সংকট দীর্ঘায়িত হলে অর্থনীতি স্থবির হওয়ার আশঙ্কা ব্যবসায়ীদের

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্কঃ

গ্যাস-বিদ্যুতের সংকটে চ্যালেঞ্জের মুখে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য। এখনই জ্বালানির বিকল্প উৎস সন্ধানের কথা বলছেন বড় ব্যবসায়ীরা। আর ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা বলছেন, রাত ৮টায় দোকানপাট বন্ধের কারণে প্রায় ৭০ শতাংশ দোকানে বেচাকেনাই হচ্ছে না। বিক্রি না থাকলেও বহন করতে হচ্ছে কর্মচারীর বেতন, বিদ্যুৎ বিল ও দোকান ভাড়াসহ অন্যান্য খরচ। এতে চরম অর্থ সংকটে পড়েছেন তারা। লোডশেডিং থেকে সরে এসে জ্বালানি তেলের মূল্য সমন্বয় করার কথা বলছেন দেশের ক্ষুদ্র ও অতি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। এ সংকট দীর্ঘায়িত হলে অর্থনীতি স্থবির হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ী নেতারা।

২০২১-২২ অর্থবছর শেষ হয়েছে রেকর্ড ৫২ বিলিয়ন বা পাঁচ হাজার দুইশ ৮ কোটি ডলারের রপ্তানি আয় দিয়ে। এর মধ্যে চার হাজার ৯১০ কোটি ডলার এসেছে তৈরি পোশাকের ওভেন ও নিটওয়্যার, হোমটেক্সটাইল, হিমায়িত ও জীবন্ত মাছ, কৃষিজাত পণ্য, পাট ও পাটজাতপণ্য, চামড়া ও চামড়াপণ্য এবং প্রকৌশল পণ্য থেকে। আর বাকি সাতশ পণ্য রপ্তানি থেকে এসেছে মাত্র ২৯৯ কোটি ডলার। অন্যদিকে সদ্য বিদায়ী জুলাই মাসে নানা বিধিনিষেধের কারণে আমদানি ঋণপত্র খোলা কমেছে, বেড়েছে প্রবাসী আয়। এসব কারণে ডলারের ওপর চাপ কিছুটা কমবে এমন আশা সংশ্লিষ্টদের।

তবে রপ্তানির এমন আশার মধ্যেই গ্যাস-বিদ্যুতের সংকট তৈরি হয়েছে। গত ১৯ জুলাই থেকে কমানো হয়েছে বিদ্যুৎ সরবরাহ। এলাকাভিত্তিক লোডশেডিং, তেল দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন স্থগিত ও অফিসের কিছু কার্যক্রম ভার্চুয়ালি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। সপ্তাহে একদিন পেট্রল পাম্প বন্ধ রাখা হচ্ছে। গ্যাস সংকটের কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় লোডশেডিং করতে হচ্ছে। কবে নাগাদ পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে সে ব্যাপারে নিশ্চিত না কেউই। সরকার সংশ্লিষ্টরা বলছেন সেপ্টেম্বর থেকে লোডশেডিং কমে আসবে। গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুতের অবস্থা ভয়াবহ।

jagonews24

লোডশেডিং বন্ধ করে মার্কেট, বিপণিবিতান ও দোকানপাট, অফিস এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সূচিতে পরিবর্তন আনার পরামর্শ বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির। সমিতি বলছে, সরকার এ উদ্যোগ নিলে যানজট কমবে, কর্মঘণ্টা বাড়বে, জ্বালানি তেল সাশ্রয় হবে। লোডশেডিং না করে মার্কেট ও দোকান দুপুর ১২টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা রাখা, অফিস টাইম সাড়ে ৭টা থেকে বিকেল ৩টা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সকাল ৯টা-৪টা পর্যন্ত করলে যানজট কমে আসবে, কর্মঘণ্টা বাড়বে ও জ্বালানি সাশ্রয় হবে।

সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, রাত ৮টার মধ্যে দোকানপাট বন্ধ করা এবং দিনে এক’দুই ঘণ্টা লোডশেডিং, ক্ষুদ্র ও অতি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য ‘মড়ার উপর খাড়ার ঘাঁ’। তাছাড়া প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ব্যবসাবান্ধব বাংলাদেশ গড়ার পথে এটি বড় বাধা।

তিনি বলেন, মাগরিবের নামাজ এখন সন্ধ্যা ৭টা ১৫ মিনিটে শেষ হয়। রাত ৮টায় দোকানপাট বন্ধের কারণে ৭০ শতাংশ দোকানে বেচাকেনাই শুরু হয় না। এতে চরম অর্থ সংকটে তৈরি হচ্ছে।

তবে চলমান বিদ্যুৎ রেশনিংয়ে শিল্প ও কৃষিখাত অগ্রাধিকার পাবে বলে জানানো হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বৃহস্পতিবার ব্যবসায়ীদের বলেন, ইউক্রেন সংকটের কারণে বিশ্বজুড়েই জ্বালানি সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। আপদকালীন পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিদ্যুৎ রেশনিংয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কৃষি ও শিল্পখাতে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ অব্যাহত রাখতেই এ পরিকল্পনা। আবাসিক গ্রাহকদের সাময়িক অসুবিধা মেনে নিতে হবে।

jagonews24

আবাসিক এলাকায় বিদ্যুতের সমস্যা তৈরিতে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে আবাসিক এলাকায় থাকা ছোট ছোট কারখানায়। অনেক কারখানায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা বন্ধ থাকছে উৎপাদন। বিশেষ করে সাব-কন্ট্রাক্ট কারখানাই বেশি যারা বড় বড় কারখানার সঙ্গে কন্ট্রাক্টে কাজ করে। তারা সময়মতো মালামাল সরবরাহ করতে পারছে না। বাধ্য হয়ে কারখানা শ্রমিকদের অতিরিক্ত সময় কারখানায় রাখছেন ছোট কারখানা মালিকরা।

মালিবাগ সাব-কন্ট্রাক্ট কারখানায় কাজ করেন মারজিয়া। তিনি বলেন, সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত আগে কাজ করতাম। এখন বিদ্যুতের সমস্যার কারণে মালিক শিপমেন্ট দিতে পারছে না। তাই আমরা রাত ১০টা পর্যন্ত কাজ করছি। সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও কাজ করতে হচ্ছে।

এ নিয়ে এক আলোচনায় প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব ড. আহমদ কায়কাউস জানান, শিল্প ও সেবাখাতে আলাদা নজর আছে সরকারের। বিদ্যুৎ রেশনিংয়ে শিল্প এলাকা বিবেচনায় লোডশেডিং হলেও গৃহস্থালি এলাকায় কিছু শিল্পকারখানা আছে। এ কারণে এসব কারখানায় লোডশেডিং পোহাতে হয়। লোডশেডিংয়ের কারণে কোনো কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে।

এসব বিষয়ে এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, পরিবেশ ঠিক রেখে কয়লা থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে জোর দেওয়া প্রয়োজন। বিশ্বের অনেক দেশে এমনটা হচ্ছে। শিল্পোন্নত দেশগুলোর অনেকেই কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে ফিরে যাচ্ছে। বাংলাদেশেরও উচিত দেশে কয়লা অনুসন্ধান ও উত্তোলনে জোর দেওয়া। বাপেক্সকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। সংকট দীর্ঘমেয়াদি হলে অর্থনীতিতে স্থবিরতা তৈরি হবে।

 

সুত্রঃ জাগো নিউজ