সুজনের বাবা হয়নি কেউ কিন্তু মা হতে হয়েছে সোনিয়াকে

নিজস্ব প্রতিবেদক, নওগাঁ:
ক’ বছরই বয়স হবে সোনিয়ার? তের কি চৌদ্দ। এই বয়সেই সোনিয়া নারীত্বের স্বাদ না বুঝে মা হয়েছে দু বছর বয়সী সুজন মাঝির। মাতৃত্ব কি তা মোটেও বুঝে না পাগলিটা কিন্তু নাড়িকাটা সুজনকে এক মুহূর্তের জন্যও চোখের আড়াল হতে দেয় না। মান্দা থানার দেলুয়াবাড়ী গ্রামে বাস সোনিয়ার। সোনিয়ার মা রেসমা একটি খাবার হোটেলে কাজ করে। পিতৃহীন সোনিয়া পেটের ক্ষুধা মেটাতে হাত পাতে মানুষের কাছে কাছে। প্রায় তিন বছর আগে, তখন সোনিয়ার বয়স ১০/১১ বছর। দুর্বৃত্তের দুর্বিপাকে ক্ষণিকের জন্য সোনিয়ার ঠিকানা হয় ঠাকুরগাঁও জেলার চিলাহাটি রেল স্টেশন। সেখানে ভিক্ষাবৃত্তি করাবস্থায় আব্দুূল জব্বার নামের এক শহুরে চতুর ভিক্ষুকের জৈবিক ক্ষুধার শিকার হয় সোনিয়ার কিশোর দেহ। কৈশোর কিংবা নারীত্ব বুঝে উঠার আগেই সোনিয়াকে স্বাদ গ্রহণ করতে হয় বিষাক্ত মাতৃত্বের। মাতৃত্ব যে সবার জীবনেই আশির্বাদ হয় না সোনিয়াই তার অনন্য দৃষ্টান্ত।
সোনিয়া তার সন্তানের নাম রেখেছে সুজন মাঝি। যথার্থ স্বার্থকই নামটা। সত্যিই সুজনকে জীবন তরীর দক্ষ মাঝি হয়ে পথ পাড়ি দিতে হবে এই আজব পৃথিবীর সাগর-মহাসাগরে। সোনিয়ার কাছে তার বাবার নাম জানতে চাইলে সে তার বাবার পরিচয় দিতে পারেনি। একদিন সুজন মাঝিও তার বাবার পরিচয় জানবে না। পিতৃপরিচয়হীন এই সোনিয়া কিংবা সুজন মাঝি মানব সভ্যতার প্রাগৈতিহাসিক যুগের জৈবিকতার ফসল। আজ সুজনের বাবা হয়নি কেউই কিন্তু ঠিকই মা হতে হয়েছে সোনিয়াকে।
সন্তান জন্মদানের প্রক্রিয়াটা একই। কিন্তু মহাজাগতিক নিয়ম-নীতির মারপ্যাঁচে হতভাগা কিছু শিশু পিতৃপরিচয় থেকে বঞ্চিত। এসব শিশুদের মধ্যে অনেকেই হবে রাষ্ট্রের জন্য মারাত্মক হুমকি। তাই রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় এসব শিশুদের আবাসনসহ সঠিক শিক্ষার মাধ্যমে দেশটাকে আলোর পথে ধাবিত করা আবশ্যক। কেননা এটাও ছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের আদর্শ। তিনি বলেছিলেন ওদের পিতার নামের জায়গায় যেনো আমার নাম লিখে দেয় আর ঠিকানার স্থানে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর।
স/শা