবে। কয়েকদিন পরই পর্যটকরা এখনকার বন ভ্রমণের সুযোগ পাবেন বলে জানান এ কর্মকর্তা।

মৌলভীবাজার বন্যপ্রাণী রেঞ্জ সূত্র জানায়, তৎকালীন আসাম সরকার ১৯১৭ সালে পশ্চিম ভানুগাছের ১ হাজার ২৫০ হেক্টর বনভূমিকে প্রাথমিকভাবে সংরক্ষিত সম্পদ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে। এরপর ১৯২৫ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে সংরক্ষিত বন হিসেবে ঘোষণা এবং পরে ১৯৯৬ সালে ১ হাজার ২৫০ হেক্টর জায়গা নিয়ে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান ঘোষণা করা হয়। বনের চারপাশ ঘিরে চা বাগান, হাওর, সংরক্ষিত বন ও বনসংলগ্ন গ্রাম রয়েছে। লাউয়াছড়ায় জাতীয় উদ্যানে রয়েছে ১৬৭ প্রজাতির উদ্ভিদ এবং ২৪৬ প্রজাতির আবাসিক এবং পরিযায়ী পাখি। এছাড়াও রয়েছে কয়েক প্রজাতির স্তন্যপায়ী, সরীসৃপ এবং উভচর প্রাণী। এগুলোর মধ্যে অন্যতম মহাবিপন্ন উল্লুক, মুখপোড়া হনুমান, লজ্জাবতী বানর, বনরুইসহ বিরল প্রজাতির বিপন্ন প্রাণী ।

সূত্র: সমকাল