সাব-ইন্সপেক্টর নেবে পুলিশ

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

বাংলাদেশ পুলিশে সাব-ইন্সপেক্টর (নিরস্ত্র) পদে জনবল নিয়োগ করা হবে। প্রতিটি বিজ্ঞপ্তিতে পদ খালি থাকা সাপেক্ষে দেড় হাজার থেকে দুই হাজার সদস্য নিয়োগ দেওয়া হয়। আবেদনের শেষ তারিখ ২৪ ডিসেম্বর।

 

আবেদনের যোগ্যতা

পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের এআইজি (রিক্রুটমেন্ট অ্যান্ড ক্যারিয়ার প্ল্যানিং বিভাগ) মো. মনিরুল ইসলাম জানান, শিক্ষাগত যোগ্যতা কমপক্ষে স্নাতক হতে হবে। ১ নভেম্বর ২০১৬ তারিখে সাধারণ ও অন্যান্য কোটার প্রার্থীদের ক্ষেত্রে বয়সসীমা ১৯ থেকে ২৭ বছর। শুধু মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁদের সন্তানদের ক্ষেত্রে বয়সসীমা ১৯ থেকে ৩২ বছর। পুরুষ প্রার্থীদের উচ্চতা কমপক্ষে ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি, বুকের মাপ স্বাভাবিক অবস্থায় ৩০ ইঞ্চি, সম্প্রসারিত অবস্থায় ৩২ ইঞ্চি হতে হবে।  নারী প্রার্থীদের ক্ষেত্রে উচ্চতা কমপক্ষে ৫ ফুট ২ ইঞ্চি। বডি মাস ইনডেক্স অনুযায়ী বয়স ও উচ্চতার সঙ্গে ওজনের সামঞ্জস্য থাকতে হবে। প্রার্থীকে অবশ্যই অবিবাহিত ও জন্মসূত্রে বাংলাদেশের স্থায়ী নাগরিক হতে হবে। প্রার্থীকে অবিবাহিত ও জন্মসূত্রে বাংলাদেশের স্থায়ী নারী-পুরুষ হতে হবে। তালাকপ্রাপ্ত পুরুষ বা নারীরা আবেদন করতে পারবেন না। থাকতে হবে কম্পিউটারে অভিজ্ঞতা। বিজ্ঞপ্তি পাওয়া যাবে http://bit.ly/2fwtmT8 লিংকে।

 

প্রাথমিক শারীরিক পরীক্ষা

পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের রিক্রুটমেন্ট অ্যান্ড ক্যারিয়ার প্ল্যানিং বিভাগের অ্যাডিশনাল এসপি মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান আল-মামুন জানান, প্রথমে প্রাথমিক শারীরিক পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হবে।

পরীক্ষার সময় শিক্ষাগত যোগ্যতার সব সনদ, সর্বশেষ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানের দেওয়া চারিত্রিক সনদপত্র, স্থায়ী নাগরিকত্বের সনদপত্র, প্রার্থীর জাতীয় পরিচয়পত্র, না থাকলে মা বা বাবার জাতীয় পরিচয়পত্রের মূল কপি, প্রথম শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তার সত্যায়িত সদ্য তোলা তিন কপি পাসপোর্ট আকৃতির ছবি সঙ্গে আনতে হবে। আরো লাগবে কমপক্ষে তিন সপ্তাহের কম্পিউটার প্রশিক্ষণ সনদের মূলকপি, চাকরিরত প্রার্থীদের যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতিপত্র, কোটায় আবেদনকারীদের সংশ্লিষ্ট কোটার সনদের মূলকপি ও তা প্রমাণের জন্য প্রয়োজনীয় প্রত্যয়নপত্র।

শারীরিক মাপ পরীক্ষায় বিজ্ঞপ্তির বর্ণনা অনুযায়ী উচ্চতা, বুকের প্রস্থ, বয়সের সঙ্গে ওজনের সামঞ্জস্য দেখা হয়। পরের ধাপে ফিটনেস যাচাই পরীক্ষায় দৌড়, লং জাম্প ও রশি দিয়ে ওঠার পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে। শারীরিক মাপ পরীক্ষার সময় ব্যায়ামের উপযোগী ঢিলেঢালা পোশাক সঙ্গে রাখতে পারেন।

