সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পাঁচ লক্ষ্য

সিল্কসিটি নিউজ ডেস্ক :

পাঁচটি সিটি করপোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এই নির্বাচন নানা কারণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই নির্বাচনের দিকে যেমন তাকিয়ে থাকবেন পশ্চিমা কূটনীতিকরা তেমনি অনেক কিছু প্রমাণ করতে হবে আওয়ামী লীগকে এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে। অন্যদিকে বিএনপি এই নির্বাচন বর্জন করে প্রমাণ করতে চায় যে তাদেরকে ছাড়া বাংলাদেশে কোন অর্থবহ অংশগ্রহণমূলক অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়। সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ যেমন বিজয় অর্জন করতে চায় তেমনি নির্বাচনকে একটি মডেল নির্বাচন হিসেবে উপস্থাপন করতে চায়। পাশাপাশি দলের অভ্যন্তরে অনেক বিষয় হিসেব-নিকেশেও এই নির্বাচনের মাধ্যমে ফয়সালা করতে চায় আওয়ামী লীগ। এই নির্বাচনকে ঘিরে আওয়ামী লীগের পাঁচটি লক্ষ্য দৃশ্যমান হচ্ছে;
১. অবাধ-সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ নির্বাচন করা: আওয়ামী লীগ যেকোনো মূল্যে নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে চায়। এই নির্বাচন নিয়ে যেন কোন রকম কারচুপি, পক্ষপাত ও প্রশাসনের হস্তক্ষেপ ইত্যাদি অভিযোগ না ওঠে সেটি নিশ্চিত করাই আওয়ামী লীগের প্রধান লক্ষ্য। ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই বার্তা দিয়েছেন যে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে যেন কোনো রকমের কারচুপির আশ্রয় না নেওয়া হয়। এটির মাধ্যমে আওয়ামী লীগ দেখাতে চায় যে বিএনপির যে দাবি তার অসাড় অন্তঃসারশূন্য।
২. প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন: কেবল অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন নয়, নির্বাচন যেন পানসে না হয়, নির্বাচন যেন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ, উৎসবমুখর হয় সেটিও আওয়ামী লীগ নিশ্চিত করতে চায়। আর এ কারণে আওয়ামী লীগ বিভিন্ন প্রার্থীদেরকে উৎসাহিত করছে। এমনকি যারা স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচনে দাঁড়াচ্ছে তাদেরকেও নির্বাচন প্রচারণা এবং অন্যান্য কর্মকাণ্ড করার সমান সুযোগ দেওয়ার ব্যাপারে নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে যে শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে বেশকিছু স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকবে এবং প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায় বিএনপির একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকবে। ফলে নির্বাচন উৎসবমুখর হবে।
৩. অভ্যন্তরীণ কোন্দল মেটানো: এই নির্বাচনকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে অভ্যন্তরীণ কোন্দল মেটানোর একটা প্ল্যাটফর্ম হিসেবে দেখছে আওয়ামী লীগ। নানা কোন্দলে জর্জরিত আওয়ামী লীগ। এই কোন্দলের কারণে দলের সবচেয়ে ক্ষতি হচ্ছে। আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ হচ্ছে আওয়ামী লীগই। তাই নির্বাচনের প্রার্থী দেওয়ার পর কারা কিভাবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে এবং কারা বিদ্রোহী প্রার্থী হয়, কারা আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধচারণ করে সে বিষয়গুলো হিসেব-নিকেশ করবে আওয়ামী লীগ। যেটি জাতীয় নির্বাচনে কৌশল তৈরি করার ক্ষেত্রে কাজে দেবে বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা।
৪. দলের মনোনয়ন পরিবর্তনের টেস্ট কেস: এই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনয়ন পরিবর্তনেরও একটা টেস্ট কেস করেছে। সাদিক আব্দুল্লাহ বরিশালের মেয়র ছিলেন। তাকে বাদ দিয়ে আনকোরা এবং পরিচ্ছন্ন ইমেজের অধিকারী খোকন সেরনিয়াবাতকে মনোনয়ন দিয়েছে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ড। আওয়ামী লীগ এটা একটা এক্সপেরিমেন্ট হিসেবে দেখছে। এর ফলে ভোটারদের কি প্রতিক্রিয়া হয় তার উপর নির্ভর করছে আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন পরিবর্তনের বিষয়টি। আগামী নির্বাচনে প্রায় অর্ধেক আসনে মনোনয়ন পরিবর্তনের কথা আছে। কাজেই খোকন সেরনিয়াবাত মডেল যদি সফল হয় তাহলে আওয়ামী লীগ এই ধরনের পরিচ্ছন্ন ইমেজের বহু প্রার্থীকে আগামী নির্বাচনে প্রার্থী করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
৫. আনকোরা নতুন প্রার্থী: আওয়ামী লীগের সিটি নির্বাচনে আনকোরা নতুন প্রার্থীরও একটি এক্সপেরিমেন্ট করছে। বিশেষ করে সিলেটে একেবারে নতুন আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। নতুন প্রার্থীদের ক্ষেত্রে অনেক সময় ভোটারদের আগ্রহ তৈরী হয় এবং তার অতীত কর্মকান্ড যেহেতু অজানা সেজন্য তার ব্যাপারে নেতিবাচক প্রচারণা কম হয়। এটি মাথায় রেখেই আনোয়ারকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। আনোয়ারের এই মনোনয়ন প্রাপ্তির ফলে আগামী নির্বাচনে মেধাবী তরুণ এবং আনকোরা ক্লিন ইমেজের অধিকারী প্রার্থীদের দরজা খুলে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কাজেই এই নির্বাচন আওয়ামী লীগের জন্য শুধু জয়লাভ নয় অনেক কিছু প্রমাণের জন্যই এই সিটি নির্বাচন।