রবিবার , ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ | ১৮ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ ও দুর্নীতি
  3. অর্থ ও বাণিজ্য
  4. আইন আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. কৃষি
  7. খেলা
  8. চাকরীর খবর
  9. ছবিঘর
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দুর্ঘটনা
  13. ধর্ম
  14. নারী
  15. নির্বাচিত খবর

সাংবাদিক হত্যা হয়, বিচার হয় না

Paris
ফেব্রুয়ারি ৫, ২০১৭ ২:৩৭ অপরাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক: সাংবাদিক নির্যাতন পুরোনো কথা। এখন এর সঙ্গে যোগ হয়েছে হত্যাকাণ্ড। রাজপথে দাঁড়িয়ে সভা সমাবেশ আর মানুষের দাবি দাওয়া নিয়ে তুলে সাংবাদিকরা। ভাবতে অবাক লাগে এই রাজপথে আমাদেরকেই দাবি নিয়ে দাঁড়াতে হচ্ছে। প্রশাসনের কেউ আক্রান্ত হলে কষ্ট হয় আপনাদের। তখন সংবাদসহ পেছনের অনেক ঘটনা আমরা সংবাদের মাধ্যমে প্রকাশ করি। এতে আপনাদের তদন্তের সুবিধা হয়। প্রকৃত আসামি আইনের আওতায় আসে।

আপনাদের ওপরে হামলা হলে আমরা থেমে থাকিনা। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ভিডিও ধারণ করে তা আপনাদের সুবিদার্থে সংবাদ প্রকাশ করি। আমাদের নামেও অনেক মামলা হয়। সহ্য করি। আজ আমাদের ভাইকে হত্যা করা হয়েছে। আজ রাজপথে দাঁড়িয়ে আপনাদের তদন্তের অপেক্ষা করব কেন? আমরা জানি আপনারাও জানেন অপরাধী কে? তাহলে অপরাধীকে গ্রেপ্তার করতে বিলম্ব হচ্ছে কেনো।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, অপরাধ যেই করুক কাওকে ছাড় দেয়া যাবে না। তথ্য প্রমান সব কিছু আপনাদের হাতেই আছে। আমরা এটাই দাবি জানাই। আর রাজপথে কাজ করতে গিয়ে আপনাদের প্রাণ বাঁচানোর ঘটনা সাংবাদিকদের কাছে বিরল নয়। সেটা আপনারাও জানেন। যখন আমরা আপনাদের সাহায্যার্থে এগিয়ে আসি আপনারা কেন থাকবেন না? আমরা চাইনা কারো প্রাণ হানি হোক।সাংবাদিক হত্যা হয়। কিন্তু এর বিচার হয় না। হত্যাকারী যে হোক না কনো তার বিচার সকলের কার্ম।

আজ রোববার বেলা ১১টার দিকে রাজশাহী মহানগরীর সাহেব বাজার জিরোপয়েন্টে আব্দুল হাকিম শিমুলের হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে মানববন্ধনে রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নের (আরইউজে) সভাপতি কাজী শাহেদের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক হারুন-অর রাশীদের সঞ্চলায় উপস্থিত রাজশাহীতে কর্মরত সাংবাদিকরা বক্তব্য দেন।

এসময় আরইউজে সভাপতি কাজী শাহেদ বলেন, আমরা দেখেছি না.গঞ্জের সাত খুনের আসামি নুর হোসেনের মামলায় সরকারের উচ্চ পর্যায়ের তদন্তের পরে তিনি ফাঁসির আসামি। আমরা সাংবাদিকরা চাই আব্দুল হাকিম শিমুলের হত্যাকাণ্ডের ভালভাবে তদন্ত হোক এবং আসামিদের শাস্তি হোক। বাংলাদেশে নারী, শিশু বা সব বিচারের আলাদা আলাদা ট্রাইব্যুনাল আছে। কিন্তু সাংবাদিক হত্যা বা নির্যাতনের আলাদা কোন ট্রাইব্যুনাল নাই। আমরা সাংবাদিক হত্যা বা নির্যাতনের বিচারের ট্রাইব্যুনাল চাই।

রাজশাহী টেলিভিশন জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আহসান হাবিব অপু বলেন, সব রাজনৈতিক নেতা সাংবাদিকদের ব্যবহার করে তাদের স্বার্থের জন্য। আমরা সাংবাদিকরা কোন রাজনৈতিক নেতা ভালো সংবাদ প্রকাশ করলে তার কাছে ভালো। আবার যখন তার অপরাধের কোন একটা সংবাদ প্রকাশ করা হয়, তখন তাদের স্বার্থে আঘাত লাগে।

