সবুজ শিল্পায়নে সরকারের সহায়তা চায় খাত সংশ্লিষ্টরা

বাংলাদেশের টেক্সটাইল ও তৈরি পোশাক খাতের ১৫৭টি কারখানা ইতোমধ্যে সবুজ কারখানার স্বীকৃতি পেয়েছে। পাইপলাইনে আরও ৪০০ থেকে ৫০০ টি কারখানা রয়েছে। তবে যে সব নতুন কারখানা সবুজায়নে যুক্ত হচ্ছে তাদের সরকারেরনীতি সহায়তা দরকার বলে মনে করেন খাত সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া এই সবুজায়নে সরকারের যে দুই শতাংশ প্রণোদনা দেওয়ার কথা সেটি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে পেতেও অনেক বেগ পেতে হচ্ছে বলে জানায় ব্যবসায়ী ও কারখানা মালিকরা।

আজ রবিবার রাজধানীর ব্র্যাক ইন সেন্টারে ‘বাংলাদেশের বস্ত্র ও তৈরি পোশাক খাতে সবুজ শিল্পায়ন’ শীর্ষক আলোচনায় এসব বক্তব্য তুলে ধরেন বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ) সাবেক সভাপতি ফললুল হক ও বাংলাদেশ গামেন্টস ম্যানুফেকচারাস এক্সপোটার অ্যাসোসিয়েশনের (বিজেএমইএ) সভাপতি ফারুক হোসন। মূলত বেসরকারি সংস্থা সেন্টার ফল পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) এই আয়োজনটি করে।

অনুষ্ঠানে বিকেএমইএ সাবেক সভাপতি ফললুল হক বলেন, বাংলাদেশের শের টেক্সটাইল ও তৈরি পোশাকখাতের কারখানাগুলোতে সবুজায়ন অনেক আগে থেকে শুরু হয়েছে। আর এই সবুজায়ন কোনো বিদেশী ক্রেতাদের চাপে আমরা করেনি। পুরো প্রক্রিয়া হয়েছে কারখানা মালিকদের ব্যক্তিগত উদ্যোগের কারনে। আমাদের কেউ বাধ্য করেনি।

তিনি আরও বলেন, তবে হাতাশার বিষয় আমরা এই কাজে সরকারের তেমন কোনো সহযোগিতা পাচ্ছি না। সবুজায়নের জন্য কারখানা মালিকদের জন্য যে দুই শতাংশ প্রণোদনা দেওয়ার কথা সেটিও পেতে বেশ বেড় পেতে হচ্ছে। ফলে নতুনরা এই দিকে আগ্রহী হয় না। আরেকটি বিষয় সেটি হচ্ছে বিদেশী ক্রেতারা এই সবুজায়নের জন্য কোনো টাকা দিতে চায়না।

এসময় সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হোসেন বলেন, বাংলাদেশে সবুজ শিল্পায়ন বিষয়ে গবেষণার জন্য সিপিডি যে উদ্যোগটা নিয়েছে, সেটাকে বিজিএমইএর পক্ষ থেকে স্বাগত জানাচ্ছি। বিজিএমইএ অনেক আগে থেকেই সবুজ শিল্পায়ন নিয়ে কাজ করছে। আরও কাজ করতে চাই। ইতোমধ্যে ১৫৭টি কারখানা গ্রিন ফ্যাক্টরি হয়েছে। তার মধ্যে ৪৭টি প্লাটিনাম ও ৯৪টি গোল্ড সার্টিফিকেট পেয়েছে। প্রতি মাসে গ্রিন হিসেবে সার্টিফিকেট পাচ্ছে। আমরা প্রমাণ করে দেখিয়েছি, আমরা কাজ করতে চাই। শুধু সমালোচনা না করে ভালো কাজগুলো ফোকাস করাও জরুরি। তাহলেই আমরা এগিয়ে যাব।

গার্মেন্টের কাঁচামালের দাম অনেক বেড়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এর প্রভাব গার্মেন্টস মালিকদের ওপর বেশি পড়েছে। বায়ারদের কাছে পণ্যের দাম বাড়িয়ে নিয়েও রিকভারি হচ্ছে না। কাঁচামাল ও শিপিং কষ্ট বাড়ার কারণে আমাদের উৎপাদন খরচ অনেক বেড়ে গেছে। আপনারা শিপিং কষ্ট নিয়ে কথা বলেন না, সেখানে অনেকটা মনোপলি ব্যবসা চলছে। আশা করি সেটাও দেখবেন।

এর আগে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনায় ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘বিশ্ববাজারে বস্ত্র ও তৈরি পোশাকের অবস্থান আরও ভালো করতে হলে পরিবেশবান্ধব বা সবুজ কারখানার বিকল্প নেই। শ্রমিকের জীবনমানের বিষয়টিও বিবেচনায় নিতে হবে। এ জন্য প্রয়োজন এখন থেকেই সমন্বিত উদ্যোগ। ’

তিনি আরও বলেন, যেসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে সেগুলো হচ্ছে, দেশের অর্থনীতি ও তৈরি পোশাক খাতকে এগিয়ে নিতে নীতিসহায়তা ও অর্থনৈতিক সহায়ক পণ্যগুলো পর্যাপ্ত নয়। সবুজায়নের পথে কারখানা আধুনিকায়ন ও উৎপাদনশীলতার জন্য বিনিয়োগের অভাব রয়েছে। বিশেষ করে ছোট কারখানাগুলোর সে সক্ষমতা নেই বললেই চলে। আবার দীর্ঘদিন ধরে পোশাকপণ্যের দাম না বাড়ায় খাতটির উদ্যোক্তারাও আর্থিকভাবে আশানুরূপ সফলতা পাচ্ছেন না। কিন্তু পরিবেশবান্ধব কারখানা নির্মাণে দরকার বড় বিনিয়োগ। তাই গ্রিন ফ্যাক্টরি নির্মাণে আগ্রহে ভাটা পড়ছে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, বস্ত্র ও পোশাক খাতসহ সব ধরনের শিল্প খাতেরই সবুজায়ন চায় সরকার। সবচেয়ে বড় খাত হিসেবে বস্ত্র ও পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা কী ধরনের নীতিসহায়তা চান পথ-নকশাসহ সে বিষয়ে একটি লিখিত চিঠি পরিবেশ মন্ত্রণালয়ে দেওয়ার অনুরোধ জানান তিনি। এর মাধ্যমে আগামী বাজেটে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকেই চাহিদা জানানো হবে।

সিপিডি জানায়, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতে প্রায় ৪১ লাখ মানুষ নিয়োজিত যেখান থেকে প্রায় ৩২ বিলিয়ন ডলার আয় করে বাংলাদেশ। যা মোট রপ্তানির ৮৪ শতাংশের বেশি। রপ্তানির এই আয় বাড়াতে হলে বেশকিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে এ খাতে। এর মধ্যে অন্যতম হলো, আন্তঃজার্তিক নিয়ম মেনে শ্রম ও শ্রমিকের নায্যতা নিশ্চিত, কর্মপরিবেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাসহ দূষণ কমানো।

 

সূত্রঃ কালের কণ্ঠ