সকলের শুভবুদ্ধির উদয় হোক

প্রতিবার পূজা শেষে আমার সনাতন ধর্মের বন্ধু, বড় ভাই, ছোট ভাই ও বোনেরা- আমার জন্য আলাদা করে নাড়ু বানিয়ে নিয়ে আসে! ঈদের সময় ওরাও মাঝেমাঝে বেড়াতে আসে আমার বাসায়! এই সম্প্রীতি সেই ছোটকাল থেকে দেখে বড় হয়েছি।

যখন ক্লাস সিক্সে পড়তাম তখন পূজার আয়োজন শেষ হলেই বন্ধু শ্রী ভাস্কর আচার্য্যের বাসায় যেতাম, কারণ আন্টি আমাদের জন্য নানা রকমের খাবার বানিয়ে রাখতেন! ভাস্করের বাবার নাম ছিল শ্রী করুনাময় আচার্য্য! আংকেল আমার হাতে একদিন আমাদের প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ মোস্তফা (স.) এর একটি বই দেখে আমাকে বললেন, তিনি মহামানব ছিলেন। এই পৃথিবীতে এরুপ মহামানব আর আসবে না! কি প্রগাঢ় শ্রদ্ধা অন্য ধর্মের প্রতি! একরাশ মুগ্ধতা নিয়ে তাঁর কথা শুনতাম!

মজাটা কোথায় জানেন, আমার অন্য বন্ধুদের বাবার নাম আমার মনে নেই, কিন্তু ভাস্কর যাকে আমরা ড. জন বলে ডাকতাম তার বাবার নাম আমার মনে রয়েছে, কারণ তিনি আমাকে ছোটবেলায় শিখিয়েছেন অন্যের ধর্মকে অসম্মান না করেও নিজ ধর্ম পালন করা যায়!

আমার মা- আমার হিন্দু, মুসলিম কোনো বন্ধুকে দুই চোখে দেখেননি। সবাইকে সমান আদর করতেন। এ জীবনে নিজের মাকে নামাজ মিস করতে দেখিনি। তিনি পবিত্র কোরআন অর্থসহ পড়তেন, হাদীস পড়তেন আমাদের জানাতেন, শোনাতেন। ধর্মীয় অনুশাসন দিয়েছেন আমাদের! কই কখনো তো আচরণে হিংস্রতা শেখাননি আমাদের। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের বিবেক দিয়েছেন তা প্রয়োগের জন্য! কবে থেকে আমাদের বুদ্ধি নাশ হয়ে এত নগ্নতায় রুপ নিল? এত প্রতিক্রিয়াশীল এত নোংরা মানসিকতা, এত কূপমণ্ডুকতা কবে আমাদের ঘিরে ধরলো!?

স্বয়ং রাসূলে করীম (স.) অন্য ধর্মাবলম্বীদের সাথে ন্যায়বিচার করতেন, অসম্মান করতেন না! সেই ধর্মের হয়ে রাসূলের ক্ষমা প্রদর্শন, ন্যায়বিচার, সুশাসন কোনোকিছুকেই আমলে না নিয়ে শুধু হিংস্রতাকে বেছে নিয়েছেন আপনারা! এই অযাচিত জঘন্য আচরণের জন্য আপনাদের প্রতি একরাশ ঘৃণা ও ধিক্কার জানিয়ে গেলাম।

সবসময় জোশে না জেগে মাঝে মাঝে প্রকৃত আমল করার চেষ্টা করেন দয়া করে। জোশে না লাফিয়ে একটু পবিত্র কোরআন ও হাদীস অর্থসহ পড়েন! তাহলে অসভ্যতা অনেকাংশে কমে যাবে। সাথে নিজের মত অজ্ঞানতায় পূর্ণদেরও শেখাতে পারবেন!

শেষ বিচার আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, শেষ বিচারে আপনাদের এই কূপমণ্ডুকতা এবং ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি আপনাদের কোথায় নেবে, সেটা এখন ভাবতে পারবেন না জানি! তবে জেনে রাখুন রাসূল বলেছেন, এই বাড়াবাড়ি ও অন্য ধর্মের প্রতি অসহনশীল মানবের প্রতি তিনি বিমুখতাই প্রদর্শন করবেন শেষ বিচারে।

আমার সনাতন ধর্মাবলম্বী ভাই, বোন ও বন্ধুদের প্রতি আমি আন্তরিক দুঃখ প্রকাশ করছি! আগামী নিশ্চয়ই আরও সুন্দর হবে। কূপমণ্ডুকতায় পূর্ণরা কোনঠাসা হবে, প্রকৃতজনরা সম্মুখসারিতে থাকবেন বলে আমি বিশ্বাস করতে চাই।
শুভ রাত্রি
(সকলের শুভবুদ্ধির উদয় হোক)

লেখক : এডিসি, ক্যান্টনমেন্ট ও খিলক্ষেত, ডিএমপি।

 

সূত্রঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন