সাপাহারে সন্ধানী লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানির বিরুদ্ধে গ্রাহকের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

সাপাহার প্রতিনিধি:

নওগাঁর সাপাহারে সন্ধানী লাইফ ইন্সুরেন্স লি: নামের একটি বীমা কোম্পানির বিরুদ্ধে গ্রাহকদের কয়েক লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে সোমবার দুপুরে ভুক্তভোগী গ্রাহকরা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও)’র কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।

 

এ বিষয়ে গতকাল রোববার বেলা ১১টায় উপজেলা পরিষদের সামনে প্রায় ঘন্টা কালব্যাপী ভুক্তভোগী গ্রাহকরা বীমার টাকা ফেরত ও শাখা ব্যবস্থাপক মনিরুল ইসলামের শাস্তির দাবী জানিয়ে মানববন্ধনও করেছেন।
অভিযোগ সুত্রে জানা গেছে, বীমা কোম্পানিটি প্রায় ১৫ বছর ধরে সাপাহারে কার্যক্রম শুরু করে। আমানতের দ্বিগুন-তিনগুন লভ্যাংশ দেওয়ার লোভ দেখিয়ে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার গ্রাহকদের কাছ থেকে মাসিক ভিত্তিত সঞ্চয় গ্রহণ করে। নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষে গ্রাহকরা তাঁদের আমানতের টাকা চাইতে গেলে সাপাহার শাখার দায়িত্বরত কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম বিভিন্ন ভাবে টালবাহানা করতে শুরু করে।
অনেক গ্রাহককে আমানতের টাকা দেওয়ার কথা বলে তাঁদের কাছ থেকে ডিপিএসের মূল বই ও টাকা জমা দেওয়ার রশিদ পর্যন্ত জমা নেন। তাঁর দেওয়া কথামতো ওই সমস্ত গ্রাহকরা টাকা চাইতে গেলে তাঁদের নানাভাবে হয়রানি করতে থাক্। গত পাঁচ-ছয় মাস থেকে ওই কোম্পানির সাপাহার শাখার কার্যক্রম হঠাৎ করে বন্ধ করে দেয়। ওই কোম্পানির প্রায় কয়েক হাজার গ্রাহক বীমার টাকা ফেরত পাওয়া নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন। তাঁদের আমানতের টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য প্রশাসনকে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণের জন্য আহ্বান জানান ভুক্তভোগী গ্রাহকরা।
উপজেলার ভিওইল গ্রামের দিলেনুর বেগম জানান, তিনি ১০ বছর মেয়াদের বীমার শর্তে গত ২০০৬ সালে প্রতি মাসে ২০০ টাকা করে ডিপিএস জমা দেন। ২০১৬ সালে তাঁর ডিপিএস জমা দেওয়া শেষ হয়। নির্দিষ্ট সময় শেষে বীমার টাকা চাইতে যান। শাখা ব্যবস্থাপক মনিরুল তাঁকে বীমার টাকা দেওয়ার কথা বলে তাঁর কাছ থেকে ডিপিএসের বই ও টাকা জমা দেওয়ার রশিদ জমা নেন। কিছু দিন পর টাকা নিতে গেলে ইসলামী ব্যাংকে দিলেনুরের নামে একটি হিসাব খুলে দেন। পরে দিলেনুর ব্যাংকে টাকা উত্তোলন করতে গেলে ওই হিসাবে কোনো টাকা নেই বলে তাঁকে জানানো হয়।
সন্ধ্যানী লাইফ ইনসুরেন্সের গ্রাহক নাসরিন সুলতানা সহ ত্রকাধিক গ্রাহক বলেন, ‘আমার ১০ বছর মেয়াদী একটি বিমা হিসাব খোলা ছিল। মেয়াদ শেষে টাকা চাইতে গেলে টাকা দেওয়ার কথা বলে আমার ডিপিএস বই ও টাকা জমা দেওয়ার রশিদ জমা নেয়। এক বছর হয়ে গেল এখনও টাকা পাইনি আবার অফিসও বন্ধ।
এ ব্যাপারে সন্ধ্যানী লাইফ ইনসুরেন্সের নওগাঁ জোনাল অফিসের ব্যবস্থাপক সাব্বির আহমেদ জানান, ‘সাপাহারে তাঁদের কোম্পানির কার্যক্রম ২০১৪ সাল থেকে বন্ধ রয়েছে। যে সমস্ত গ্রাহক সর্বনিন্ম দুই বছর ধরে ডিপিএসের টাকা জমা দিয়েছে তাঁরা শর্ত অনুযায়ী টাকা ফেরত পাবেন। ডিপিএসের বই ও টাকা জমা দানের রশিদ নিয়ে আমার অফিসে এলে তাঁদের টাকা অবশ্যই দেওয়া হবে।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ডিপিএসের বই ও টাকা জমা দানের রশিদ জমা যেসব গ্রাহক ইতোমধ্যে সাপাহার শাখার সাবেক ব্যবস্থাপক মনিরুলের কাছে জমা দিয়েছেন এর দায়িত্ব আমরা নেব না। তবে তিনি যদি আমাদের কাছে ওই সমস্ত গ্রাহকের কাগজপত্র জমা দেন তাহলে আমরা টাকা দেব। তিনি গ্রাহকদের সঙ্গে প্রতারণা করে থাকলে আমরা কোনো ব্যবস্থা নিতে পারব না। কারণ তিনি আর আমাদের কোম্পানিতে কাজ করছেন না।’ ভূয়া রশিদ গ্রাহকদের দিয়ে মনিরুলের নেওয়া আমানতের টাকা ফেরত পাওয়ার জন্য গ্রাহকদের আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শ দেন তিনি।
সাপাহার উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ফাহাদ পারভেজ বসুনীয়া বলেন, এ ব্যাপারে গ্রাহকগণ একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

স/অ