সিলেটে সাধারণ ওয়ার্ডে একমাত্র নারী প্রার্থী লিপি

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

‘আমি স্বপ্ন দেখাই না। আমার কর্মই হবে সুন্দর আগামীর স্বপ্ন দেখার হাতিয়ার।’ এভাবেই ভোটারদের জন্য নিজের পরিকল্পনার কথা জানালেন সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সাধারণ ওয়ার্ডে একমাত্র নারী কাউন্সিলর প্রার্থী নিলুফা সুলতান চৌধুরী লিপি। প্রার্থী হয়েই তিনি আলোচনায় চলে এসেছেন। অনেকে তাঁকে বলছেন সাহসী নারী। সিটি করপোরেশনের ৫ নম্বর ওয়ার্ডে ট্রাক্টর প্রতীক নিয়ে রয়েছেন ভোটের লড়াইয়ে।

নিলুফা চৌধুরী এই ওয়ার্ডে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আরও পাঁচজন প্রার্থীর সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বললেন, ‘আমি আত্মবিশ্বাসী, আমি জানি নাগরিকদের জন্য কী কী করতে পারব। শুধু এটুকুই বলতে পারি, আমাকে নির্বাচিত করলে ৫ নম্বর ওয়ার্ডের মানুষ একজন সৎ মানুষকে নির্বাচিত করবেন। আমি এটা জানি, তাঁরা যদি আমাকে একবার নির্বাচিত করেন তাহলে বারবার নির্বাচিত করবেন।’ যদি নির্বাচিত না হন? এমন প্রশ্নের জবাবে লিপি বলেন, ‘এটাই প্রথম এটাই শেষ।’

নিলুফা চৌধুরী লিপি সংস্কৃতির একজন সংগঠক। সিলেট নোলক কালচারাল অর্গানাইজেশন নামের একটি সংগঠন পরিচালনা করেন। জানালেন, গত ১০–১২ বছর ধরে সেবামূলক কাজ করছেন। আর সেসব সেবামূলক কাজ নিঃস্বার্থভাবে নিজের তহবিল থেকেই করছেন।

নির্বাচনে আসার কারণ জানতে চাইলে লিপি বললেন, সব সময়ই ব্যতিক্রমী কাজ করাই তাঁর পছন্দ। ‘ছোটবেলা থেকেই অন্যদের সঙ্গে আমার মেলে না, ব্যতিক্রমী কাজের কারণে। আমি হিপোক্রেসি পছন্দ করি না। যা করি প্রকাশ্যে করি’, বলেন লিপি। জানালেন, তাঁর ওয়ার্ডটি গডফাদারদের কাছে জিম্মি। ভোটারদের স্বার্থ রক্ষা করতে আর তাঁদের গডফাদারদের হাত থেকে বাঁচাতে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন বলে জানালেন তিনি।

সাধারণ ওয়ার্ডে নির্বাচন করার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে লিপি জানালেন, সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলরদের মূল্যায়ন নেই, ক্ষমতা নেই। ভোটারদের জন্য সত্যিকারের কাজ করতে সাধারণ ওয়ার্ডের বিকল্প নেই। নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পর ইতিবাচক ও নেতিবাচক উভয় ধরনের প্রতিক্রিয়া পেয়েছেন বলে জানালেন তিনি। নির্বাচনী প্রচার শুরুর দিকে নির্বাচন কমিশনের উদ্যোগে আয়োজিত মতবিনিময় অনুষ্ঠানে মেয়র, ২৭টি ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও ৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডের নারী কাউন্সিলর প্রার্থীরা উপস্থিত ছিলেন। লিপি জানালেন, ‘সেখানে মঞ্চ থেকে আমাকে সাহসী নারী সম্বোধন করা হয়। এটা আমার খুব ভালো লেগেছে।’

নির্বাচনী প্রচার শুরুর পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে তাঁর নামে একটি ভুয়া আইডি খুলে সেখান থেকে রাজনৈতিক নানা পোস্ট দেওয়া হচ্ছে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করলেন তিনি। জানালেন, তিনি কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত নন। তবে নিজেকে বঙ্গবন্ধুর একনিষ্ঠ ভক্ত হিসেবে উল্লেখ করলেন তিনি।

এ ছাড়া তাঁর ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে নানা অপপ্রচারও করা হচ্ছে বলে জানালেন তিনি। লিপি বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নোংরা নোংরা কথা ছড়ানো হচ্ছে আমার নামে।’ লিপির মতে, বাংলাদেশে নারীদের দাবিয়ে রাখতে ব্যক্তিগত অপপ্রচার ও নোংরামি একটা হাতিয়ার। নারীর চরিত্রহননের মাধ্যমে নারীকে মাঠ থেকে সরাতে চায় একটি চক্র। এসব অপকর্মে ভীত নন বলেও জানালেন তিনি।

লিপি বলেন, নির্বাচনী কার্যক্রমে যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছেন তিনি।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা বলতে গিয়ে লিপি বলেন, ‘আমি সমাজসেবায় ছিলাম, আছি ও থাকব।’ তবে তাঁর ভালো লাগার একটি বিষয় হলো, সাধারণ আসনে নারীরা মাঠে নামতে পারেন, সেটা সিলেটের মানুষকে দেখিয়েছেন তিনি। তাঁর প্রত্যাশা, আগামী নির্বাচনে সিলেটের ২৭টি ওয়ার্ডে অন্তত ২৭ জন নারী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। বললেন, ‘আমি একটা পথ তৈরি করলাম। আগামী দিনে আরও অনেকে এই পথে হাঁটবেন, সেটাই আমার প্রত্যাশা।’