সাংবাদিকের পরিবারের ২২ সদস্য নিহত, শেষ যে বার্তা পাঠিয়েছিলেন মা

সিল্কসিটি নিউজ ডেস্ক

ইসরাইলি হামলায় ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আলজাজিরার এক সাংবাদিকের পরিবারের ২২ সদস্য নিহত হয়েছেন।
ভুক্তভোগী ওই সাংবাদিকের নাম মোয়ামেন আল শরাফি। তিনি আলজাজিরা আরবির সংবাদদাতা।

মূলত গাজা উপত্যকার যে বাড়িতে শরাফির পরিবারের সদস্যরা আশ্রয় নিয়েছিলেন বুধবার, সেখানে ইসরাইলি বাহিনী হামলা চালালে তারা প্রাণ হারান। খবর আলজাজিরা।

বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আলজাজিরার একজন কর্মী গাজা উপত্যকায় ইসরাইলি বিমান হামলায় তার পরিবারের ২২ সদস্যকে হারিয়েছেন। বুধবার সকালে উত্তর গাজার জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরে আলজাজিরা আরবি সংবাদদাতা মোয়ামেন আল শরাফির পরিবারের ওই সদস্যদের হত্যা করা হয়।

পরিবারের নিহত সদস্যদের মধ্যে আল শরাফির বাবা মাহমুদ এবং মা আমিনা, তার ভাই ও ভাইয়ের স্ত্রী, বোন এবং তার স্বামীর পাশাপাশি ভাগ্নে ও ভাগ্নিও রয়েছেন।
আল শরাফি আলজাজিরাকে বলেছেন, হামলার সময় একটি বিস্ফোরক ব্যারেল বাড়িটিতে আঘাত করে এবং এর ফলে মাটিতে গভীর গর্ত তৈরি হয়।

তিনি আরও বলেন, ‘সিভিল ডিফেন্স ক্রুদের কেউ নিহতদের মৃতদেহের কাছে পৌঁছাতে সক্ষম হয়নি। আমাদের প্রিয়জনকে বিদায় জানানো থেকে বাধা দেওয়া হয়েছে এবং তাদের যথাযথভাবে কবর দেওয়া থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে।’

হামলার পর তোলা একটি ভিডিওতে আল শরাফির এক আত্মীয়কে বোমা বিস্ফোরিত বাড়ির ধ্বংসাবশেষের কাছে দাঁড়িয়ে কাঁদতে দেখা গেছে। ওই আত্মীয় বলেন, ‘মনে হচ্ছে ভোর ৪টা বা ৫টার দিকে ইসরাইলি বাহিনী বাড়িটিতে হামলা চালিয়েছে। সূর্য ওঠার আগ পর্যন্ত আমরা ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে পারিনি। হামলায় বেশ কয়েকজন শিশু নিহত হয়েছে।’

এদিকে বোমা হামলায় নিহত হওয়ার আগে তার মা আমিনা তাকে যে শেষ ভয়েস মেসেজ পাঠিয়েছিলেন তা প্রকাশ করেছেন আল শরাফি। ওই ভয়েস নোটে তাকে বলতে শোনা যায়, ‘আসসালামু আলাইকুম। শুভ সকাল, মমিন। তুমি কেমন আছ? আশা করি, তুমি ভালো আছ। তোমার স্ত্রী-সন্তান কেমন আছে? তোমার শারীরিক অবস্থা কী? নিজের যত্ন নিও, বাবা।’

তিনি আরও বলেন, ‘আল্লাহ তোমাকে এই যুদ্ধ থেকে অক্ষত অবস্থায় রক্ষা করুক। ভালোভাবে নিজের যত্ন নিও, আমি সত্যিই তোমাকে মিস করি, আমি প্রতিদিন তোমার জন্য দোয়া করি। আল্লাহ তোমার মঙ্গল করুক।’

এক বিবৃতিতে আলজাজিরা মিডিয়া নেটওয়ার্ক ইসরাইলি এ হামলার নিন্দা করেছে এবং বলেছে, ‘এই অপরাধের জন্য দায়ী সবাইকে জবাবদিহি করার জন্য সব আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করবে আলজাজিরা।’

এর আগে গত ২৫ অক্টোবর ইসরাইলি হামলায় গাজায় আলজাজিরার আরেক আরবি সংবাদদাতা ওয়ায়েল দাহদুহ তার পরিবারের বেশ কয়েকজন সদস্যকে হারিয়েছিলেন।

উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর হামাসের নজিরবিহীন আন্তঃসীমান্ত হামলার পর থেকে ইসরাইল গাজা উপত্যকায় অবিরাম বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ইসরাইলি এ হামলায় হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে।