সনপাপড়ি বিক্রেতা মোজাফ্ফরের সংগ্রামী জীবন

হারুন-অর-রশিদ রিহান:

বাবা-মা, দুই সন্তান আর স্ত্রী নিয়ে সনপাপড়ি বিক্রেতা মোজাফ্ফরের সংসার। প্রত্যেক মানুষের জীবন-সংসার থাকবে এটাই তো স্বাভাবিক। কিন্তু ৬ সদস্যের সংসার চালাতে শরীরে কিডনী রোগ বহন করে ১২ বছর থেকে সনপাপড়ি বিক্রি করতে পাবনার ঈশ্বরদি থেকে প্রতিদিন রাজশাহী শহরে আসছেন। কিডনী রোগের চিকিৎসা তো দূরের কথা নিজের সংসারের ঘানি টানতেই সনপাপড়ির বিক্রি করতে দুই-দুই চার ঘণ্টায় প্রায় ১৫০ কিলোমিটার পথ যাতায়াত করেন।  অসহায় মোজাফ্ফর মানুষের কাছে হাত পেতে সংসার চালাতে পারতো। কিন্তু তা না করে ১২ বছর ধরে এভাবেই সংগ্রামী জীবন অতিবাহিত করছেন।

রবিবার (০৭ ফেব্রুয়ারি) সকালে সনপাপড়ি বিক্রেতা মোজাফ্ফর হোসেনের সঙ্গে আলাপচারিতায় জানা গেল-  বয়স ৩৫ এ পৌঁছেছে তার। প্রতিদিন রাজশাহী সাহেব বাজার এলাকার আরডিএ মার্কেটের সামনে সনপাপড়ির পসরা সাজিয়ে বসেন। ১২ বছর ধরে সনপাপড়ি বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন তিনি। অন্য কোনো পেশায় না জড়িয়ে মোজাফ্ফর এটিকেই পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন।

তিনি জানান- বাবা-মা, স্ত্রী, দুই সন্তান নিয়ে ৬ জন সদস্যের সংসার তার। বসবাস করেন ঈশ্বরদিতে। বাবা-মা বয়সের ভারে ন্যূব্জ। কিছুই করতে পারেন না তারা। ছেলে স্থানীয় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র আর ছোট মেয়েটির বয়স ৩ বছর। ছোট বয়সেই ধরতে হয়েছে সংসারের হাল। তাই দশম শ্রেণির পর এসএসসি পরীক্ষাও দেয়া হয়নি তার। বর্তমানে তিনি কিডনি রোগে ভুগছেন।

মোজাফ্ফর বলেন, প্রতিদিন সকাল ৭টায় সনপাড়ড়ি মাথায় নিয়ে ঈশ্বরদী থেকে ট্রেন ধরে রাজশাহীতে আসেন এটি বিক্রি করতে।  আবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার ট্রেন ধরে বাসায় ফিরেন তিনি। এভাবেই বছরের পর বছর কেটে যাচ্ছে তার।

মোজাফ্ফর হোসেন বলেন, রাজশাহীর লোকজনের ব্যবহার খুবই আন্তরিক ও ভালো। গেল ১২ বছর ধরে রাজশাহীর বিভিন্ন স্থানে সনপাপড়ি বিক্রি করতে তেমন কোন সমস্যা হয়নি। ছোট বড় বিভিন্ন বয়সের লোক আসেন আমার এখানে।করোনায় প্রভাবে বেচা বিক্রি ছিলো না বিক্রি এখনো কিছুটা কম্।

মোজাফ্ফর হোসেন সিল্কসিটিনিউজকে আরও বলেন, ঈশ্বরদি পাইকারি ফ্যাক্টরি থেকে সমপাপড়ি কিনে আনি। প্রতিটি পিস ৫ টাকা দরে বিক্রি করি।৫০টাকা দুপুরে খাওয়া ও ১২০টাকা পরিবহন খরচসহ   প্রতিদিন ১৭০ টাকা পড়ে যায়। দিনে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা লাভ হয়। সংসার চালাতে কষ্ট হয় তারপরও  কোনমতে চলছে সংসার।’ ‘কিডনির সমস্যায় থেকে ৪ বছর ধরে কাজ করতে কিছুটা কষ্ট হয়।ছেলেকে কষ্ট করে হরেও পড়াশুনা করাতে চাই।তারপরও পড়ালেখা করে সে ভালো কিছু করুক এটাই আমার চাওয়া।

উল্লেখ্য, সনপাপড়ি এক প্রকার হালকা মিষ্টিজাতীয় খাদ্যদ্রব্য। বিশেষ প্রক্রিয়ায় আটা, ডিম, দুধ, চিনি ও ঘিয়ের সংমিশ্রণে চুলের মত মিহি ও সরু করে শনপাপড়ি তৈরি করা হয়। অনেকটা বাদামী বর্ণ এবং সুতার মতো মিহি।  বিভিন্ন আকৃতিতে দোকানে দোকানে বা ফেরিওয়ালাদের কাছে পাওয়া যায় সনপাপড়ি। বাংলার গ্রাম থেকে গঞ্জে এর চাহিদা অনেক। তবে কালের বিবর্তনে এই সংস্কৃতি অনেকটা হারিয়ে যেতে বসেছে।

এএইচ/এস