সিঙ্গাইরের ৪৩ ব্রিজ ঝুঁকিপূর্ণ

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

রেলিং ভেঙে গেছে। ঢালাই উঠে বেরিয়ে গেছে রড। পিলারগুলো নড়বড়ে। যানবাহন চলাচলের সময় কাঁপতে থাকে। এই চিত্র মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর উপজেলার বাস্তা-মানিকনগর সড়কের হাতনি এলাকার দুটি ব্রিজের।

শুধু এই দুই ব্রিজ নয়, এমন অবস্থা উপজেলার অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন সড়কে নির্মিত আরো ৪২টি ব্রিজের। দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ব্রিজগুলো এখন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় বাধ্য হয়ে ঝুঁকি নিয়ে এসব ব্রিজ দিয়ে চলাচল করছে উপজেলার প্রায় চার লাখ মানুষ। ব্রিজগুলোতে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে জানমালের ক্ষতি হচ্ছে।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, জরাজীর্ণ ব্রিজগুলো মেরামত ও পুনঃনির্মাণের দাবি জানিয়ে আসলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না।

তবে উপজেলা প্রকৌশলী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ইতিমধ্যে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ ব্রিজের তালিকা প্রস্তুত করে পুনঃনির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন সাপেক্ষে পর্যায়ক্রমে ব্রিজগুলো পুনঃনির্মাণ করা হবে।

উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তর ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গ্রামীণ যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত ও সহজতর করার লক্ষ্যে ৮০ ও ৯০ দশকে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর, উপজেলা পরিষদ ও কেয়ার সংস্থার অধীনে অর্ধশত ব্রিজ নির্মাণ করা হয়। ফলে তৎকালীন সময় গ্রামীণ জনপদের যোগাযোগ ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন হয়। কিন্তু নিম্নমানের কাজ ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বর্তমানে ব্রিজগুলো চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এরই মধ্যে কিছু ব্রিজ ভেঙে পুনঃনির্মাণ করা হয়েছে।

উপজেলার জামির্ত্তা ইউনিয়নের বাস্তা-মানিকনগর সড়কের হাতনী এলাকায় খালের ওপর তিন যুগ আগে দুটি ব্রিজ নির্মাণ করা হয়। ব্রিজ দুটির রেলিং ভেঙে গেছে। ঢালাই উঠে রড বের হয়ে গেছে। পিলারগুলোর অবস্থাও অত্যন্ত নাজুক। যানবাহন চলাচলের সময় কাঁপতে থাকে। যে কোনো সময় ব্রিজ দুটি ধসে পড়ে দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছে স্থানীয়রা।

ট্রাকচালক আবুল হোসেনসহ কয়েকজন পরিবহন শ্রমিক বলেন, ব্রিজ দুইটির অবস্থা খুবই শোচনীয়। গাড়ি নিয়ে ব্রিজের ওপর উঠলে কাঁপতে থাকে। বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় ঝুঁকি নিয়ে ভাঙা ব্রিজ দিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের চেয়ারম্যানরা জানান, ওই দুই ব্রিজের মতো বেহালে উপজেলা ও ইউনিয়নের অভ্যন্তরীণ সড়কগুলোতে নির্মিত আরো ৪১টি ব্রিজ। ব্রিজগুলো হলো জামির্ত্তা ইউনিয়নের রামচন্দ্রপুর বাঁজনাসুর ব্রিজ, বিন্নাডাঙ্গি পুলিশ ফাঁড়িসংলগ্ন ব্রিজ, চান্দহর ইউনিয়নের বেল্লকপাড়া ব্রিজ, মানিকনগর কানু খালি ব্রিজ, মাধবপুর ব্রিজ, চর মাধবপুর ব্রিজ, বাঘুলি ব্রিজ, চর চান্দহর ব্রিজ, পালপাড়া ব্রিজ, বৈন্যা ব্রিজ, ধল্লা ইউনিয়নের জায়গীর বাসস্ট্যান্ড ব্রিজ ও ভূমদক্ষিণ বাসস্ট্যান্ড ব্রিজ, নয়াপাড়া ব্রিজ, ফোর্ডনগর মোল্লাপাড়া ব্রিজ, ফোর্ডনগর খোয়াজপাড়া ব্রিজ, জয়মন্টপ ইউনিয়নের পুরাতন বাসস্ট্যান্ড ব্রিজ, দেউলি ব্রিজ, ছয়ানি বাজারসংলগ্ন ব্রিজ, কিটিংচর ব্রিজ, রামনগর ব্রিজ, রাজঘাটা ব্রিজ, সিঙ্গাইর পৌরসভার আজিমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সংলগ্ন ব্রিজ, আজিমপুর লাল মিয়ার বাড়িসংলগ্ন ব্রিজ, নয়াডাঙ্গি ব্রিজ, বায়রা ইউনিয়নের বাইমাইল বাসস্ট্যান্ড ব্রিজ, দেহানখিলা স্কুলসংলগ্ন ব্রিজ, তালেবপুর ইউনিয়নের কাংশা ছোট ব্রিজ, জামশা ইউনিয়নের বাস্তা এলাকার দুইটি ব্রিজ, সারারিয়া ব্রিজ, চারিগ্রাম ইউনিয়নের চারিগ্রাম বাজরসংলগ্ন ব্রিজ, দক্ষিণ জাইল্যা ব্রিজ, জাইল্যা মাঝিপাড়া ব্রিজ, মধ্য চারিগ্রাম ব্রিজ, বলধারা ইউনিয়নের পারিল নূর মহসীন উচ্চ বিদ্যালয়সংলগ্ন ব্রিজ, মানিকদহ ব্রিজ, ছোট কালিয়াকৈর ব্রিজ, সায়েস্তা ইউনিয়নের সাহরাইল ব্রিজ, চঙ্গোমোড়া ব্রিজ, কালিয়ান্দি ব্রিজ ও শিবপুর ব্রিজ।

এ ছাড়া উপজেলার বিভিন্ন স্থানে নির্মিত ১০-১৫টি কালভার্ট জরাজীর্ণ হয়ে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, এসব ব্রিজের কোনটার রেলিং নেই, আবার কোনো ব্রিজের ঢালাই উঠে রড বের হয়ে গেছে। পিলার নড়বড়ে হয়ে নষ্ট হয়ে গেছে ব্রিজের মূল কাঠামো। বিপদ হতে পারে জেনেও ঝুঁকি নিয়ে ব্রিজগুলো দিয়ে যাতায়াত করছে ছোট-বড় যানবাহন। এতে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে।

সিঙ্গাইর উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ৮০-৯০ দশকে গ্রামীণ যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত ও সহজতর করার লক্ষ্যে ব্রিজগুলো নির্মাণ করা হয়েছিল। দীর্ঘদিনের পুরনো এসব ব্রিজের অধিকাংশই এখন জরাজীর্ণ। অনেক ব্রিজ মেরামত করে চলাচলের উপযোগী করা হয়। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ব্রিজ-কালভার্ট প্রকল্পের আওতায় অধিক ঝুঁকিপুর্ণ ব্রিজগুলো পুনঃনির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। ইতিমধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ ব্রিজের তালিকা করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে পর্যায়ক্রমে সবগুলো ব্রিজ পুনঃনির্মাণ করার পরিকল্পনা রয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের।