সবুজ উইকেটে চোটগ্রস্ত বাংলাদেশ

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

আপৎকালীন নেতৃত্বের ভার মাহমুদ উল্লাহর জন্য নতুন নয়। ২০১৮-র জানুয়ারিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ত্রিদেশীয় ওয়ানডে সিরিজের ফাইনালে বাঁ হাতের কনিষ্ঠাঙ্গুলে চোট পেয়ে মাঠের বাইরে ছিটকে পড়েছিলেন সাকিব আল হাসান। এর পরপরই লঙ্কানদের বিপক্ষে দুই টেস্টের সিরিজে নিয়মিত টেস্ট অধিনায়কের অনুপস্থিতিতে তাঁর ডেপুটি মাহমুদ নেতৃত্ব দিয়েছিলেন দলকে। সেবার দেশের মাটিতে অনুজ্জ্বল বাংলাদেশ এবং মাহমুদের সামনে এবার বিরুদ্ধ কন্ডিশনে আরো বড় চ্যালেঞ্জ নিয়ে অপেক্ষায় নিউজিল্যান্ড।

ক্রাইস্টচার্চে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ টেস্টে গিয়ে খেলার কথা আছে সাকিবের। এর আগে প্রথম দুই টেস্টে নেতৃত্বের জোয়াল মাহমুদের কাঁধেই। আগামীকাল বাংলাদেশ সময় ভোর ৪টায় শুরু হতে যাওয়া সিরিজের প্রথম টেস্টের ভেন্যু হ্যামিল্টনের সেডন পার্কে অবশ্য সুখস্মৃতি নিয়েই নামতে পারছেন আপৎকালীন অধিনায়ক। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ২০১৫-র বিশ্বকাপ ম্যাচে এ মাঠেই তুলে নিয়েছিলেন নিজের দ্বিতীয় ওয়ানডে সেঞ্চুরি। তাঁর প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরিও এ সেডন পার্কেই। ২০১০ সালের সফরের একমাত্র টেস্টে মাহমুদের ১১৫ রানের ইনিংস খেলেছিলেন। যাতে ভর দিয়েই প্রথম ইনিংসে ৪০০ পেরিয়েছিল বাংলাদেশ।

দ্বিতীয় ইনিংসে সেঞ্চুরি করা সাকিব আল হাসান ২০১৭-র সফরে ওয়েলিংটন টেস্টেও দেখেছিলেন নিজের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরির মুখ। ওই টেস্টে ২১৭ রানের ইনিংস খেলা সাকিব তো নেই-ই, ১৫৯ রানের ইনিংস খেলা মুশফিকুর রহিমকেও হ্যামিল্টনে পাওয়া নিয়ে আছে ঘোরতর সংশয়। একেই পাঁজরের চোটে ভুগছিলেন তিনি, এর সঙ্গে শেষ ওয়ানডেতে আঙুলের চোট যোগ হয়ে তাঁর অবস্থা এমনই জেরবার যে হেড কোচ স্টিভ রোডস হ্যামিল্টনে তাঁকে পাওয়ার আশা ছেড়েই দিয়েছেন একরকম।

তিনি বরং এই সুযোগে দলের ব্যাটিং গভীরতা প্রমাণের চ্যালেঞ্জই যেন ছুড়ে দিচ্ছেন শিষ্যদের। মুশফিককে নিয়ে তেমন আশার কথা শোনাতে না পারা এই ইংলিশ কোচের কাছে তাই এখন মোহাম্মদ মিঠুনকে পাওয়াই সুখবর। প্রথম দুই ওয়ানডেতে ফিফটি করা মিঠুন হ্যামস্ট্রিংয়ের চোটে খেলেননি শেষ ম্যাচটি। তবে হ্যামিল্টনে তাঁকে পাওয়ার নিশ্চয়তার পাশাপাশি মুশফিককে নিয়ে অনিশ্চয়তার কথাও বললেন রোডস, ‘মিঠুন ভালো অবস্থায়ই থাকবে বলে আশা করছি। তবে ঠিক নিশ্চিত নই যে মুশি কোন অবস্থায় (ম্যাচ শুরুর আগে) থাকবে। আমার তো মনে হচ্ছে ওকে নিয়ে সংশয়ই বেশি। তবে মিঠুনকে নিয়ে আমি আত্মবিশ্বাসী। যে দুটো ওয়ানডে সে খেলেছে, দুটোতেই রান পেয়েছে। নেটেও ওকে ভালোই লাগল দেখে। ও তৈরিই থাকবে।’

