সাবিনা হত্যাকাণ্ডে গণমাধ্যমের বর্ণবৈষম্যমূলক আচরণ, যুক্তরাজ্যজুড়ে ক্ষোভ

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

গত ১৭ সেপ্টেম্বর লন্ডনে খুন হন ব্রিটিশ-বাংলাদেশি শিক্ষিকা সাবিনা নেসা। কিন্তু হত্যাকাণ্ডের খবর ব্রিটিশ মিডিয়ায় শুরুতে অতটা গুরুত্ব পায়নি বলে তীব্র সমালোচনা চলছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।

সোশ্যাল মিডিয়ার অনেকেই তার হত্যাকাণ্ডের খবরকে তুলনা করা করেছেন কয়েক মাস আগে লন্ডনে একই ধরণের ঘটনার শিকার হওয়া এক শ্বেতাঙ্গ নারী সারা এভারার্ডের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে।

চলতি বছরের মার্চে দক্ষিণ লন্ডনে সারা এভারার্ড খুন হন। সারাও সেদিন রাতে পায়ে হেঁটে বাড়ি ফিরছিলেন, পথে তাকে অপহরণ করে এক পুলিশ, পরে তার লাশ পাওয়া যায় একটি পার্কে।

সারার এই হত্যাকাণ্ড ব্রিটেনকে প্রচণ্ডভাবে নাড়া দেয়। দিনের পর দিন এই হত্যাকাণ্ডের খবর ব্রিটিশ গণমাধ্যমের শিরোনাম দখল করে রেখেছিল। এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে এবং ঘরের বাইরে নারীর নিরাপত্তার দাবিতে যে বড় বড় বিক্ষোভ হয়, তাতে এমনটি ব্রিটিশ রাজপরিবারের সদস্য ডাচেস অব কেমব্রিজ কেট মিডলটনও যোগ দিয়েছিলেন।

কিন্তু সাবিনা নেসার হত্যাকাণ্ডের পর অন্তত প্রথম কয়েকদিন ব্রিটিশ গণমাধ্যমে সে রকম কভারেজ দেখা যায়নি বলে অনেকে অভিযোগ করছেন।

এ ব্যাপারে লন্ডনের টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের একজন কাউন্সিলর রাবিনা খান বিবিসি রেডিও ফোরের টুডে অনুষ্ঠানে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় এমন অনেক পোস্ট তিনি দেখেছেন, যেখানে অনেকে প্রশ্ন করছেন, একজন অশ্বেতাঙ্গ নারী বা সংখ্যালঘু নারী যদি সারা এভারার্ডের মতো নিখোঁজ হয়ে যান, তিনি কি আসলে মিডিয়ায় একই ধরণের মনোযোগ পাবেন?

সাবিনা নেসা অশ্বেতাঙ্গ ও সংখ্যালঘু নারী হওয়ার এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ব্রিটিশ গণমাধ্যমগুলোর কভারেজ পাননি বলে সোশ্যাল মিডিয়ায় অভিযোগ করেছেন অনেকে।

এদিকে, সাবিনা নেসার হত্যাকাণ্ড একই সঙ্গে নতুন করে ঘরের বাইরে নারীর নিরাপত্তার প্রশ্নটি সামনে নিয়ে এসেছে।

দক্ষিণ লন্ডনের যে জায়গায় সাবিনা নেসার দেহ খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল, তার কাছেই গত শুক্রবার সন্ধ্যায় এক বিরাট প্রতিবাদ সমাবেশে যোগ দেন শত শত মানুষ। সেখানে তারা মোমবাতি জ্বালিয়ে সাবিনার প্রতি শ্রদ্ধা জানান। সমাবেশে এই হত্যাকাণ্ডের বিচার এবং নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতার অবসান দাবি করা হয়।

অন্যদিকে সাবিনা নেসা হত্যার জড়িত সন্দেহে একজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। রোববার বিবিসির প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হত্যকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে পূর্ব সাসেক্স থেকে ৩৮ বছর বয়সী এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড এই গ্রেফতারকে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনার ‘উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি’ বলে উল্লেখ করেছে।

সাবিনার পরিবারকে গ্রেফতারের ব্যাপারে অবহিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

পুলিশ এবং ঘনিষ্ঠজনদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, সাবিনা স্থানীয় সময় শুক্রবার সন্ধ্যায় তার বাড়ি থেকে বেরিয়ে পার্কের ভেতর দিয়ে পায়ে হেঁটে খুব কাছেই এক বন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছিলেন। পুলিশের ধারণা বাড়ি থেকে মাত্র পাঁচ মিনিটের দূরত্বেই হয়তো তাকে হত্যা করা হয়েছে।

সাবিনা হত্যার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি সিসিটিভি ফুটেজ প্রকাশ করেছে লন্ডনের মেট্রোপলিটন পুলিশ। সেখানে একজন টাক মাথার পুরুষকে হাতে কিছু একটা নিয়ে হেঁটে যেতে দেখা যাচ্ছে। পুলিশ মনে করছে সাবিনা নেসা হত্যা রহস্য উদঘাটনে এই ব্যক্তি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

ভিডিও ফুটেজের এই লোকটির পরণে ধূসর রঙের জিন্স এবং কালো জ্যাকেট। ফুটপাথ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় তাকে মাথায় হুড টেনে দিতে দেখা যায়।

দক্ষিণ লন্ডনের এক স্কুলের শিক্ষক ছিলেন সাবিনা নেসা। ২৮ বছর বয়সী এই ব্রিটিশ-বাংলাদেশি পড়াশোনা করেছেন গ্রিনিচ বিশ্ববিদ্যালয়ে। তার স্কুলের প্রধান শিক্ষক সাবিনা নেসাকে একজন ‘মেধাবী, দয়ালু এবং নিবেদিতপ্রাণ’ শিক্ষক বলে বর্ণনা করেছেন।

সাবিনা নেসার পৈতৃক বাড়ি বাংলাদেশের সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুর উপজেলায়। যুক্তরাজ্যের বেডফোর্ডশায়ারের একটি ছোট্ট শহরে স্যান্ডিতে থাকেন তার পরিবার। বাবা আবদুর রউফ কাজ করেন স্যান্ডির একটি রেস্টুরেন্টে।
সূত্র: যুগান্তর