সাভারে শ্রমিক-পুলিশ সংঘর্ষ, গুলিবিদ্ধ শ্রমিকের মৃত্যু

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

বেতন বৈষম্যকে কেন্দ্র করে সাভার ও আশুলিয়ার বিভিন্ন পোশাক কারখানার শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া, লাঠিচার্জ, গুলি ও টিয়ারশেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে।

এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে সুমন নামের এক শ্রমিক নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া গুলিবিদ্ধ হয়েছেন মুকুল হোসেনসহ আরও তিন শ্রমিক।

মঙ্গলবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সাভার হেমায়েতপুরের বাগবাড়ি এলাকা, উলাইল ও আশুলিয়ার কাঠগড়া, খেজুরবাগান ও জিরাবো এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

নিহত সুমন মিয়া (২২) শেরপুর জেলার শ্রীবরদি থানার কলাকান্দা গ্রামের আমির আলীর ছেলে। তিনি সাভারের উলাইল কর্ণপাড়া এলাকায় ভাড়া বাসায় থেকে উলাইল এলাকার আনলিমা অ্যাপারেলস পোশাক কারখানার ষষ্ঠ তলায় ফিনিশিং সেকশনে কাজ করতেন।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বেতন বৈষম্যের কারণে হেমায়েতপুরের বাগবাড়ি এলাকায় স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপের শামস স্টাইল ওয়্যারস লিমিটেডের শ্রমিকরা সকালে কারখানায় কাজে যোগ না দিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে। পরে স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপ, ডার্গ গ্রুপ ও জেকে ফ্যাশন কারখানার শ্রমিকরাও তাদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে বিক্ষোভ করতে থাকে। পরে তারা হেমায়েতপুর-শ্যামপুর সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধের চেষ্টা করে থাকে।

এ সময় পুলিশ শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিচার্জ ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। পরে শ্রমিকরাও পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে উভয়পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ এ সময় লাঠিচার্জ, টিয়ারশেল ও শতাধিক রাউন্ড রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে।

এতে পুলিশ ও শ্রমিকসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়। পরে আহতদের নিকটস্থ বিভিন্ন হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।

অপরদিকে দুপুরে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের উলাইল এলাকায় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা একই দাবিতে সড়কে নেমে এলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ ও গুলিবিনিময়ের ঘটনা ঘটে। এ সময় সুমন মিয়া নামে আনলিমা অ্যাপারেলস কারখানার এক শ্রমিক গুলিবিদ্ধ হয়। পরে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

নিহত সুমনের সহকর্মী রিপন জানান, দুপুরে শ্রমিক ও পুলিশ সংঘর্ষ চলাকালে সুমনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক শহিদুল ইসলাম তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তবে এ ব্যাপারে সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আমজাদুল হককে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

এদিকে আশুলিয়ার কাঠগড়া এলাকার সাউদার্ন বিডি লিমিটেড, কন্টিনেন্টাল গার্মেন্টস লিমিটেড, হ্যাসন কোরিয়া সোয়েটার লিমিটেড, এসবিএস ডেনিম ওয়্যার লি., লিলি এ্যাপারেলস লি., ক্রস ওয়্যার লি., ম্যাট্রো নিটিং লি. ও এশিয়ান নিটওয়্যার লিমিটেড নামে পোশাক কারখানার শ্রমিকরা তাদের বেতন বৈষম্যের প্রতিবাদে বিক্ষোভ করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ টিয়ারশেল ও জলকামান ব্যবহার করে। এ সময় শ্রমিক ও পুলিশের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়াসহ ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে।

আশুলিয়ার কাঠগড়া এলাকার সাউদার্ন পোশাক কারখানার শ্রমিকরা জানান, সরকারের ঘোষিত নতুন কাঠামো অনুযায়ী বেতন বৈষম্যের প্রতিবাদে তারাসহ আরও বেশ কয়েকটি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা জিরাবো-বিশমাইল সড়কে বিক্ষোভ শুরু করলে পুলিশ তাদের লক্ষ্য করে টিয়ারশেল ও জলকামান থেকে পানি নিক্ষেপ করে। এ সময় শ্রমিকরাও পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে অন্তত ২০ শ্রমিক আহত হয়।

শিল্প পুলিশ-১ এর ওসি মাহমুদর রহমান জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাভার ও আশুলিয়ার গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় অতিরিক্ত শিল্প পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। তবে সংঘর্ষে শ্রমিক নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটেনি বলে জানান তিনি।