সোমবার , ৬ নভেম্বর ২০১৭ | ১২ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ ও দুর্নীতি
  3. অর্থ ও বাণিজ্য
  4. আইন আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. কৃষি
  7. খেলা
  8. চাকরীর খবর
  9. ছবিঘর
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দুর্ঘটনা
  13. ধর্ম
  14. নারী
  15. নির্বাচিত খবর

সাঁওতাল পল্লিতে হামলার চিহ্ন মুছে গেলেও শুকায়নি মনের ক্ষত

Paris
নভেম্বর ৬, ২০১৭ ১১:০৪ পূর্বাহ্ণ

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক: গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার সাঁওতাল পল্লিতে হামলা-ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও গুলি করে তিন সাঁওতালকে হত্যার ঘটনার এক বছর পূর্ণ হলো আজ। এখন সেখানে নেই পোড়া বসতি বা ধ্বংসের কোনও চিহ্ন। ওই পল্লিতে রোপণ করা হয়েছে আখ। ক’দিন পরই শুরু হবে আখ কাটা। তবে সেই দিনের হামলার কথা মনে করে এখনও আঁতকে ওঠেন সাঁওতালরা। মনের ভেতরে এখনও তারা বয়ে বেড়াচ্ছেন সেই স্মৃতির ক্ষত।

২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর রংপুর চিনিকলের জমিতে আখ রোপণকে কেন্দ্র করে পুলিশ ও শ্রমিক-কর্মচারীদের সঙ্গে সাঁওতাল ও বাঙালিদের ত্রিমুখী সংঘর্ষ হয়। ওই সংঘর্ষে আহত হন ৯ পুলিশ সদস্য। এছাড়া পুলিশের গুলিতে তিন সাঁওতাল নিহত ও অন্তত ৩০ জন আহত হন। পরে সাঁওতালদের দুই শতাধিক ঘর পুড়িয়ে দেয় পুলিশ। ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় সাঁওতাল পল্লি। জীবন নিয়ে পালিয়ে পার্শ্ববর্তী মাদারপুর-জয়পুরপাড়ায় আশ্রয় নেন তারা। খোলা আকাশের নিচে শুরু হয় তাদের বসবাস। সেই থেকে সাঁওতাল-বাঙালিদের দুই শতাধিক পরিবার এখনও সেখানেই বসবাস করছেন।

এক বছর আগের সেই হামলা, আগুনের লেলিহান শিখা আর পুলিশের ভয়াল তাণ্ডবের ক্ষত এখনও অজানার আশঙ্কায় তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে সাঁওতালদের। আহতরা বেঁচে আছেন শারীরে ক্ষত নিয়ে। এ ঘটনায় মামলা দায়ের হয়। উচ্চ পর্যায় থেকে সুষ্ঠু বিচারের আশ্বাসও দেওয়া হয়। তবে সাঁওতালদের অভিযোগ, আজও দৃশ্যমান কোনও অগ্রগতি হয়নি সেই বিচার প্রক্রিয়ার। এমনকি হামলার সঙ্গে জড়িত ও চিহ্নিত দুষ্কৃতিকারীরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও এখনও গ্রেফতার করা হয়নি তাদের। ফলে আতঙ্ক আর শঙ্কা এখনও মন থেকে মুছে ফেলতে পারছেন না সাঁওতালরা। মামলার অভিযোগপত্র (চার্জশিট) না দেওয়ায় বিচার কার্যক্রম ও বাপ-দাদার পৈতৃক জমি ফেরত পাওয়া নিয়েও শঙ্কিত তারা।

সাঁওতাল পল্লিতে বসবাসরত বার্নাবাস টুডু বলেন, ‘ওই হামলায় বসতঘর পোড়ার দৃশ্য মনে হলেই বুকটা হাহাকার করে কেঁপে উঠে। তিলতিল করে গড়ে তোলা সাজানো সংসার চোখের সামনে পুড়ে ছাই হয়েছে। এখন আমরা খোলা আকাশের নিচে ঝুপড়ি তুলে বাস করছি। এখনও মিলের শ্রমিক-কর্মচারীদের ভয় আর হুমকিতে ঠিকভাবে বাইরে যেতে পারি না। কার্জকর্ম করতে না পারায় খেয়ে, না খেয়ে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছি।’

