সাড়া ফেললেও, পাঁচ চ্যালেঞ্জের মুখে ‘৯৯৯’

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

‘৯৯৯’ নম্বরে প্রতিদিন একটি কল আসতো। কখনও গান, কখন ছড়া শোনাতো শিশুকণ্ঠ। কখনও টেলিভিশনের শব্দ ছাড়া আর কিছুই শোনা যেত না। একাধিকবার এ ধরনের ফোন পেয়ে খোঁজ নেওয়া হলো কোথা থেকে, কে এমন কল করে। বেশ কাঠখড় পুড়িয়ে দেখা গেলো, এক মা ফোনটি করছেন। তার দাবি, এটি যে জরুরি সেবার নম্বর তিনি   জানতেন না। মোবাইলে কথা না বললে তার সন্তান খেতে চায় না। ওই মায়ের কথা অনুযায়ী, ‘আমি এমনিতেই তিন বার নাইন প্রেস করে সন্তানকে ধরিয়ে দিতাম। আসলে এ বিষয়ে জানতাম না কিছুই।’

শুধু এই ফোন নয়, এ ধরনের অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত ফোন আসে ৯৯৯ নম্বরে। এই সেবা সাড়া ফেললেও পাঁচ ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি এরই মধ্যে। এসব প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করে এই সেবাকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াই প্রধান চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

পুলিশ, অ্যাম্বুলেন্স ও ফায়ার সার্ভিসের জরুরি সেবা পেতে ডিসেম্বরের ১২ তারিখ ‘৯৯৯’ সেবা। সাহায্য চেয়ে ফোন আসার পাশাপাশি মিস কল, অযৌক্তিক কল আসার সংখ্যাও নেহাত কম নয়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এত বিস্তারিত পরিসরে সেবা প্রদানে বেশকিছু জটিলতা আসবে। কিন্তু এ সেবা যাতে ব্যাহত না হয় সেদিকে তৎপর রয়েছেন তারা। বিশ্লেষকরা বলছেন, এখনই সতর্কতার সঙ্গে এগুতে হবে। কেননা একবার যদি নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয় তাহলে এ কার্যক্রম এগিয়ে নেওয়া কঠিন হবে।এ সেবার কয়েকটি চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করছেন বিশ্লেষকরা। সেগুলো হলো, সব জায়গায় সুনির্দিষ্ট  সময় ম্যানেজমেন্ট ক্যাটাগরিক্যালি কল গুরুত্ব বিবেচনা, অ্যাম্বুলেন্স/ফায়ার ফাইটার ঠিক সময়ে পাঠানো, পুলিশের আস্থা অর্জন ও তৃণমূলে সেবা নিশ্চিতকরণ।

প্রযুক্তিগত সহায়তাকারী প্রতিষ্ঠান মাল্টিমিডিয়া কনটেন্ট অ্যান্ড কমিউনিকেশনস (এমসিসি) এর হেড অব রিসার্চ মেহেদী হাসান শুরু থেকে প্রক্রিয়াটির সঙ্গে জড়িত। তার মতে, এসব চ্যালেঞ্জ থাকবেই।

তিনি বলেন, ‘আমরা যখন অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করতে গিয়েছি তখন দেখেছি বেসরকারিভাবে যারা অ্যাম্বুলেন্স প্রোভাইড করে তাদের নির্দিষ্ট কোনও নিয়ম নীতি নেই, গাড়িগুলোর অবস্থা যা তা। ফলে সেবা নিশ্চিত করা সম্ভব না। আবার অ্যাম্বুলেন্সে জিপিএস সুবিধা দিতে না পারলে আরেক ধরনের সমস্যা দেখা দেবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘যেহেতু উবার সার্ভিসের যে কোনও সমস্যায় ৯৯৯-এ ফোন করার কথা উল্লেখ রয়েছে। তাই অনেকে মনে করে এটাই মনে হয় উবারের বিরুদ্ধে অভিযোগের হটলাইন। ফলে ৯৯৯ আসলে কী সেবা দেবে সেটা বিস্তারিত জানানো দরকার আছে।’

বিস্তারিত জানানোর সমস্যা আছে উল্লেখ করে ইন্সটিটিউট অব ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ভালনারেবিলিটি স্টাডিজের পরিচালক মাহবুবা নাসরিন। তিনি  বলেন, ‘কিছু কিছু বিষয়ে পুরো প্রস্তুতি না নিয়ে সেবা চালু করলে কিছু বাড়তি সমস্যার মুখোমুখি হতে হবে।সেটি কারোরই কাম্য না। তৃণমূলে যদি আপনি সেবা নিশ্চিত করতে না পারেন তাহলে সারাদেশে ৯৯৯ সেবা চালু হয়েছে এটি বিজ্ঞাপনের ভাষা হবে না। আপনি শুরুতে যতটা পারবেন ততটাই বলবেন। তবে এই ৯৯৯ সেবাটি চালু হওয়া খুব জরুরি ছিল। নাগরিকরা সবসময়ই এই বোধের মধ্যে থাকবেন যে, আমরা নিরাপদ, যে কোনও মুহূর্তে বিপদে পড়লে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আমাদের সামনে এসে উপস্থিত হবে। এই বোধটা খুব কাজের।’

৯৯৯ সেবা দেবে এটি নিশ্চিত হওয়ার পাশাপাশি ঠিক কত সময়ের মধ্যে ৯৯৯ হেল্প আসবে সেটিও জানা থাকা কর্তব্য বলে মনে করেন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সাবেক নির্বাহী পরিচালক ও মানবাধিকার কর্মী নূর খান। তিনি বলেন, ‘নগর কেন্দ্রিক সেবাতে কত মিনিট লাগবে আপনার সহায়তা পৌঁছাতে সেটি যেমন জানা থাকতে হবে, তৃণমূলেও আপনার শক্তি সামর্থ অনুযায়ী কত সময়ের মধ্যে সহয়তা পৌঁছাবে তার উল্লেখ থাকতে হবে। কেননা, সেই ১০ বা ১২ মিনিট ভিকটিম কিভাবে তাকে রক্ষা করবে সেই সিদ্ধান্তটি নেবে।’

তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন কারণে পুলিশের কাছে সহায়তা চাওয়ায় আমাদের এখনও অনীহা আছে। আস্থা ফিরিয়ে আনতে  হবে সবার আগে।’

টেলিকম অ্যান্ড ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্টের (টিঅ্যান্ডআইএম) ডিআইজি ব্যারিস্টার হারুন অর রশীদ এই প্রকল্পটি তত্ত্বাবধানে রয়েছেন। তিনি বলেন, এই সবগুলো বিষয়েই মনোযোগ দেওয়া হয়েছে। এখানে লক্ষনীয়, শুধু কলারের তথ্য যে পুলিশ অথবা সংশ্লিষ্ট সেবা প্রদানকারীদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে তা কিন্তু নয়। এরপর তারা কী ধরনের সাড়া দিয়েছেন এবং হেল্প করতে গিয়েছেন কিনা সেই ফলোআপ করা হচ্ছে। এতে পারস্পারিক আস্থার জায়গা তৈরি হবে।

তিনি আরও বলেন, এইটাকে নিয়ে অনেক ধরনের কাজ করার সুযোগ আছে। কেবল শুরু করেছি আমরা। সকলে দায়িত্বশীলভাবে এই উদ্যোগটাকে সামনে এগিয়ে নিয়ে গেলে অসাধ্য সাধারণ সম্ভব হবে।

 

বাংলা ট্রিবিউন