সন্তানের পিতৃপরিচয় না জানানোর সম্পূর্ণ অধিকার একজন মায়ের রয়েছে

সিল্কসিটি নিউজ ডেস্ক:

একার পরিচয়ে সন্তানকে পৃথিবীর আলো দেখানোর সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন টলিউডের লাস্যময়ী অভিনেত্রী ও তৃণমূল সাংসদ নুসরাত জাহান। পিতৃপরিচয় ছাড়া সন্তানের জন্ম দেওয়ায় অনেক সমালোচনা ও কটাক্ষ শুনতে হচ্ছে তাঁকে। বার বার টেনে আনা হয়েছে বিশেষ বন্ধু যশ দাশগুপ্তর নাম। কিন্তু, হাজার বিতর্কেও মুখেও এখনো কিচ্ছু বলেননি নুসরাত জাহান। হাসি মুখে মাথা উঁচু করে মুখোমুখি হয়েছেন কঠিন বাস্তবের। ট্রোলড হয়েছেন সোশ্যাল মিডিয়াতেও। তবুও সন্তানের পিতৃপরিচয় জানাননি তিনি।

একদিকে যখন সমালোচনার বন্যা বয়ে যাচ্ছে, তখনই কলকাতার সেলেব্রিটি সিঙ্গেল মায়েরা পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন নুসরাত জাহানের।

ভিজূয়াল আর্টিস্ট এলিনা বণিকের ডিভোর্স হয়েছিল ২০০৩ সালে। তার পরেও জীবনে এসেছিল ভালোবাসা। তবে বিয়ের দিকে এগোনো সম্ভব হয়নি তাঁদের। তিনি বলেন, ‘২০১০ সালে আমাদের প্রথম সন্তান গর্ভে আসে। কিন্তু মিসক্যারেজ হয়ে যায় কিছুদিনের মধ্যেই। ২০১১ সালে ফের গর্ভবতী হই। মেডিক্যাল রেস্ট্রিকশন থাকায় লোকচক্ষুর আড়ালে চলে যাই স্বেচ্ছায়। খানিকটা কুসংস্কারও ছিল। আমার প্রেগনেন্সির কথা কাউকে জানাতে চাইনি। ডেলিভারির সময়ে হাসপাতালে পিতৃপরিচয় জানতে চাওয়া হয়নি। তবে মেয়েকে স্কুলে ভর্তি করার সময়ে কিছু সমস্যায় পড়তে হয়েছিল।’ আজও এলিনা বণিক সিঙ্গেল মাদার। মেয়ে তার বাবার নাম জানে। কিন্তু প্রকাশ্যে আনতে চান না তাঁরা দু’জনই।

পরিচালক অনিন্দিতা সর্বাধিকারীও একজন গর্বিত সিঙ্গেল মাদার। আট বছর আগে ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন (আইভিএফ)-এর মাধ্যমে সন্তানের জন্ম দেন তিনি। নুসরত প্রসঙ্গে অনিন্দিতা বলেন, “একজন মায়ের সম্পূর্ণ অধিকার রয়েছে সন্তানের পিতৃপরিচয় দুনিয়াকে না জানানোর। মিডিয়ার লাইমলাইটে থেকে পাবলিক ফিগার হয়ে নুসরাতের মতো স্টার এমপির উচিত সব রকম হইহল্লা জাস্ট ইগনোর করা। আমি এমন অনেক নারীকেই চিনি যাঁরা এমন সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন এবং সমাজে স্বীকৃতিও পাচ্ছেন।”

২০১৫ সালে আইভিএফ-এর মাধ্যমে মা হয়েছেন আরেক সাহসিনী। সোয়ান সেন এক নামী ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের অ্যাসিসটেন্ট প্রফেসর। টাইমস অফ ইন্ডিয়াকে দেওয়া সাক্ষাত্কারে তিনি বলেন, “প্রতিদিন কাজের পর একান্ত আপন কারও জন্য বাড়ি ফিরতে ইচ্ছে করত। আইভিএফ আমার জন্য ন্যাচারাল চয়েস ছিল। পিতৃপরিচয় জানাতেও চাইনি আবার লুকিয়ে রাখতেও চাইনি। জাস্ট আলোচনা করতে চাইনি। আমার মেয়েকে বাবা-মায়ের নাম জানতে চাইলে ও আমার নামই করে।”

নুসরাত জাহানের পাশে দাঁড়িয়েছেন বাংলাদেশের বিতর্কিত ও নির্বাসিত লেখিকা তসলিমা নাসরিনও। সোশ্যাল মিডিয়ায় সরব হন তসলিমা নাসরিন। ফেসবুকে নুসরাতকে শুভেচ্ছা বার্তা জানিয়েছে তিনি তুলে ধরেন সমাজের প্রাগৈতিহাসিক গোঁড়ামিকেও। ‘সিঙ্গেল মাদার’ বিষয়টিকে আধুনিক সমাজ যে এখনও গ্রহণ করতে পারেনি, তা ফুটে উঠেছে তসলিমার পোস্ট করা এক কাল্পনিক কথোপকথনে। একই সঙ্গে উঠে এসে ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত এবং সন্তানধারণ নিয়ে কিছু উপলব্ধির প্রসঙ্গও।

তসলিমা লিখেছেন, ‘নুসরাত প্রতিষ্ঠিত মেয়ে। কারও দাসিবাঁদি নয়। সন্তানকে ভালো মানুষ করবে এ আমার বিশ্বাস।’ হাজার বিতর্কের মধ্যেই কোনও পিতার পরিচয় ছাড়াই নিজের সন্তানকে পৃথিবীতে নিয়ে আসার সাহস দেখিয়েছেন নুসরত। তাঁকে কুর্নিশ জানিয়েছে তসলিমা।

নিজেই প্রশ্ন রেখেছেন, ‘নুসরাত তো স্বামীর স্পার্ম ছাড়াই গর্ভধারণ করেছেন।’ জবাবে নিজেই লিখেছেন, ‘সেটা তাঁর ইচ্ছে। স্পার্ম কার সেটা বড় কথা নয়। তাঁর বাচ্চা নিতে ইচ্ছে করছে, সে নিচ্ছে। গর্ভে যে ধারণ করে, বাচ্চা মূলত তাঁর। একসময় তো স্পার্মের জন্য পুরুষের উপর নির্ভর করতে হবে না। মেয়েদের স্টেম সেল থেকে স্পার্ম তৈরি হতে পারে। মেয়েদের বোন ম্যারো থেকে স্পার্ম তৈরি হতে পারে।’

স/রি