প্রাথমিক শারীরিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের আবেদন ফরম সংগ্রহ করতে হবে  নিজ নিজ রেঞ্জের ডিআইজি কার্যালয় থেকে। পূরণ করে ২৪ ডিসেম্বরের মধ্যে একই কার্যালয়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ জমা দিতে হবে। পরে লিখিত পরীক্ষা নেওয়া হবে। এ সময় প্রবেশপত্র দেওয়া হবে। লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার সময় সঙ্গে রাখতে হবে প্রবেশপত্র।

লিখিত পরীক্ষা

এসআই নিয়োগের লিখিত পরীক্ষা হয় ২২৫ নম্বরের। ইংরেজি, বাংলা রচনা ও কম্পোজিশনে থাকে ১০০ নম্বর, সাধারণ জ্ঞান ও পাটিগণিতে ১০০ নম্বর ও মনস্তত্ত্বে ২৫ নম্বরের পরীক্ষা নেওয়া হয়। মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান আল-মামুন জানান, সাধারণত এসএসসি ও এইচএসসি লেভেলের ছাত্রছাত্রীদের উপযোগী প্রশ্ন করা হয়। তবে এসএসসি লেভেলের প্রশ্নই বেশি থাকে। পাস করতে ৪৫ শতাংশ নম্বর পেতে হবে।

 

ইংরেজি, বাংলা রচনা ও কম্পোজিশন

ইংরেজি, বাংলা রচনা ও কম্পোজিশন পরীক্ষা হবে ১২ জানুয়ারি। মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান আল-মামুন জানান, ১০০ নম্বরের মধ্যে ইংরেজিতে ৫০ নম্বর ও বাকি ৫০ নম্বরের প্রশ্ন থাকে বাংলা রচনা ও কম্পোজিশনে। ইংরেজি অংশে সাধারণত একটি ১৫ নম্বরের Essay থাকে। Phrase and Idioms দেওয়া থাকে। এগুলো দিয়ে অর্থপূর্ণ বাক্য তৈরি করতে হয়। এখানে সাধারণত ১০ নম্বর থাকে। ইংরেজিতে একটি খবঃঃবৎ লিখতে হয়, এতেও ১০ নম্বর বরাদ্দ থাকে। ছাড়া ৫ নম্বরের Fill in the blanks থাকে। ১০ নম্বরের Translation থাকে।

বাংলা রচনা ও কম্পোজিশন অংশে ১৫ নম্বরের একটি বাংলা রচনা লিখতে হয়। ভাব সম্প্রসারণে থাকে ১০ নম্বর। বাগধারা দিয়ে বাক্য তৈরি করতে বলা হয়, এতে থাকে ১০ নম্বর। এককথায় প্রকাশেও থাকে ৫ নম্বর। বঙ্গানুবাদে বরাদ্দ থাকে ১০ নম্বর।

ইংরেজি অংশের প্রস্তুতিতে কাজে দেবে পিসি দাশের ‘অ্যাপলাইড ইংলিশ গ্রামার অ্যান্ড কম্পোজিশন’ ও প্রফেসরস প্রকাশনীর ‘ইংলিশ ফর কমপিটেটিভ এক্সাম’ বই দুটি।

সাধারণ জ্ঞান ও পাটিগণিত

মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান আল-মামুন জানান, পাটিগণিত ও সাধারণ জ্ঞানে ৫০ করে মোট ১০০ নম্বর। পরীক্ষা হবে ১৪ জানুয়ারি সকাল সাড়ে ১০টায়। পাঁচটি প্রশ্ন দিয়ে সাজানো হতে পারে গণিত অংশ। পাটিগণিত ছাড়াও বীজগণিত ও জ্যামিতি থেকেও প্রশ্ন হতে পারে। প্রশ্ন আসে সুদকষা, লাভক্ষতি, ঐকিক নিয়ম, সরল, শতকরা, উত্পাদক, মান নির্ণয় থেকে। অষ্টম শ্রেণির গণিত বইয়ের পাটিগণিত অংশ ও বিভিন্ন শ্রেণির পুরনো সিলেবাসের পাটিগণিত অনুশীলন করলে ভালো কাজে দেবে।

