নতুন দামে বস্তা প্রতি পড়বে ২৫০ টাকা

সারের দাম বৃদ্ধিতে হতাশায় কৃষক

সিল্কসিটি নিউজ ডেস্ক :
সারা দেশে একযোগে সবধরনের সারের দাম কেজিতে পাঁচ টাকা করে বাড়িয়েছে সরকার। এতে বস্তা প্রতি সারের দাম বেড়েছে ২৫০ টাকা করে। এ বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক বাজারের দোহাই দেওয়া হচ্ছে। তবে কৃষক পর্যায়ের চিত্র একেবারেই ভিন্ন। চাষিরা বলছেন, এ মূল্য বৃদ্ধি তাদের মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা।সারের দাম বাড়ার বিষয়টি গতকাল সোমবার (১০ এপ্রিল) কৃষি মন্ত্রণালয়ের উপসচিব হোসেন আহমেদ স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়। বলা হয়, চলমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অবস্থার প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক বাজারে সারের মূল্য বাড়ার কারণে আমদানি যৌক্তিক পর্যায়ে রাখা এবং এর সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সারের মূল্য পুনঃনির্ধারণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

আন্তর্জাতিক বাজারে সারের মূল্য বেড়ে যাওয়ায় ডিলার ও কৃষক পর্যায়ে ইউরিয়া, টিএসপি ও এমওপিসহ বিভিন্ন ধরনের সারের দাম কেজি প্রতি ৫ টাকা বাড়িয়েছে সরকার। সারের দাম বাড়ায় দেশের কৃষকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।

দাম বাড়ায় এখন থেকে কৃষক পর্যায়ে প্রতি কেজি ইউরিয়া ও টিএসপির দাম ২২ টাকা থেকে ২৭ টাকা, ডিএপি ১৬ টাকা থেকে বেড়ে ২১ টাকা, এমওপি সারের দাম ১৫ টাকা থেকে ২০ টাকা হয়েছে। অন্য দিকে পাঁচ টাকা বেড়ে ডিলার পর্যায়ে প্রতি কেজি ইউরিয়া ও টিএসপির দাম ২৫ টাকা, ডিএপির দাম ১৯ টাকা এবং প্রতি কেজি এমওপির দাম ১৮ টাকা হয়েছে। যা আগে ছিল ইউরিয়া ও টিএসপি ২০ টাকা, ডিএপি ১৪ টাকা এবং এমওপি ১৩ টাকা।

যশোরের অভয়নগর উপজেলার কৃষক শহিদুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, এক বারে প্রতি বস্তায় সারের দাম ২৫০টাকা বাড়ায় কৃষকের কষ্ট আরও বাড়বে। সারের দাম এমনিতেই বেশি।

কৃষক মোহাম্মদ ছলিম বলেন, চাষাবাদে যে পরিমাণ খরচ তাতে সারের দাম বাড়লে ভবিষ্যতে চাষবাস করাই কষ্টসাধ্য হয়ে পড়বে। পরিবার-পরিজন নিয়ে বেঁচে থাকাই দায় হবে।

কৃষি অর্থনীতিবিদ প্রফেসর গোলাম হাফিজ বলেন, কৃষি নির্ভর বাংলাদেশে হঠাৎ করে সারের দাম বাড়া কতটা যুক্তিযুক্ত তা আমার বোধগম্য নয়। তবে কৃষকরা যে বিপাকে পড়বেন এতে কোনো সন্দেহ নেই। আন্তর্জাতিক বাজারের সারের দাম বাড়লেও দেশিয় কৃষকদের কথা বিবেচনায় এনে ভর্তুকি দিয়ে বাজার সমতায় আনা উচিৎ।

সারের দাম বাড়ার বিষয়ে কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক সাংবাদিকদের বলেন, দাম বাড়ানোর কারণে কৃষকের ওপর চাপ পড়বে, তবে উৎপাদন কমবে না। আমরা চাইবো বীজ বা অন্যভাবে কৃষকের ক্ষতি পুষিয়ে দিতে। আমি চাইনি কোনোভাবেই সারের দাম বাড়ুক। অর্থ মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে শক্ত অবস্থানে ছিল যে দাম বাড়াতেই হবে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীও বলেছিলেন সারের দাম না বাড়াতে। তবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে শেষ পর্যন্ত বাড়াতেই হলো।

তিনি বলেন, সারের দাম যা বেড়েছে এটা বৈশ্বিক বাজারের তুলনায় বাড়েনি। এখনও সরকারকে সারে বিপুল পরিমাণ টাকা ভর্তুকি দিতে হবে। তবে বৈশ্বিক দাম কমে এলে সারের দাম সমন্বয় করা হবে বলেও মন্তব্য করেন কৃষিমন্ত্রী।

প্রসঙ্গত, গত ৩ এপ্রিল সচিবালয়ে মন্ত্রণালয় সভাকক্ষে ‘সার বিষয়ক জাতীয় সমন্বয় ও পরামর্শক কমিটির সভা’ শেষে কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক জানিয়েছিলেন, অতীতের মতো আগামী বছরগুলোয় দেশে সারের দাম বাড়বে না। একই সঙ্গে চলতি বছর সারের দাম বাড়ানোর কোনো পরিকল্পনা সরকারের নেই বলেও তিনি জানিয়েছিলেন। মন্ত্রী আরও বলেছিলেন, সারের দাম বাড়বে না। কৃষক যাতে পর্যাপ্ত সার পায়, সে লক্ষ্যেই আমরা চাহিদা নির্ধারণ করেছি। মার্চে ইউরিয়া সারের চাহিদা বেশি ছিল, তবুও আমরা একটু কমিয়ে চাহিদা নির্ধারণ করেছি।