সিরাজগঞ্জ এলজিইডি: এক টাকা কমিয়ে সাত কোটি টাকার টেন্ডারে অনিয়ম

নিজস্ব প্রতিবেদক:

পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ দিতে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল (এলজিইডি) অধিপ্তরের সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা প্রকৌশলী একটি দরপত্রে বড় ধরনের অনিয়ম করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

অনুমোদিত প্রাক্কলোন ব্যায়ের চেয়ে মাত্র এক টাকা কমিয়ে গোপনে পছন্দের ঠিকাদারকে দর জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। গোপন প্রাক্কোলন ব্যয় মিলে যাওয়ার ফলে ওই ঠিকাদারকেই প্রায় সাত কোটি টাকার ওই কাজটি দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে। নির্দিষ্ট করে দেওয়া অনুমোদিত ওই প্রক্কোলন ব্যয় কোনো মতেই কমানোর সুযোগ না থাকলেও পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ দিতে সেই কাজটিই করেছেন ওই প্রকৌশলী। এতে করে ওই কাজে অংশ নেওয়া অন্যান্য ঠিকাদারদের মাঝে দেখা দিয়েছে চরম ক্ষোভ। বিষয়টি তাঁরা তদন্ত করে অভিযুক্ত প্রকৌশলী বদরুদ্দোজার বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।

সূত্র মতে, সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলায় একাডেমিক কাম মাল্টিপারপাস হল রুম নির্মাণের জন্য উপজেলা এলজিইডি অফিস থেকে একটি দরপত্র আহ্বান করা হয়। গত ১১ জুলাই আহ্বানকৃত ওই দরপত্রে প্রক্কোলন ব্যয় ধরা হয় ৬ কোটি ৯৬ লাখ ১৭ হাজার ১২৭ টাকা। সেই দর ধরে চারজন ঠিকাদার ওই টেন্ডারে অংশ নেন। অনুমোদিত এই দরপত্রের ১০ শতাংশের কমবেশি করা যাবে না বলে নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়। কিন্তু সেখানে এক টাকা কম করে দিয়ে গোপনে সেই দর একটি ঠিকাদরি প্রতিষ্ঠানকে জানিয়ে দেন সহকারী প্রকৌশলী বদরুদ্দোজা। ফলে ৬ কোটি ৯৬ লাখ ১৭ হাজার ১২৬ টাকা দর ধরে এমএএইচ কন্সট্রাকশন লিমিটেডকে কাজ দেওয়ার চূড়ান্ত প্রক্রিয়া চলছে। এরই মধ্যে গত ১২ আগস্ট ওই টেন্ডারটির দরপত্র খোলা হয়েছে। এখন চলছে যাচাই-বাছাই।

জানতে চাইলে ওই টেন্ডারে অংশ নেওয়া একজন ঠিকাদার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘উপজেলা প্রকৌশলী গোপনে তার তৈরী করা নির্ধারিত মূল্য একজন ঠিকাদারকে জানিয়ে দিয়েছেন। এ কারণে ওই ঠিকাদারই নির্দিষ্ট মূল্যে ১০ ভাগ কম দর দিয়ে কাজটি পেতে যাচ্ছেন। কিন্তু অনুমোদিত মূল্যের চেয়ে মাত্র এক টাকা কম দেওয়ার কারণে ওই টেন্ডারে অংশ নেওয়া অন্য তিন ঠিকাদারদের একজনকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। এটি ওই প্রকৌশলী করতে পারেন না। তিনি পছন্দের ঠিকাদারের নিকট থেকে মোটা অংকের অর্থ নিয়ে কাজটি তাঁকেই পাইয়ে দিতে এ কাজটি করেছেন।’

আরেক ঠিকাদার বলেন, ‘যেখানে প্রক্কোলন ব্যয় নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে, সেখানে নতুন করে ব্যয় বাড়ানো বা কমানোর কোনো সুযোগ নাই। কিন্তু সেই কাজটিই করেছেন উপজেলা সহকারী প্রকৌশলী। এটি তিনি বড় ধরনের অনিয়ম করেছেন।’

তবে জানতে চাইলে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা প্রকৌশলী বোদরুদ্দোজা বলেন, ‘টেন্ডারটি ওপেন হয়েছে। এখন যাচাই-বাছাই চলছে। তবে এক টাকা কমানো হয়েছে কিনা মনে পড়ছে না। আমি বাইরে আছি তাই বলতে পারছি না।’ এক টাকা কমানো যায় কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এটি করা হয়েছে বলে মনে পড়ছে না।’

এলজিইডি’র সিরাজগঞ্জ নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন, ‘এই ধরনের অনিয়ম হয়েছে কিনা আমার জানা নাই। খোঁজ নিয়ে বলতে পারবো। তবে অনিয়ম হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

জানতে চাইলে এলজিইডির টেন্ডার প্রকিউরমেন্টের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুস সাত্তার বলেন, যেহেতু প্রক্কোলন ব্যয় নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। কাজেই ওই টেন্ডারের দর কোনো প্রকৌশলী ইচ্ছেমতো কমাতে পারবেন না। এটি করলে তিনি বিধিসম্মত কাজ করেননি।’

স/আর