সাধারণ জ্ঞানে দুটি অংশ—বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক। এসআই পদে কর্মরত সুমন হালদার জানান, সাধারণত মুক্তিযুদ্ধ, বাংলাদেশের সংবিধান, উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব, আলোচিত ঘটনা, স্থাপনা, ঐতিহাসিক স্থান, আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে প্রশ্ন থাকে। সাম্প্রতিক বিষয় থেকেও প্রশ্ন হতে পারে। যেমন রোহিঙ্গা সমস্যা, ব্রেক্সিট সম্পর্কে প্রশ্ন আসতে পারে। সংক্ষিপ্ত প্রশ্নের পাশাপাশি  বর্ণনামূলক প্রশ্নও আসে। টিকা, এককথায় প্রকাশও থাকতে পারে।

এসআই নিয়োগ গাইড, অষ্টম ও নবম-দশম শ্রেণির গণিত, সাধারণ বিজ্ঞান বই ও বিসিএস লিখিত সাধারণ বিজ্ঞান গাইড পড়লে কাজে দেবে। সাধারণ জ্ঞানের জন্য আজকের বিশ্ব, নতুন বিশ্ব, সাম্প্রতিক বিষয়ের জন্য সাধারণ জ্ঞানবিষয়ক মাসিক বা তথ্যভিত্তিক সাময়িকী সহায়ক হবে।

মনস্তত্ত্ব পরীক্ষা

মনস্তত্ত্ব পরীক্ষা হবে ১৩ জানুয়ারি। আইকিউ ও কুইজ টাইপের প্রশ্ন থাকতে পারে মনস্তত্ত্ব পরীক্ষায়। পাটিগণিত ও জ্যামিতির ধাঁধাও দেওয়া হয় অনেক ক্ষেত্রে। বেশি প্রশ্ন আসে সাদৃশ্য, বৈসাদৃশ্য শব্দ বা সংখ্যা চিহ্নিতকরণ, সমস্যার সমাধান, সম্পর্ক নির্ণয়, গাণিতিক যুক্তি অভীক্ষা, ভারবাল রিজনিং থেকে। প্রশ্ন হতে পারে সাধারণ জ্ঞান (পূর্ণ রূপ, সঠিক উত্তর, সংক্ষিপ্ত টিকা) থেকেও। একটি সিরিজ যেমন ১, ৩, ৫, ৭… দিয়ে বলা হতে পারে এর পরের ধাপ কী? ভালো করতে হলে বারবার চর্চা করতে হবে। এসআই রিক্রুটিং গাইডের মনস্তত্ত্ব অংশ, আইবিএ ভর্তি ও বিসিএস পরীক্ষার মানসিক দক্ষতা অংশ অনুশীলন করলে ভালো ফল পাবেন।

 

মৌখিক পরীক্ষা

মনস্তত্ত্ব ও লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের ডাকা হবে মৌখিক পরীক্ষায়। পাস নম্বর ৪৫ শতাংশ। মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান আল-মামুন জানান, একজন প্রার্থী স্নাতক পর্যন্ত যা পড়েছে, যা দেখেছে, যা শুনেছে, তা থেকেই প্রশ্ন আসবে। এতে সাইকোলজি, মেন্টাল গ্রোথও দেখা হয়। প্রশ্ন করা হতে পারে, ১০০ জন মানুষ বিশৃঙ্খলা করছে, দুইজন পুলিশ সদস্যকে নিয়ে কিভাবে বিষয়টি সামাল দেবেন? মৌখিক পরীক্ষার নির্দিষ্ট কোনো বিষয় নেই। ধরা যাক, আইনে পড়েছেন, এ বিষয় থেকে প্রশ্ন করা হতে পারে। নিজ জেলা সম্পর্কিত প্রশ্নও করা হতে পারে।

সুত্র: কালের কন্ঠ