শ্রেষ্ঠা পাবে না মায়ের আদর, ইফাত পিতৃস্নেহ

মো. মঞ্জুরুল আলম মাসুম, বাগাতিপাড়া:
এখনও একটু পর পর মায়ের খোঁজ করছে শ্রেষ্ঠা। বাবার কাছে জানতে চাইছে, মা কোথায়? বাকরুদ্ধ বাবা বিধান কুমার স্মরণের কাছে নেই কন্যার প্রশ্নের কোন উত্তর। চিরদিনের জন্য জন্মদাতা বাবার কোল হারিয়ে ফেলার টানটা বোধহয় একইরকম। বোঝার মতো বয়স না হলেও ছোট্ট ইফাতও থেমে থেমে কাঁদছে। নিয়তি যেন চরম নির্দয় আচরণ করল নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার পাকা ইউনিয়নের দুই অবুঝ শিশু শ্রেষ্ঠা রায় (২) ও ইফাত হাসনাতের (৮ মাস) প্রতি। বুঝে উঠার আগেই একজন হারিয়ে ফেলল মা, আরেকজন বাবার স্নেহমোথিত কোল।

শনিবার ভোর রাতের ঝড়ে নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার পাঁকা ইউনিয়নের দিয়ারপাড়া গ্রামে লিচু বাগান পাহারারত অবস্থায় বজ্রপাতে নিহত হন নাট্যকর্মী আবু হাসনাত ভুলু (৩৭)। একই দিন সন্ধ্যা রাতে ব্রেইন স্ট্রোকে মৃত্যু হয় পার্শ¦বর্তী কৃষ্ণপুড় গ্রামের কলেজ শিক্ষক বিধান কুমার স্মরণের স্ত্রী শাপলা রায়। নিহত আবুল হাসনাত ভুলুর শিশুপুত্র ইফাত হাসনাত ও শাপলা রায়ের শিশুকন্য শ্রেষ্ঠা রায়। ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা মেনে শনিবার দুপুরে আবুল হাসনাতের দাফন ও রোববার সকালে শাপলা রায়ের শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। দুই মৃত্যুর ঘটনায় দুই শিশু এতিম হওয়ায় পুরো এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
রোববার বিকেলে দিয়ারপাড়া গ্রামে আবুল হাসনাত ভুলুর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, পুরো পরিবার শোকে স্তব্ধ। স্বামীর মৃত্যু এখনও মেনে নিতে পারছেন না স্ত্রী নার্গিস আক্তার।
তিন ছেলের দুইজনকে হারিয়ে ভেঙ্গে পড়েছেন বাবা জামাল উদ্দীন। তিনি বলেন, ‘নাট্যচর্চার পাশাপাশি কৃষিকাজ করে মেঝভাই জাহাঙ্গীর আলমের সাথে সংসার চালাতেন ছোট ছেলে ভুলু। এখন সে শুধুই স্মৃতি। ভুলুর সন্তান চিরদিনের জন্য পিতৃস্নেহ থেকে বঞ্চিত হল।’
পারকুঠি গ্রামে বিধান কুমার স্মরণের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির উঠানে খেলা করছে শিশুকন্য শ্রেষ্ঠা। কিছুক্ষন আগে বাড়ি থেকে চিরবিদায় নিয়েছে মা, সে বোঝেনা। তাই জ্যাঠা, ঠাকুমা আর বাবাকে দেখলেই করছে মায়ের খোঁজ।
নাট্যকর্মী ভুলু ও শিক্ষক বিধানের পরিবারের ঘনিষ্ঠজন স্থানীয় ব্যবসায়ী আল আফতাব খান সুইট। তিনি জানান, একই দিনে পাশাপাশি দুটি গ্রামে দুটি শিশুর এতিম হওয়া খুবই কষ্টের। মা-বাবার মৃত্যুতে অবুঝ দুই শিশুর ভবিষ্যত অন্ধকার হয়ে গেল।

স্থানীয় ১নং পাঁকা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন বলেন,’ব্যক্তিগত নাট্যকর্মী ভুলু ও শিক্ষক বিধানের পরিবারকে চিনি। পরিবার দুটির দুই সন্তানের কথা ভেবে খারাপ লাগছে। তবুও সান্ত্বনা ছাড়া দেবার কিছুই নেই।’

স/শা