সরকারি খাস জমিতে ফ্ল্যাট বানাচ্ছেন রফিকুল! প্রশাসন জানে?

পঞ্চগড় সদর উপজেলার হাফিজাবাদ ইউনিয়নের পানিমাছপুকুরী আবাসন প্রকল্পের খাস জমি দখল গোপনে তোলা হচ্ছে ফ্ল্যাট। ওই আশ্রয়ণের রফিকুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি এই ফ্ল্যাট তুলছেন। প্রভাবশালী হওয়ায় স্থানীয়রা তার বিরুদ্ধে মুখ খুলছে না। চারপাশে উঁচু বেড়া দিয়ে ভেতরে জোরেশোরে চলছে ফ্ল্যাটের নির্মাণকাজ। প্রশাসন নির্মাণ কাজ বন্ধ করার নোটিশ দিলেও মানছেন না ওই ব্যক্তি।

সরেজমিন দেখা যায়, পানিমাছপুকুরী আশ্রয়ণের পূর্ব পাড়ের প্রথম বাড়িই ওই এলাকার মুক্তিযোদ্ধা গমির উদ্দিনের ছেলে রফিকুল ইসলামের। রফিকুল আশ্রয়ণের বরাদ্দ পাওয়া ঘরগুলো ঘেঁষেই তুলছেন ফ্ল্যাট বাড়ি। দৈর্ঘ্যে ৩৬ ফুট এবং প্রস্থে ৩২ ফুট। কাজও অনেকদূর এগিয়ে গেছে। কেবল ছাদ ঢালাই বাকি। বাইরে থেকে কেউ যেন বুঝতে না পারে সে জন্য বাঁশের চাটাই দিয়ে উঁচু করে বেড়া দেওয়া হয়েছে। ভেতরে চলছে মিস্ত্রিদের কর্মযজ্ঞ। চারপাশে ছড়িয়ে রয়েছে রফিকুলের পরিবারের লোকজন। বাইরের কেউ আসছে কি-না নজর রাখাই তাদের কাজ। একটু উঁচুতে দাঁড়িয়ে লক্ষ করলেই বোঝা যায় জায়গাটি আশ্রয়ণের খাস জমির মধ্যেই রয়েছে। প্রভাবশালী হওয়ায় রফিকুলের বিরুদ্ধে স্থানীয়রা সরাসরি কেউ কথা বলতে রাজি হননি। জানা যায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ প্রভাবশালীদের ম্যানেজ করেই কাজে হাত লাগিয়েছেন ওই ব্যক্তি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই আশ্রয়ণের এক বাসিন্দা বলেন, রফিকুল কোটিপতি মানুষ। তারপরও তাকে আশ্রয়ণে ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ঘর পাওয়ার পর এখন কৌশলে খাস জমি দখল করে ফ্ল্যাট তুলছে।

মানিমাছপুখুরী আশ্রয়ণ প্রকল্প সমবায় সমিতির সভাপতি তোফাজ্জল হক বলেন, আশ্রয়ণের জমি মাপযোগ থেকে এখন পর্যন্ত আমরা জানি ওই জমিটুকু আশ্রয়ণের ভেতরের খাস জমি। কিন্তু এখন রফিকুল হঠাৎ জমিটি তার কেনা দাবি করে ফ্ল্যাট তুলছে। প্রশাসন বিষয়টি জানে। প্রশাসন কাজ বন্ধ করার নির্দেশ দিলেও ভেতরে ভেতরে কাজ চলছে।

রফিকুল ইসলাম বলেন, আমার কেনা জমিতেই আমি ফ্ল্যাট তুলছি। এটি খাস জমি নয়। আশ্রয়ণের খাস জমিসংলগ্ন আমি ১৫ শতক জমি কিনেছি। সেই জমিতেই ফ্ল্যাট তুলছি। সদর এসিল্যান্ড অফিস থেকে আমাকে নোটিশ করেছে। নোটিশ পেয়ে আমরা কাজ বন্ধ রেখেছি। এ ছাড়া জমিটির সব কাগজপত্র আমি এসিল্যান্ড অফিসে জমা দিয়েছি।

হাফিজাবাদ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গোলাম মুছা কলিমুল্লা বলেন, তারা গোপনে কাজ শুরু করেছে। আমরা বিষয়টি জানতাম না। যখন অবকাঠামো দৃশ্যমান হয়েছে তখন আমরা জেনেছি। প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। জমি যেহেতু সরকারের তাই বিষয়টি প্রশাসনই দেখবে।

পঞ্চগড় সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফ হোসেন বলেন, খাস জমির ওপর ওই ফ্ল্যাটটি নির্মিত হচ্ছে। সেটি উচ্ছেদের জন্য অনুমতি চেয়ে জেলা প্রশাসক বরাবরে আবেদন করা হয়েছে। নির্দেশনা পেলেই সেটি উচ্ছেদ করা হবে।

পঞ্চগড়ের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আব্দুল মান্নান বলেন, আমরা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ওই ব্যক্তিকে দু-একদিনের মধ্যেই আরেকটি নোটিশ করব। সে নিজে থেকে সরে না গেলে আমরা প্রশাসনিকভাবে আইনি প্রক্রিয়ায় তাকে উচ্ছেদ করব।

 

সূত্রঃ কালের কণ্ঠ