১৫ বছর ধরে বন্ধ নাটোর এনএস কলেজের ছাত্র সংসদ নির্বাচন

মাহবুব হোসেন, নাটোর
নাটোরের নাবাব সিরাজ উদ্-দৌলা (এনএস) সরকারি কলেজে দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে বন্ধ ছাত্র সংসদ নির্বাচন। ২০০১ সালের পর থেকে কলেজটিতে আর কোন ছাত্র সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। অথচ ছাত্র সংসদ পরিচালনার টাকা আজও নিচ্ছে কলেজ কর্তৃপক্ষ।

কলেজটিতে সব ধরনের প্রতিনিধি নির্বাচিত হলেও দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষার্থীদের জন্য কোনো প্রতিনিধি নির্বাচন না হওয়ায় ক্ষোভ সাধারণ শিক্ষার্থীদের। এদিকে ছাত্রসংসদ নির্বাচনের দাবীতে ক্লাশ বর্জন সহ নানা কর্মসূচী পালন করছে এনএস কলেজের শিক্ষার্থীরা। বুধবার সকাল থেকে শুরু হওয়ায় কর্মসূচী অব্যাহৃত রয়েছে দ্বিতীয় দিনের মতো। তবে ছাত্রসংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষনা না হওয়া পর্যন্ত ক্লাশ বর্জন সহ নানা ধরনের কর্মসূচী অব্যাহৃত থাকবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
এনএস কলেজ সূত্র জানায়, এনএস কলেজে প্রথম ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয় ১৯৬৩-১৯৬৪ শিক্ষাবর্ষে। সে সময় নির্বাচনে প্রথম ভিপি নির্বাচিত হন খন্দকার রেজাউন নবী রবি ও জিএস হন আব্দুল করিম। এরপর ২০০১-০২ শিক্ষাবর্ষে নির্বাচনে ছাত্র-সংসদের ভিপি নির্বাচিত হয় খন্দকার ইসতিয়াক আহম্মেদ ডলার এবং জিএস জহির হোসেন। এরপর থেকে দীর্ঘ ১৫ বছরে ছাত্র সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। তাছাড়া বিএনপি ক্ষমতা আসার পর ২০০৩-০৪ শিক্ষাবর্ষে সিলেকশনের মাধ্যমে ভিপি এবং জিএস নির্বাচিত হয় তুষার-সোহেল পরিষদ।

এরপর কলেজটিতে ছাত্র সংসদ নির্বাচন এমনকি সিলেকশন কমিটিও গঠন করেনি কলেজ কর্তৃপক্ষ। যার কারণে সুস্থ রাজনীতির চর্চার পাশাপাশি ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত কলেজটির সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এনএস কলেজের মূল ভবনের নিচতলায় একটি রুমে  কলেজের ১৫ হাজার সাধারণ শিক্ষার্থীর কাছে ছাত্র সংসদ হিসেবে পরিচিত হলেও কার্যত তা অচল। বর্তমানে সেটা ব্যাবহার করছে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা।
এদিকে, ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবীতে বুধবার থেকে অনির্দ্দিষ্টকালের জন্য ক্লাশ বর্জন কর্মসূচী শুরু করেছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সাথে একাত্ত্বতা ঘোষনা করেছে কলেজ ছাত্রলীগ। কর্মসূচীর দ্বিতীয় দিন বৃহস্পতিবারও ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবীতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে ছাত্রলীগ সহ সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
এনএস কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি এস এম সাহাদত হোসেন রাজিব বলেন, ২০০১ সালের পর থেকে ছাত্র সংসদ নির্বাচন না হওয়াটা সম্পূর্ণ কলেজ প্রশাসনের ব্যর্থতা, ছাত্র সংসদ নির্বাচনের ব্যাপারে আমরা সব সময়ই আন্তরিক। আমরা চাই ছাত্র সংসদ নির্বাচন হোক।
আন্দোলনের বিষয়ে ছাত্রলীগের সভাপতি এস এম সাহাদত হোসেন রাজিব আরো বলেন, দীর্ঘ দিন ধরে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবী জানিয়ে আসছে। কিন্তু কলেজ কর্তৃপক্ষ নির্বাচন না দিয়ে সময় ক্ষেপন করছে। বারবার কলেজ কর্তৃপক্ষ আশ্বাস দিয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন নষ্ট করেছে, এবার আর আন্দোলন বিফলে যেতে দেওয়া হবে না। যতদিন পর্যন্ত নির্বাচনের তফসিল ঘোষনা করা হবেনা ততদিন ক্লাশ বর্জন সহ নানা কর্মসূচী অব্যাহৃত থাকবে।
এনএস কলেজের শিক্ষার্থী রাসেল হোসেন, বুলবুল আহম্মেদ সহ বিভিন্ন শিক্ষার্থী বলেন,  ছাত্র সংসদ কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে প্রতি বছর ২০ টাকা করে ফি আদায় করা হচ্ছে। এই হিসাবে সর্বমোট প্রায় অর্ধ কোটি টাকা এ পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায় করা হয়েছে ছাত্র সংসদ ফি বাবদ। এই টাকা কোন খাতে ব্যয় করা হয় তা পরিষ্কার নয়।
ছাত্র সংসদ নির্বাচন বন্ধ রয়েছে দীর্ঘ ১ যুগের অধিক সময় ধরে। বছরের পর বছর ছাত্র সংসদ নির্বাচন বন্ধ থাকায় একদিকে শিক্ষার্থীরা যেমন তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তেমনি দেশ দক্ষ জাতীয় নেতৃত্ব পাচ্ছে না এমনটাই মনে করেন ছাত্র সংগঠনসমূহের নেতৃবৃন্দ এবং ছাত্র সংসদের সাবেক নেতারা।
এনএস কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি বুলবুল হোসেন বলেন, শিক্ষা কার্যক্রমের বাইরে ছাত্রদের বিবিধ কার্যক্রম নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দ্বারা হওয়া উচিত। মূলত একাডেমিক ক্যালেন্ডারের মত প্রতিবছর একটি নির্দিষ্ট সময়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচন করতে হবে। কলেজে যথা সময়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচন না হওয়ার ফলে কলেজে ছাত্র নামধারী সন্ত্রাসীদের দৌরাত্ম বাডাছে, যারা হলে সিট দখল ও ভর্তি বাণিজ্যের দ্বারা ছাত্র সংগঠনের সুনাম নষ্ট করছে।
এবিষয়ে এনএস কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুল কুদ্দুস মৃধা বলেন, সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কারণে আমরা ইতোমধ্যে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের কাজে হাত দিয়েছি। গঠণতন্ত্র সংশোধন সহ নানা কর্মকা-ের জন্য আগামী ২০আগষ্ট শিক্ষক পরিষদের বৈঠক ডাকা হয়েছে। বৈঠকে গঠনতন্ত্র সংশোধন হলেই নির্বাচনের তফসিল ঘোষনা করা সম্ভব হবে।
আন্দোলনের বিষয়ে অধ্যক্ষ বলেন, আন্দোলন স্থগিত করার জন্য সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে আলোচনা চলছে। কলেজের শিক্ষার্থীদের ক্ষতির কথা চিন্তা করে সাধারণ স্থগিত করবে বলে আশা করছি।

স/আর