হ্যামিল্টনে মুশফিককে না পাওয়ার ঘোর আশঙ্কার মুখেও রোডস আশার আলো দেখাতে চাইলেন এই বলে, ‘একাদশে যে-ই থাকুক না, তাঁকে দেশের জন্য সেরাটা দিতে হবে। চোট পাবেই এবং তাতে খেলাও মিস করবে। তবে অনেক সময় কারো ইনজুরি কিন্তু দলের ব্যাটিং গভীরতারও একটি পরীক্ষা নিয়ে ফেলে।’ এই টেস্টে লিটন কুমার দাশকে সেই পরীক্ষায় উতরানোর চ্যালেঞ্জও দিলেন রোডস, ‘মুশফিক না খেললে লিটনকে উইকেটকিপিং করতে হবে। ও জানে ব্যাটিংয়েও দায়িত্ব নিতে হবে। লিটনও নিশ্চয়ই চাইবে নিজের সেরাটা দিয়ে প্রমাণ করতে। কারণ এটি তো ওর জন্যও একটি ভালো সুযোগ।’

যদিও ওয়ানডে সিরিজে ব্যাটিং যেমন বেহাল ছিল, তাতে মুশফিকের না থাকা মানে দলের অভিজ্ঞতাও অনেকখানি কমে যাওয়া। তার ওপর সেডন পার্কের কিউরেটর কার্ল জনসন যেমন জানিয়েছেন, সেই অনুযায়ী উইকেটে সবুজ ঘাসেরই আচ্ছাদন থাকার কথা। যা টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানদের কাজ আরো কঠিন করে দেওয়ার মতোই। পুরো ওয়ানডে সিরিজে টপ অর্ডারই হয়ে থেকেছে দুশ্চিন্তার প্রতিশব্দ। কারণ টেস্টে একই সঙ্গে সুইং, গতি এবং বাউন্স সামাল দেওয়ার কাজটি টপ অর্ডার ঠিকমতো করলেই না ভালো কিছুর সম্ভাবনা তৈরি হবে। তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ অবশ্য সেই ভরসা খুব একটা দিতে পারছে না।

নেপিয়ারের প্রথম ওয়ানডেতে ৯ ওভারের মধ্যেই ৪২ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে বসেছিল দল। ক্রাইস্টচার্চে হওয়া দ্বিতীয় ম্যাচেও ৩ উইকেট পড়েছিল দ্রুতই। ডানেডিনে শেষ ওয়ানডেতে ১০ ওভারের মধ্যে ৪০ রানে ৪ উইকেট খোয়ানো দলের কাজ হ্যামিল্টনের সবুজ উইকেট কঠিনতম করে দেবে নিশ্চিত। ট্রেন্ট বোল্ট ও টিম সাউদির নতুন বলের জুটির পর সফরকারী দলের ব্যাটসম্যানদের জীবন দুঃসহ করে তুলতে থাকবেন ম্যাট হেনরি ও নেইল ওয়াগনারও। এসব বাস্তবতা মেনেও আশায় বুক বেঁধে আছেন রোডস, ‘হ্যামিল্টনে সবুজ ঘাসের উইকেটই আমাদের জন্য অপেক্ষা করে আছে। সন্দেহ নেই যে প্রথম দিনটি বেশ কঠিনই হবে। নির্ভর করছে আমাদের ব্যাটসম্যানরা কেমন ব্যাটিং করে, তার ওপর। আশায় আছি, ব্যাটসম্যানরা যেন উইকেটে লম্বা সময় পার করে আসতে পারে।’

তা করতে হলে পেছনে ফেলতে হবে ওয়ানডেতে টপ অর্ডারের দুঃসহ স্মৃতিও। সেডন পার্কে সুখস্মৃতির অনুপ্রেরণায় ওয়ানডে সিরিজে ব্যর্থ টেস্টের আপৎকালীন অধিনায়ক মাহমুদ উল্লাহও নিশ্চয়ই সেটি চাইছেন খুব করে!