সচল হচ্ছে ব্যবসা-বাণিজ্য, সঞ্চয়মুখী মানুষ

সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের নানা পদক্ষেপে করোনার ধাক্কা সামলে উঠছে দেশের অর্থনীতি। ক্রমেই সচল হচ্ছে ব্যবসা-বাণিজ্য। মানুষ আবার অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত হচ্ছেন, ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয়ও করছেন। এতে একদিকে ব্যাংকে বাড়ছে আমানতের পরিমাণ, অন্যদিকে নিরাপদ বিনিয়োগের উৎস সঞ্চয়পত্র বিক্রিতেও চাঙ্গাভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

প্রাপ্ত তথ্য বলছে, গত আগস্টে ব্যাংকগুলোতে আমানতের বার্ষিক প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৩ শতাংশ। এটি গত সাড়ে তিন বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। অন্যদিকে নানা কড়াকড়ির পরও গত তিন মাসে সঞ্চয়পত্র বিক্রি বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। অর্থাৎ মানুষ আবার সঞ্চয়মুখী হচ্ছে।

এ ব্যাপারে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম  বলেন, ‘আমাদের দেশের মানুষের সঞ্চয় ও বিনিয়োগ করার জায়গা খুবই সীমিত। শেয়ারবাজারে দৈন্যদশা লেগেই আছে। সঞ্চয়পত্রে মুনাফার হার একটু বেশি হলেও সম্প্রতি সময়ে নানা কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। ফলে সুদের হার কম হলেও ব্যাংকেই টাকা রাখতে বাধ্য হচ্ছে মানুষ। তা ছাড়া বাড়িতে যে টাকা-পয়সা রাখবে, সেটাও সম্ভব না। কারণ চুরি-ডাকাতির ভয় আছে।’

গত মার্চ থেকে দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর স্থবির হতে শুরু করে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড। টানা ৬৬ দিনের সাধারণ ছুটিতে উৎপাদন ও বিনিয়োগের চাকা ছিল প্রায় বন্ধ। এতে অনেকেরই আয়-রোজগারের পথ বন্ধ হয়ে যায়। এ সময়ে নিম্নবিত্ত ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের সঞ্চয় দূরে থাক, সংসারের চাকা ঘোরাতেই হিমশিম খেতে হয়েছে। অনেকেই বিদ্যমান সঞ্চয় ভেঙে খেতে বাধ্য হয়েছেন। এতে ব্যাংকের আমানত ও সঞ্চয়পত্র বিক্রি দুটিই অস্বাভাবিকভাবে কমে গিয়েছিল। তবে করোনা ভীতি কাটিয়ে মানুষ আবার অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত হওয়ায় ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনীতিতে গতি ফিরছে। ফলে ব্যাংকে বাড়ছে আমানতের পরিমাণ। সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগও বাড়ছে কাঙ্ক্ষিত হারের চেয়ে অনেক বেশি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ  বলেন, করোনার কারণে অনেকেই চাকরি হারিয়েছিলেন। অনেকেরই বেতন কমে গিয়েছিল বা বন্ধ ছিল। এখন পরিস্থিতি ক্রমেই স্বাভাবিক হওয়ায় লোকজন আবার অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত হচ্ছেন। ফলে এসব মানুষের অনেকেই ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে আবার সঞ্চয় করছেন। অন্যদিকে ব্যবসা-বাণিজ্য পুরোপুরি স্বাভাবিক না হওয়ায় অনেকেই এখন নতুন বিনিয়োগে যাচ্ছেন না। আবার করোনার সময়ে যাঁদের ব্যবসা ভালো হয়েছে, তাঁরা ব্যবসা সম্প্রসারণে আগ্রহ কম দেখাচ্ছেন। এসব উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীর টাকাও সঞ্চয়পত্র ও ব্যাংকে আমানত হিসেবে ঢুকতে পারে। এ ছাড়া প্রবাসী আয়ের একটা অংশও সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ ও ব্যাংকে আমানত হিসেবে আসছে।

গত বছরের জুলাই থেকে সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে কড়াকড়ি ও পুঁজিবাজারে টালমাটাল পরিস্থিতিতে মানুষের মধ্যে ব্যাংকে টাকা রাখার প্রবণতা বেড়েছিল। তবে করোনার আঘাতে মানুষের আয় কমায় ব্যাংকগুলোর জন্য নতুন আমানত পাওয়ার পথ সংকুচিত হয়ে পড়ে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, দেশে করোনার আঘাত আসার আগের মাস ফেব্রুয়ারিতে ব্যাংকিং খাতে আমানতের বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ছিল ১২.৮২ শতাংশ। গত জুনে সেই প্রবৃদ্ধি (বার্ষিক) নেমে আসে ১০.৯৪ শতাংশে। অর্থাৎ গত মার্চ থেকে জুন এই চার মাসে আমানতের প্রবৃদ্ধি প্রায় ১.৮৮ শতাংশ কমে গিয়েছিল। তবে জুলাই ও আগস্টে তা অধিক হারে বেড়েছে। গত জুলাইতে আমানতের বার্ষিক প্রবৃদ্ধি বেড়ে হয় ১১.৪৩ শতাংশ। আর আগস্টে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩ শতাংশ। এটি গত সাড়ে তিন বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর আগে ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে আমানতের বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ছিল ১৩.০৯ শতাংশ।

 

সূত্রঃ কালের কণ্ঠ