সাহিত্যে নোবেল পাচ্ছেন কে?

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

আর কয়েকদিনের মধ্যেই ঘোষণা করা হবে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার বিজয়ীর নাম। এবার কে পাচ্ছেন সাহিত্যে নোবেল?

 

গত বছর এ পুরস্কার পেয়েছিলেন বেলারুশের লেখক, সাংবাদিক সোয়েতলানা আলেক্সিয়েভিচ। এবারো কি সোয়েতলানার মতো আলোচনার বাইরে থাকা কেউ পাচ্ছেন নোবেল? নোবেলকে নিয়ে এমন প্রশ্ন এখন বিশ্বের সকল সাহিত্যপ্রেমীদের।

 

তবে ঘোষণার আগে থেকেই অনেক সাহিত্যিক রয়েছেন আলোচনায়। এদের মধ্যে কেউ কেউ অনেকবারই মনোনীত হয়েছিলেন। যে কারণে তাদের নিয়ে আলোচনা রয়েছে তুঙ্গে। এবারের আলোচনায় থাকা শীর্ষ কয়েকজনকে নিয়ে এই রচনা রাইজিংবিডির পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।

 

সালমান রুশদি : ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক ও প্রাবন্ধিক সালমান রুশদি বেশ কয়েকবার নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়ে আলোচনায় ছিলেন। রুশদির প্রথম উপন্যাস ‘গ্রাইমাস’ প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৭৫ সালে। প্রথম বই প্রকাশের সাথে সাথে সাহিত্যাঙ্গনে বেশ সাড়া পড়ে। এরপর ১৯৮১ সালে দ্বিতীয় উপন্যাস ‘মিডনাইট চিলড্রেন’ এর মাধ্যমে তিনি বিশ্বসাহিত্যে বেশ পরিচিতি লাভ করেন। অল্প সময়ের মধ্যে বেশকিছু ভাষাতেও অনূদিত হয় উপন্যাসটি। এই উপন্যাসের কারণে সে বছরই লাভ করেন ম্যানবুকার পুরস্কার। এরপর থেকেই বিশ্বসাহিত্যে বিচরণ দেখা যায় রুশদির। একে একে রচনা করেন ‘শেম’, ‘ফিউরি’, ‘দ্য মোরস লাস্ট সাইন’, ‘শালিমার দ্য ক্লাউন’-এর মত বিখ্যাত সব উপন্যাস। যে কারণে কয়েকবার জার্মানি এবং ব্রিটেনের বর্ষসেরা লেখকের পুরস্কার জিতে নিয়েছেন তিনি। এ পর্যন্ত উপন্যাস, শিশুতোষ গল্প, এবং প্রবন্ধ মিলিয়ে প্রায় ২০টির  অধিক গ্রন্থ রচনা করেছেন সালমান রুশদি। আর তাতেই তার ঘরে উঠেছে বিশ্বের সব নামীদামী সাহিত্য পুরস্কার। বারবার তার বই বেস্ট সেলারের তালিকাতেও ছিল। ৬৯ বছর বয়সি এই লেখক গত কয়েক বছর ধরে নোবেল প্রাপ্তির তালিকায় থাকলেও এবার নোবেল পাচ্ছেন কিনা তা জানার জন্য এখন অপেক্ষা করতে হবে।

 

অ্যাদোনিস : অ্যাদোনিস নামটি বাবা মায়ের দেওয়া নাম নয়। এটা লেখকের নিজের দেওয়া নাম। কিন্তু এই নামই হয়ে উঠেছে বিশ্বের এক বিখ্যাত কাব্যপ্রতিভার নাম। আরবি ভাষায় নামটির উচ্চারণ হয় আহ-দো-নিছ। অ্যাদোনিসের পুরো নাম আলী আহমদ সাইদ এসবার। চলতি সময়ের আরবি ভাষার সব থেকে প্রভাবশালী কবি তিনি। নোবেল পুরস্কার ঘোষণার সময় এলে প্রতি বছরই তিনি থাকেন আলোচনার শীর্ষে। যে কারণে এবারো আলোচনায় রয়েছেন তিনি।

 

