সরকারি নিয়োগের স্বাস্থ্য পরীক্ষা বেসরকারিতে!

সিল্কসিনিউজ ডেস্ক:

রেলওয়ের খালাসি নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা বেসরকারি দুটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রেফার করার অভিযোগ উঠেছে রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের এক চিকিৎসা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, ওই দুটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে স্বাস্থ্য পরীক্ষা না করলে রিপোর্ট গ্রহণ না করারও অভিযোগ উঠেছে।

রেলওয়ের সূত্র জানায়, দেশের দুই প্রধান রেলওয়ে কারখানা পাহাড়তলী ও সৈয়দপুরে কাজ করার জন্য চতুর্থ শ্রেণির খালাসি পদে ৮৬৩ জন নিয়োগের জন্য ২০১৩ সালের ৪ জুলাই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। চলতি বছরের ১৩ মে এ নিয়োগে উত্তীর্ণদের তালিকা প্রকাশ করা হয়।

ওই মাসে তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য ডাকা হয়। পরে ডোপ টেস্টের জন্য নগরের বেসরকারি এপিক হেলথ কেয়ার ও পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে তাদের রেফার করেন রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের দায়িত্বরত স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ফাতেমা আক্তার।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ডোপ টেস্টের জন্য তাদের ৬টি পরীক্ষা করতে বলা হয়। পরীক্ষাগুলোর মধ্যে রয়েছে ইয়াবা, কোকেন, হেরোইন, ফেনসিডিল, আফিম ও গাঁজার উপস্থিতি আছে কি-না। প্রতিটি টেস্টের জন্য সরকারি খরচ ১০০-১২০ টাকা। অর্থাৎ এ ছয়টি পরীক্ষা সরকারি হাসপাতালে করা হলে খরচ পড়বে সর্বোচ্চ ৭০০ টাকা পর্যন্ত।

কিন্তু খালাসি নিয়োগে উত্তীর্ণদের এসব পরীক্ষা বেসরকারি ওই দুটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে করতে হওয়ায় তাদের দিতে হচ্ছে প্রতিটি পরীক্ষার জন্য এক হাজার ২৫০ টাকা। অর্থাৎ ছয়টি পরীক্ষায় খরচ পড়ছে ৭ হাজার ৫০০ টাকা। যা সরকারি দাম থেকে প্রায় ১০ গুণ বেশি। অথচ সরকারি নিয়োগের স্বাস্থ্য পরীক্ষা শুধু সরকারি হাসপাতালেই করার নিয়ম রয়েছে।

পপুলার ও এপিক হেলথ কেয়ার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের দুইজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলানিউজকে জানান, মূলত কমিশন খাওয়ার জন্য তিনি বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রেফার করছেন। রেলওয়ের ওই চিকিৎসা কর্মকর্তা প্রতিটি টেস্টের জন্য কমিশন পাচ্ছেন এক হাজার ৪৪০ টাকা। যদি তিনি একশ’র চেযে বেশি রোগী রেফার করেন তাহলে তিনি কমিশন হিসেবে পাবেন প্রায় দেড় লাখ টাকা।

খালাসি নিয়োগে উর্ত্তীণ বেশ কয়েকজন প্রার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলানিউজকে জানান, এক প্রকার বাধ্য হয়ে তারা ওই দুটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ডোপ টেস্টের পরীক্ষা করেছেন। রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ফাতেমা আক্তার সবাইকে ওই দুটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে পরীক্ষা করাতে বলেন। কয়েকজন ভুলে অন্য জায়গা থেকে পরীক্ষা করালে ওই রিপোর্ট তিনি গ্রহণ করেননি।

জানতে চাইলে ডা. ফাতেমা আক্তার এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আমি কাউকে রেফার করিনি। এসব অভিযোগ মিথ্যা।

ওই দুটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে তার নামে কমিশন রাখার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোনো উত্তর না দিয়ে বলেন, মুঠোফোনে এসব কথা বলা যাবে না। আপনি আমার সঙ্গে কথা বলতে লিখিত আকারে আবেদন করেন।

লিখিত আকারে আবেদন করলে দেখা করা যাবে কিনা? এমন প্রশ্নে অবেদন করার পর ভেবে দেখবেন বলে জানান তিনি।

রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. লুৎফুন্নাহার বেগম বলেন, সরকারি নিয়োগের স্বাস্থ্য পরীক্ষা অবশ্যই সরকারি হাসপাতালে করার নিয়ম রয়েছে। ডা. ফাতেমা আক্তারের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হবে।