সন্তানের জন্মদিনের পার্টিতে অভিভাবকের স্থান নেই কেন?

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

সন্তানের জন্মদিনের তথাকথিত পার্টিতে অভিভাবকরা কেন থাকেন না? আধুনিক সন্তানেরা চান না অভিভাবক থাকুক? নাকি আধুনিক অভিভাবকরা চান সন্তান নিজের মতো ফূর্তি করুক? আনন্দে কাটাক বন্ধু-বান্ধবীদের নিয়ে? অভিভাবক কিংবা সন্তান যে পক্ষের ইচ্ছেতেই হোক, এমন চর্চা সত্যিই উদ্বেগের কারণ আমাদের জন্য। পারিবারিক বন্ধনগুলো এতটাই আলগা হয়েছে। ঘরের ছেলের জন্মদিনে হয়তো কেক জোটে না বাবা মায়ের। উল্টো আদরের দুলালরা বন্ধু-বান্ধবী নিয়ে ফূর্তি করবে তেমনটাই চায় আধুনিক কিছু বাবা-মা।

 

গত ২৮ মার্চ রাজধানীর বনানীর ‘দ্য রেইন ট্রি’ হোটেলে সাফাত আহমেদ নামে এক বন্ধুর জন্মদিনের পার্টিতে গিয়ে তথাকথিত বন্ধুর সঙ্গীদের ফাঁদে পড়ে ধর্ষণের শিকার হন দুই তরুণী। অনেক বাধা-বিপত্তি-হুমকি উপেক্ষা করে, ঘটনার প্রায় ৪০ দিন পর বনানী থানায় মামলা করেন তাঁরা। মামলায় আসামি মোট পাঁচজন। আসামিরা হলেন- সাদনান সাফিক, তার বন্ধু সাফাত আহমেদ, নাঈম আশরাফ, সাফাতের ড্রাইভার বিল্লাল ও তাঁর দেহরক্ষী। ঘটনায় জড়িতরা সবাই অর্থ-বিত্তে ক্ষমতাধর। ফলে ক্ষমতা যেহেতু আছে, যা ইচ্ছে তাই করতে পারে- এমনটাই ছিল তাদের মনস্তত্বে।

 

তবে এ রকম একটা অপরাধের পর আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার হোসেন তাঁর সন্তান সাফাতের সমর্থনে যা বলেছেন সেটি আরো বেশি উদ্বেগজনক। একটি পত্রিকাকে তিনি বলেছেন- ‘আরে মিয়া, আমার পোলা আকাম (ধর্ষণ) করছে তো কি হইছে। জোয়ান পোলা একটু-আধটু তো এসব করবই। আমিও তো করি। আমার যৌবন কি শেষ হয়ে গেছে? আমি এখনো বুড়া হইনি।’

 

আরো অবাক করার মতো বিষয়- ইচ্ছের বিরুদ্ধে কোনো নারীর সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করা যে অপরাধ, তা মনে করে না বলে দাবি করেছে সাফাত আহমেদ। তার ভাষ্য, তারা মেয়ে বন্ধুদের সঙ্গে প্রায়ই পার্টিতে এমনটা করে থাকে।

 

যে পরিবেশে সাফাত বেড়ে উঠেছে তা কোনো সুস্থ্ ও স্বাভাবিক পরিবেশ নয়। বেশি অর্থের কারণে খুব সইজেই বখে গিয়েছিল অপরাধীরা। সুতরাং, একটা বিষয় পরিষ্কার অর্থবিত্তে সমৃদ্ধ হলে যে আচার-আচরণ কিংবা নৈতিক শিক্ষায় সমৃদ্ধ হবে তেমনটা সঠিক নয়। বরং এই ঘটনার মাধ্যমেই পরিষ্কার একটা বিষয়- অর্থবিত্ত থাকলেও পরিবার গড়ে তুলতে পারেননি দিলদার হোসেন। নিজে তো নয়, সন্তানকেও দিতে পারেননি সুশিক্ষা, নৈতিকতার শিক্ষা। উল্টো অনৈতিক ব্যাপারগুলোকেও দিয়েছেন সমর্থন।

 

কেবল বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই অপরাধ দূর করা সম্ভব নয়। হয়তো সাফাত এবং তার সহযোগীরা বিচারের মুখোমুখি হয়ে সাজা পাবে। কিন্তু প্রতিনিয়তই বেড়ে উঠছে যে সাফাতরা, তাদের থামাবে কে?

 

সাফাতের মতো আরো বহু সন্তান তাদের অভিভাবকের দেওয়া ভ্রান্ত দিকনির্দেশনা আর অনৈতিক শিক্ষায় বেড়ে উঠছে। অর্থবিত্তের প্রভাবে করে যাচ্ছে নানা অপকর্ম। নেই শেকড়ের শিক্ষা। পারিবারিক আবহ। বেড়ে উঠছে ভীষণ বিচ্ছিন্নতায়। এভাবে চলতে থাকলে সমাজে অস্থিরতা তৈরি হতে বাধ্য। তাই অন্তত মা-বাবা তথা অভিভাবকের নতুন করে উপলব্ধি করার সময় এসেছে। নতুন করে ভাবতে হবে। সন্তানকে পারিবারিক বলয়েই দিতে হবে সুশিক্ষা। ভালো-মন্দ, ন্যায়-অন্যায় সবকিছুর শিক্ষা দিতে হবে পারিবারিকভাবেই। তখন হয়তো কোনো হোটেলে গিয়ে জন্মদিনের পার্টির নামে কোনো নারীকে অশ্রদ্ধা করবে না। বরং অভিভাবকের সঙ্গে পারিবারিক ভাবেই পালিত হবে সব উৎসব।

লেখক : সাংবাদিক

সূত্র: এনটিভি