সমালোচানায় শেষ হলো রাবির ভর্তি পরীক্ষা

নিজস্ব প্রতিবেদক:
জীব ও ভূ-বিজ্ঞান (এফ ইউনিট) এবং কৃষি অনুষদের (জি ইউনিট) পরীক্ষার মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে পাঁচ দিনব্যাপী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৮টা থেকে এফ ইউনিট এবং দুপুর আড়াইটা থেকে জি ইউনিটের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এদিন পরীক্ষার শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে দুইজনকে বহিস্কার করা হয়।

এদিকে, বুধবার একটি অনুষদের পরীক্ষার প্রশ্নে দুইটি ধর্মীয় উস্কানিমূলক প্রশ্ন ছিল বলে জানা গেছে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। তারা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটি প্রতিষ্ঠানের কাছে এরকম সাম্প্রদায়িক ও ধর্মীয় বিদ্বেষপূর্ণ মনোভাব কোনভাবেই কাম্য নয়। এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও এবার ছাত্রলীগের পর পরীক্ষা চলাকালীন ক্যাম্পাসে মানববন্ধন করেছে রাবি প্রগতিশীল ছাত্রজোট। এ ছাড়াও রাবি প্রক্টর অধ্যাপক ড. লুৎফর রহমানের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিজ বিভাগের শিক্ষার্থী দিয়ে পরীক্ষার হলে সহায়ক কর্মচারীর দায়িত্ব পালন করানোয় ব্যাপক সমালোচার মুখে পড়েন তিনি।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টায় ‘এফ-৩’ ইউনিটের তৃতীয় শিফটের পরীক্ষায় দেখাদেখি এবং কথা বলায় দুই শিক্ষার্থীকে বহিস্কার করা হয়েছে বলে জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. লুৎফর রহমান। তারা হলেন, জয়পুরহাটের সাকিব হাসান এবং নওগাঁর মান্দা থানার রুবেল হোসেন। তাদের দুজনই দ্বিতীয় বিজ্ঞান ভবনের ২৪৪ নম্বর কক্ষে পরীক্ষা দিচ্ছিলেন।


পরীক্ষার হলে কর্মচারীর ভূমিকায় শিক্ষার্থী
গত বুধবার বিজ্ঞান অনুষদের পরীক্ষায় (সি ইউনিট) গণিত বিভাগের তিন শিক্ষার্থীকে সহায়ক কর্মচারীর দায়িত্ব পালন করান রাবি প্রক্টর ও গণিত বিভাগের অধ্যাপক ড. লুৎফর রহমান। ভর্তি পরীক্ষার নীতিমালা অনুসারে পরীক্ষার হলে দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষক ও কর্মচারী ছাড়া অন্য কারো প্রবেশ নিষিদ্ধ। ওই তিন শিক্ষার্থী হলেন জাকির হোসেন, আব্দুর রহমান ও মো. সোহেল। তারা তিনজনই গণিত বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। এদের মধ্যে জাকির দ্বিতীয় বিজ্ঞান ভবনের ৩৩৪ নং কক্ষে এবং আব্দুর রহমান ও সোহেল তৃতীয় বিজ্ঞান ভবনের ৪২৪ ও ৪২৫ নং কক্ষে দায়িত্ব পালন করেন।

এতে সংশ্লিষ্ট অনেকের মনেই জালিয়াতির সন্দেহ জোরালো হয়। তারা বলছেন, ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রক্টর কখনোই এ ধরনের নিয়ম বহির্ভূত কাজ করতে পারেন না। তবে প্রক্টর বলছেন- ‘ওই তিনজনের অর্থনৈতিক সমস্যার কারণে পরীক্ষার হলে তাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এখানে কোন জালিয়াতির প্রশ্নই আসে না।’

প্রশ্নপত্রে ধর্মীয় বিদ্বেষের ইঙ্গিত
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, বুধবার দুপুর আড়াইটা থেকে চারটা পর্যন্ত চারুকলা অনুষদভূক্ত আই ইউনিটের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ওই পরীক্ষায় একটি সেটের দুইটি প্রশ্নের মাধ্যমে ধর্মীয় বিদ্বেষের ইঙ্গিত পাওয়া গেছে বলে অভিযোগ করেছেন অনেকেই। প্রশ্নের একটি হলো পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ গ্রন্থের নাম কি? এই প্রশ্নের অপশনে অপশনে কুরআনুল কারিম, বাইবেল, ইঞ্জিল ও গীতা ধর্মগ্রন্থের নাম ছিল। দ্বিতীয় প্রশ্নটি ছিল ‘মুসলমান রোহিঙ্গাদের উপর মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা সশস্ত্র হামলা চালায় কত তারিখে? সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন- এই প্রশ্ন দুটির মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের মত মুক্ত চিন্তার জায়গায় সুক্ষ্মভাবে সাম্প্রদায়িকতাকে টেনে আনা হয়েছে।

চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন. ‘এ ভুলটি ইচ্ছাকৃতভাবে হয়নি। তবে আমরা এ প্রশ্ন দুটিতে সবাইকে নম্বর দিয়ে দিবো।’

রাবি উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা সিল্কসিটি নিউজকে  বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় কোন ধর্মকেই ছোট করে দেখে না। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানে এমন প্রশ্ন করা কোনভাবেই উচিত হয়নি। প্রশ্নের ধরন দেখে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে আমি নিজেই লজ্জিত।’

নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও ছাত্রজোটের মানববন্ধন
এদিকে এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে দুপুর ২টায় কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে রাবি প্রগতিশীল ছাত্রজোটের নেতা-কর্মীরা। অথচ পরীক্ষা চলাকালীন ছাত্রলীগের মিছিলসহ বিভিন্ন কর্মসূচির প্রতিবাদ জানিয়েছে এই সংগঠনটি। এবার তারাই বিশ্ববিদ্যালয়ের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে এ কর্মসূচি পালন করে।

অনুমতির ব্যাপারে প্রক্টর সিল্কসিটি নিউজকে বলেন, ‘আমি তাদেরকে কোন অনুমতি দেইনি।’

বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সাধারণ সম্পাদক দিলীপ রায় বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একের পর অনিয়ম করে যাচ্ছে। এসব অনিয়ম আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তিকে ক্ষুন্ন করছে। তাই আমরা বাধ্য হয়ে প্রতিবাদে নেমেছি।’

গত ২২ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা শুরু হয়। নয়টি অনুষদ ও দুইটি ইনস্টিটিউটে মোট ৪ হাজার ৭১২টি আসনের বিপরীতে ৩ লক্ষ ১৬ হাজার ১২০ জন ভর্তিচ্ছু প্রতিযোগিতা করেন।

স/শ