হামলায় আহত চরেন সরেন বলেন, ‘ওইদিন পুলিশের গুলি লাগে হাত ও পায়ে। আজও সেই ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছি। ঠিকমতো চিকিৎসা করাতে পারি না। টাকার অভাবে ওষুধ কেনা হয় না। সেই দিনের কথা মনে পড়লে বুকের ভেতরটা দগদগ করে জ্বলে ওঠে। অথচ প্রকৃত হামলাকারীরা গ্রেফতার হয়নি। তারা এখনও প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে।’
আহত বিমল কিসকো ক্ষোভ জানিয়ে বলেন, ‘হামলার পর চিকিৎসা ও ওষুধ পেলেও এখন আর কেউ খোঁজ রাখেন না। হামলার পর অনেকে সুষ্ঠু বিচার, জমি উদ্ধারসহ হামলাকারীদের আইনের আওতায় আনার আশ্বাস দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, সুষ্ঠু তদন্তের জন্য উচ্চ আদালত বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি হবে। সেই কমিটি সরেজমিনে এসে ক্ষতিগ্রস্ত সাঁওতালসহ ঘটনার প্রতক্ষদর্শীদের সাক্ষ্য নেন। পরে তদন্ত প্রতিবেদন উচ্চ আদালতে দাখিল হলে পুলিশসহ জেলা প্রশাসককে সরিয়ে নেওয়া হয়। কিন্তু প্রকৃত হামলাকারীদের এখনও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়নি।’

স্বপন টুডু বলেন, ‘সাঁওতালদের জন্য সরকার পুনর্বাসনের কোনও উদ্যোগ নেয়নি। তিন শতাধিক সাঁওতালদের বসবাসের জন্য সরকার আশ্রয়ণ প্রকল্প হাতে নিয়েছে। কিন্তু এই প্রকল্প নিয়ে প্রথম থেকেই সাঁওতালদের পক্ষ থেকে অপত্তি জানানো হয়। আমরা আশ্রয়ণ প্রকল্পে না, বাপ-দাদার জমিতেই থাকতে চাই। আমাদের জমি ফেরত দিতে সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘তদন্ত কার্যক্রম ও প্রকৃত হামলাকারীদের বিরুদ্ধে আদালতে দ্রুত চার্জশিট দাখিল করতে হবে। তেমনি বিচারের নামে যেন দীর্ঘসূত্রিতা তৈরি না হয়, সেটাও সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে।’

সাঁওতাল পল্লিতের হামলার ঘটনায় সাঁওতালদের পক্ষ থেকে পৃথক দু’টি ও পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করে। এছাড়া হামলার পর মিল কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন মিথ্যা অভিযোগে সাঁওতালদের বিরুদ্ধে ১০টি মামলা দায়ের করে। সাঁওতালদের দু’টি মামলার এজাহারে ৩৩ জনের নাম-ঠিকানা উল্লেখসহ অজ্ঞাত এক হাজারের বেশি আসামি করা হয়। এক বছরে এই মামলার আসামিদের ৮/১০ জন গ্রেফতার হলেও জামিনে বের হয়ে গেছেন অনেকে।

এদিকে, সাঁওতালদের দু’টি মামলা অধিকতর তদন্তের দায়িত্ব নিয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। গাইবান্ধা পিবিআই’র পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সাঁওতাল পল্লিতে হামলার ঘটনা একটি জাতীয় ইস্যু। তাই মামলা দু’টির তদন্ত গুরুত্ব দিয়ে করা হচ্ছে। হামলার সঙ্গে জড়িত চিহ্নিত ইউপি সদস্য শাহ আলমসহ বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। জড়িত অন্যদেরও গ্রেফতারে পুলিশ তৎপর রয়েছে। শিগগির তদন্ত শেষ করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হবে।’

গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক গৌতম চন্দ্র পাল  বলেন, ‘সাঁওতালদের পুনর্বাসনে আশ্রয়ণ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। সেখানে তারা বসবাস করতে পারবেন, জমিতে চাষাবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করতে পারবেন। তাছাড়া সরকারি বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে সাঁওতালদের আগ্রধিকার দেওয়া হবে এবং প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদের স্বাবলম্বী করে তোলা হবে।’

এদিকে, সাঁওতাল পল্লিতে হামলার এক বছর পূর্তি স্মরণে আজ (৬ নভেম্বর) সমাবেশসহ দিনব্যাপী কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে। সাপমারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে এসব কর্মসূচি পালিত হবে।

 

সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন

সর্বশেষ - জাতীয়