অ্যাদোনিসের প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘কাছা’ প্রকাশিত হয় ১৯৫৭ সালে। এরপর দ্বিতীয় বই ‘আওরাক ফি আরি’ প্রকাশিত হয় ১৯৫৮ সালে। এই বইয়ের জন্যই লেবাননের সেরা ‘প্রিক্স দেস আমিস বৈরুত’ পুরস্কার লাভ করেন তিনি। এরপর রচনা করেন ‘হাজা হুয়া’, ‘আল মাশরা ওয়াল মারইয়া’, ‘মুফারদাত শায়ের’ এর মত বিখ্যাত সব কাব্যগ্রন্থ। মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের বড় বড় সব প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হতে থাকে তার একাধিক কাব্যগ্রন্থ। বর্তমানে অ্যাদোনিসের কাব্যগ্রন্থের সংখ্যা ২৪। যেগুলো ইংরেজি, গ্রিক, স্প্যানিশ, ফরাসিসহ অনূদিত হয়েছে অনেক ভাষায়। পেয়েছেন পুলিৎজার পুরস্কার, ম্যানবুকার পুরস্কার, পিও মানজু পুরস্কার, ইতালির বিখ্যাত নোনিনো পুরস্কার, গ্যাঁটে পুরস্কার, বিয়নসন পুরস্কার, আমেরিকা পুরস্কার। তবে ৮৬ বছর বয়সি এই কিংবদন্তী এবার সাহিত্যে নোবেল পাচ্ছেন কিনা তা এখন দেখার বিষয়।

 

হারুকি মুরাকামি : জাপানি গল্পকার হারুকি মুরাকামির নামডাক বেশকিছু বছর ধরেই বিশ্বে আলোচিত। গল্প এবং উপন্যাসের নির্মাণে নতুনত্ব আনায় মাত্র ৬৭ বছর বয়সেই কিংবদন্তীতে পরিণত হয়েছেন তিনি। বিশ্বের পঞ্চাশটির অধিক ভাষায় অনূদিত হয়েছে মুরাকামির গল্প এবং উপন্যাস। বর্তমান সময়ে বিশ্বব্যাপি তিনি অন্যতম আলোচিত লেখক।

 

মুরাকামির প্রথম উপন্যাস ‘কাজে নো ওতা ও কিকে’ প্রকাশিত হয় ১৯৭৯ সালে। দ্বিতীয় উপন্যাস ‘নিন নো পিনবরু’ প্রকাশিত হয় ১৯৮০ সালে। তবে হারুকি মুরাকামি সবথেকে বেশি আলোচিত হন ১৯৮২ সালে ‘হিতসুজি ও মেগুরু বোকেন’ (একটি বন্য ভেড়া শিকার) প্রকাশিত হবার পর। ইংরেজি, আরবি, ফ্রেন্স, চায়নাসহ বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয় উপন্যাসটি। জাপানে টানা কয়েক বছর বেস্ট সেলারের তালিকায় উঠে আসার পাশাপাশি চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল জনপ্রিয়তা পায় গ্রন্থটি।

 

মুরাকামির মোট ৪০টি নন ফিকশন, ১৩টি উপন্যাস এবং ৪টি গল্পগ্রন্থের মধ্যে ‘নরুয়ে নো মরি’, ‘উমিবে ও কাফুকা’, আফুটা দাকু, উপন্যাসগ্রন্থ এবং ‘জো নো সমেস্তু’ নামক গল্পগ্রন্থ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এ পর্যন্ত বিশ্বের বড় বড় পুরুস্কার পেলেও নোবেল এখনো পাওয়া হয়নি এই লেখকের।

 

তবে শুধু সালমান রুশদি, অ্যাদোনিস কিংবা হারুকি মুরাকামিই নয়, নোবেল প্রাপ্তির আলোচনায় রয়েছেন বিশ্বের আরো কয়েকজন বিখ্যাত লেখক। এদের মধ্যে ফ্রান্স-প্রবাসী চেক কথাসাহিত্যিক মিলান কুন্ডেরা, আলবানিয়ার কবি ও ঔপন্যাসিক ইসমাইল কাদেরে, কেনিয়ার গল্পকার এবং নাট্যকার নিগুগি ওয়া থিয়ঙ্গো, অ্যামেরিকান ঔপন্যাসিক ফিলিপ রথ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

সূত্র: রাইজিংবিডি