তিনি আরো বলেন, এই সাংবাদিকদের কাঁধে বন্দুক রেখে ব্যবহার করে থাকে। তারা সমাজের বড় পর্যায়ে যায়। সেই সেময়ের মধ্যে কোন অপরাথ করলে সেই সংবাদ প্রকাশ করা হলে সাংবাদিকের কাঁধে রাখা সেই গুলি চালিয়ে দেয় সাংবাদিকের ওপরে। আমরা এই মনববন্ধন থেকে বলতে চাই, সারা দেশের সব সাংবাদিক হত্যা-নির্যাতনের অবিলম্বে বিচার চাই।

দৈনিক ইত্তেফাতের রাজশাহীতে কর্মরত সাংবাদিক আনিসুরজ্জামান আনিস বলেন, আমি সাংবাদিক হত্যার বিচার চাই না। আর কেনোই বা চাই। বিচারীতো হয় না। প্রধানমন্ত্রীকে এই মানববন্ধন থেকে জানাতে চাই, যে সকল সাংবাদিক হত্যা ও নির্যাতনের শিকার হয়ে তার সুষ্ঠ তদন্ত ও বিচার চাই।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সভাপতি আদিব হাসান বলেন, সাংবাদিক কখনো পুলিশের বুটের নিচে আবার কখনো লাইসেন্সধারী সন্ত্রাসীর হাতে গুলিবৃদ্ধ অবস্থায় মৃত্যু। সাংবাদিক নির্যাতন আর হত্যা হলে কোন বিচার হয় না। তাই তো লাইসেন্সধারী সন্ত্রাসীর এই সুযোগটা কাজে লাগিয়েছে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যাল রির্পোটার্স ইউনিটির সভাপতি কায়কোবাদ আলী খান বলেন, গত এক দশকে দেশে সাত জন সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে। তার একটারও বিচার হয়নি। আমারা কখনো ভাবিনি আমাদের রাস্তায় দাঁড়াতে হবে। সব সরকারের আমলে সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটে কিন্তু এর বিচার হয় না।

রাজশাহী ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, আজ নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হয়ে আমাদের সাংবাদিককে হত্যা করছে। আমরা এই হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই। বিচার না করা হলে আমরা রাজপথে কঠর আনন্দোলনে নামবো।

তিনি আরো বলেন, সরকার সাগর রুনির হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বলেছেন, হত্যাকারীরা আমাদের হাতের মধ্যে আছে।কিন্তু আতো দিন হয়ে গেলেও হত্যাকারীরা হাতেই থেকে গেলো।তার কোন বিচার হলো না। আমরা বাংলাদেশের সকল সাংবাদিক হত্যা-নির্যাতনের বিচার চাই।

রাজশাহী কলেজ রির্পোটার ইউনিটের সাবেক সভাপতি শেখ রহমত উল্লাহ বলেন, আমরা আর রাজপথে দাঁড়াতে চাই না। সাংবাদিক হত্যাকাণ্ড আর চাই না। পুলিশ প্রশাসন আপনারা যদি তাদের ছাড় দিয়ে দেন। আমারা সাংবাদিকরা কাউকে ছাড় দেবো না। আমাদের কলম চলতে থাকবে।

অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে রাজশাহীতে কর্মরত প্রিন্ট মিডিয়া, ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়া রেডিওসহ বিভিন্ন পর্যায়ের সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। এর আগে গতকাল শনিবার রাজশাহী কলেজের সামনে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এসময় রাজশাহী কলেজসহ বিভিন্ন সংগঠনের সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, এর আগে, গত বৃহস্পতিবার দুপুর ১টার দিকে শাহজাদপুর পৌরসভার মেয়র হালিমুল হক মীরুর ছোট ভাই হাসিবুল হক পিন্টু শাহজাদপুর কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি বিজয় মাহমুদকে মারপিট করেন। পরে মেয়রের বাসা থেকে পুলিশ পিন্টুকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। মাহমুদকে মারপিটের ঘটনার প্রতিবাদে বিকেলে এলাকাবাসী মহাসড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলটি মেয়রের বাসার সামনে পৌঁছালে কতিপয় লোক মেয়রের বাসা লক্ষ্য করে ঢিল মারে। একপর্যায়ে মেয়র তাঁর ব্যক্তিগত শর্টগান থেকে গুলিবর্ষণ করেন।

এ সময় উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ, গুলি ও হাতবোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। ঘটনার সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে দৈনিক সমকালের শাহজাদপুর প্রতিনিধি আবদুল হাকিম শিমুলসহ তিনজন গুলিবিদ্ধ হন। এ ঘটনায় উভয় পক্ষের অন্তত ১০ জন আহত হয়। গুরুতর আহত সাংবাদিক শিমুলকে প্রথমে শাহজাদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং পরবর্তী সময়ে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় গতকাল দুপুরে বগুড়া থেকে ঢাকায় নেওয়ার পথে দুপুর ১টার দিকে বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিমপাড় এলাকায় সাংবাদিক শিমুল মারা যান

 

স/আ

সর্বশেষ - রাজশাহীর খবর