সিডিউল জমাদানের আগেই টেন্ডারে রাজশাহী ওয়াসা কর্মকর্তাদের কমিশন বাণিজ্য

নিজস্ব প্রতিবেদক:

আজ বৃহস্পতিবার রাজশাহী ওয়াসার একটি টেন্ডারের শিডিউল জমা দেওয়ার শেষ দিন। এক কোটি ৩০ লাখ টাকার কাজের এই টেন্ডারটি আহ্বান করা হয় গত ২৭ ফেব্রুয়ারি।

সে অনুযায়ী আজ সাড়ে ১১টার মধ্যে ঠিকাদাররা শিডিউল জমা দেবেন; এরপর ঠিকাদারদের দেওয়া দর দেখে টেন্ডার কমিটি সর্বনিম্ন দরদাতাকে কাজ দেওয়ার অনুমোদন দেবে।

কিন্তু টেন্ডার দাখিলের আগেই গত দুই-তিন দিন ধরে রাজশাহী ওয়াসার এক কর্মকর্তা ঠিকাদারদের ফোন করে কমিশন দাবি করছেন। যে যত কমিশন বেশি দেবেন, তাঁকেই ওই কাজটি দেওয়া হবে বলে ফোনে ঠিকাদারদের প্রস্তাব দিচ্ছেন ওই কর্মকর্তা।

রাজশাহী ওয়াসার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী পারভেজ মাহমুদ তথ্য দেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে বলেছেন, যে কর্মকর্তা ফোন করেছেন তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ঠিকাদারদের দাবি, এক কোটি ৩০ লাখ টাকার ওই কাজ দিতে ওয়াসার ওই কর্মকর্তা (প্রকৌশলী) নিজেদের জন্য ২৫ শতাংশ কমিশন ঠিক করার কথা জানিয়েছেন। এর মধ্যে যে যত বেশি কমিশন দিতে পারবেন, তাঁকেই ওয়াসার ‘গোপন দরটি’ জানিয়ে দেওয়া হবে। সেই হিসাবে টেন্ডার দাখিল করবেন ওই ঠিকাদার। এরপর তিনিই পেয়ে যাবেন কাজটি।

ঠিকাদাররা বলছেন, এভাবে গত কয়েক বছর ওয়াসার প্রকৌশলীরা প্রতিটি টেন্ডার থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ঠিকাদার বলেন, ওয়াসার প্রকৌশলীর দাবি করা ২৫ শতাংশ কমিশনের মধ্যে যদি ২০ শতাংশও দিতে হয়, তাহলে এক কোটি ৩০ লাখ টাকার কাজের জন্য অন্তত ২৩ লাখ টাকা দিতে হবে তাঁদের। এরপর ভ্যাট বাদ যাবে আরো প্রায় ২০ লাখ টাকা। এরপর ঠিকাদারকেও তো কিছু লাভ করতে হবে। এক কোটি ৩০ লাখ টাকার কাজের মধ্যে যদি ৪৩ লাখ টাকা চলেই যায়, তাহলে ঠিকাদার কত টাকা লাভ করবে, আর কাজ করবে কত টাকার?

ঠিকাদাররা আরো জানান, টেন্ডার আহ্বান করা হয় একটি সম্ভাব্য মূল্য ধরে। সেই মূল্য ধরেই ঠিকাদাররা ১০ ভাগ কম দর দিয়ে কাজ পেতে চেষ্টা করেন; কিন্তু রাজশাহী ওয়াসার টেন্ডারে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা খাতে ব্যয়ের পরিমাণ উল্লেখ করতে হয়। এই টাকার অঙ্ক গোপন থাকে। আগের টেন্ডার বইয়েও উল্লেখ থাকে না। ফলে এখানেই বিপাকে পড়েন ঠিকাদাররা। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার জন্য কত টাকা ব্যয় ধরা হবে, সেটি কোনো ঠিকাদারই জানেন না। ফলে যাঁর কমিশন ঠিক হবে, কেবল তাঁকেই গোপনে ওই ব্যয়টি জানিয়ে দিয়ে টেন্ডার শিডিউল জমা দিতে বলা হয়। এতে করে ইলেকট্রনিক গভর্নমেন্ট প্রকিউরমেন্ট (ইজিপি) প্রক্রিয়ায় টেন্ডার হলেও স্বংক্রিয়ভাবে পছন্দের ঠিকাদারই কাজ পেয়ে যান।

ঠিকাদারা বলছেন, যাঁরা কমিশন দিতে রাজি হচ্ছেন না, তাঁরা দিনের পর দিন চেষ্টা করেও ওয়াসার কাজ পাচ্ছেন না। এতে করে তাঁদের মদ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। ওয়াসার এই অনিয়মের সঙ্গে জড়িত প্রকৌশলীদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন ঠিকাদাররা।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে রাজশাহী ওয়াসার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী পারভেজ মাহমুদ বলেন, ‘এ ধরনের অনিয়মের বিষয়টি আমার জানা নাই। কোনো ঠিকাদার কাজ না পেলে অভিযোগ করবে, এটাই স্বাভাবিক। এখানে আমাদের কিছু বলার নাই। ’

টেন্ডার শিডিউল দাখিলের আগেই ফোন করে কমিশন দাবি করা এবং কাজ পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে পারভেজ মাহমুদ বলেন, ‘কোন ঠিকাদার এমন অভিযোগ করেছেন? আমাদের তথ্য দেন, যে ফোন করেছে আমরা তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। ’

অতীতেও কমিশন আদায় করে কাজ দেওয়া হয়েছে—এমন অভিযোগের বিষয়ে এই প্রকৌশলী বলেন, ‘সব টেন্ডারই ইজিপিতে হয়, এখানে আমাদের কিছু করার নাই। যিনি সর্বনিম্ন দর দেন, তাঁকেই কাজ দেওয়া হয়। এখানে কোনো অনিয়মের সুযোগ নাই। ’

প্রসঙ্গত, গত বছর ওয়াসার প্রায় ৩৩ কোটি টাকার কাজ ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছিল বলে পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হয়। এর আগে ওয়াসার অনিয়ম নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনে একটি মামলা হয়।