সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত বেসরকারি কর্মচারীদের চাকরি স্থায়ী করণের দাবিতে মানববন্ধন


নিজস্ব প্রতিবেদক :
সরকারি কলেজের কর্মরত বেসরকারী বেসরকারি কর্মচারীদের চাকরি রাজস্বখাতে স্থানান্তরের দাবিকে রাজশাহীতে মানববন্ধন করা হয়েছে। আজ শনিবার বেলা ১১টায় সরকারী কলেজের কর্মচারি ইউনিয়নের ব্যানারে নগরীর জিরোপয়েন্টে এ মানববন্ধন করা হয়। এরআগে কর্মচারিরা একটি বিক্ষোভ মিছিল করে। পরে নগরীর জিরোপয়েন্টে একাত্রিত হয়ে মানববন্ধন করেন।

মানববন্ধনে কর্মচারিরা বলেন, বাংলাদেশের প্রায় ৪শ’ টি সরকারী কলেজ ও ৩টি সরকারি মাদ্রাসার বেসরকারি কর্মচারীরা বিগত ৫ থেকে ২৫ বছর বা তারও অধিক সময় ধরে নিয়োগ প্রাপ্ত হয়ে ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারী হিসেবে কর্মরত আছি। আমাদের মাসিক বেতন ৫০০০ থেকে ৯০০০ টাকা। এই অল্প বেতনে আমরা পরিবার পরিজন নিয়ে খুবই কষ্টে জীবন যাপন করছি।

সরকারি কলেজ ও মাদ্রাসা পরিচালনাকারী মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর কর্তৃপক্ষ ২০১৩ সালে জনবল নিয়োগ দেয়। কিন্তু বেসরকারি কর্মচারীদের কোন অগ্রাধিকার দেয়নি। মাউশি কর্তৃপক্ষ আবারও ২০২০ সালে জনবল নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। সেই বিজ্ঞপ্তিতে সুপ্রিম কোর্টের একটি রিট মামলার নির্দেশনা মোতাবেক অগ্রাধিকার থাকলেও মাউশি কর্তৃপক্ষ সে নির্দেশ মানেন নি। সরকারি কলেজগুলো মাত্র ৫% লোক সরকারিভাবে কর্মরত আছে। বাকি ৯৫% কর্মচারী বেসরকারিভাবে কর্মরত আছে। কোন কলেজ ও মাদ্রাসা কর্মচারীর অভাবে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়নি। এমনকি করোনা মহামারির মধ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও বেসরকারি কর্মচারীরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ত্যাগ না করে প্রতিষ্ঠান। দেখাশোনার দায়িত্বে নিয়োজিত ছিল।

করোনা মহামারির জন্য অনেক কলেজের কর্মচারীদের মাসিক বেতন ভাতা অর্ধেক করে দেয়া হয়েছিল। বেতন অর্ধেক করার কারণে করোনা মহামারির সময় আমরা মানবেতর জীবন যাপন করেছি এবং অনেকের চাকুরীও চলে গেছে। অনেকে মৃত্যু বরণও করেছে। বাংলাদেশ শিক্ষা ক্ষেত্রে উন্নয়নের যে সাফল্য অর্জন করেছে এই অর্জনে বেসরকারি কর্মচারীদের অবদানের কথা বাদ দিয়ে ভাবা যায় না। আমরা চাকরি স্থায়ী করার জন্য জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গত ৮ নভেম্বর থেকে ২৬ শে নভেম্বর পর্যন্ত সময় বাংলাদেশের সরকারি কলেজ ও ৩টি মাদ্রাসায় কর্মরত বেসরকারি কর্মচারীরা অবস্থান কর্মসূচি পালন করি।

প্রধান মন্ত্রী, শিক্ষা মন্ত্রী, শিক্ষা সচিব ও মহাপরিচালককে আমরা স্মারকলিপি প্রদান করি। করোনা পরিস্থিতি বিবেচনা করে। মাউশি অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে ৩ মাসের জন্য আমাদের কর্মসুচী স্থগিত ঘোষণা করি।

বর্তমান দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির কারণে আমাদের এই সামান্য বেতনে পরিবারসহ জীবন যাপন করা একেবারেই অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এ পরিস্থিতিতে আমরা আজ বাধ্য হয়েছি রাস্তায় নামতে। সেকারণে প্রধানমন্ত্রীর নিকট আমাদের আকুল আবেদন আপনার সুদৃষ্টি ছাড়া আমাদের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন আসবে না। কারণ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৪৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারীদের আন্দোলনে সমর্থণ জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় হতে বহিষ্কার হয়েছে। আর পরও মহান নেতা মাথানত করেননি। ভাই আপনি তাঁর সুযোগ্য কণ্যা হিসেবে আপনার নিকট আমাদের চাওয়া পাওয়া অনেক বেশি।

আমরা ১৫ থেকে ২৫ বছরের উর্ধ্বে নিজের সন্তানের মতো আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে ভালোবেসে নিজের বুকে ধারণ করে নিরসলভাবে কান্না করে চলেছি এরপরও আমাদের বাদ দিয়ে নতুন নিয়োগের মাধ্যমে নতুন জনবল নিয়োগের দ্বারা আমাদের ভবিষ্যৎ আরো অনিশ্চয়তার মধ্যে ধাবিত হচ্ছে। সে কারণে আমরা চাই নতুন করে জনবল নিয়োগ না দিয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ যে সকল কর্মচারী বাংলাদেশের বিভিন্ন সরকারি কলেজে বেসরকারিভাবে সেবা দিয়ে আসছে তাদেরকে অগ্রাধিকারের ভিত্তিকে নিয়োগ দিয়ে সাধারণ কর্মচারীদের বেচে থাকার পথকে সুগম করার জন্য বিনিত অনুরোধ জানাচ্ছি।

তারা দুই দফা দাবি তুলে ধরেন। এরমধ্যে সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত বেসরকারি কর্মচারীদেরকে নিয়োগের তারিখ হতে চাকরি সরকারি করণ ও চাকরি সরকারিকরণের পূর্ব পর্যন্ত সরকারি স্কেল অনুযায়ী বেতনভাতাদি প্রদান করার দাবি জানানো হয়।

মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন , রাজশাহী বিভাগ বেসরকারী কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি এহসানুল কবীর, সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম সুইট, সহ-সভাপতি বদিউজ্জামান নয়ন, সহ-সভাপতি সুমন সরকার, নাটোর রানী ভবানীগঞ্জ কলেজের সাধারণ সম্পাদক মাসুদ আলী, রাজশাহী কলেজ জামে মসজিদের প্রেস ইমাম মাওলানা মোঃ মাকসুদ উল্লাহ প্রমুখ।