শেয়ারবাজারে ভয়াবহ বিপর্যয়

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

ভয়াবহ বিপর্যয়ের কবলে পড়েছে দেশের শেয়ারবাজার। প্রতিদিনই বড় দরপতন হচ্ছে। চলতি সপ্তাহে লেনদেন হওয়া চার কার্যদিবসেই বড় দরপতন হওয়ায় দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক কমেছে প্রায় আড়াইশ’ পয়েন্ট।

একই সঙ্গে দামের পতন হয়েছে সিংহভাগ প্রতিষ্ঠানেরই। তবে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বিক্রি করছেন বিধায় এমন পতন হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। ভয়াবহ এমন পতনের ফলে প্রতিনিয়তই বেড়ে চলেছে পুঁজিহারা বিনিয়োগকারীদের আর্তনাদ। কিন্তু তারা তাদের বিনিয়োগ করা পুঁজি রক্ষার কোনো উপায় পাচ্ছেন না। এতে মানসিকভাবেও ভেঙে পড়েছেন অনেক বিনিয়োগকারী।

আগের তিন কার্যদিবসের ধারাবাহিকতায় বুধবারও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেনে অংশ নেয়া প্রায় সব প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমেছে। এদিন ডিএসইতে মাত্র ৫১টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ২৪৯টির। আর ৫১টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। এতে ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৫৩ পয়েন্ট কমে চার হাজার ২২৮ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। এর মাধ্যমে টানা চার দিনের বড় পতনে ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক কমেছে ২৩১ পয়েন্ট। এতে ২০১৬ সালের ২ মে’র পর সূচকটি সর্বনিম্ন অবস্থানে নেমে গেছে।

জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, শেয়ারবাজারের সংকট একদিনের নয়। অনেকদিন থেকে চলে আসছে। তিনি বলেন, যে যেভাবেই বিশ্লেষণ করুক, মূল সমস্যা হল এ বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা নেই। কারণ বিভিন্ন সময়ে যারা বিনিয়োগকারীদের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে, তাদের বিচার হয়নি। ফলে আস্থা ফিরে আনতে কাজ করতে হবে। এক্ষেত্রে সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে। অর্থাৎ অনিয়মের সঙ্গে জড়িতরা যত শক্তিশালী হোক এবং যে পদেই থাকুক তাদের আইনের আওতায় এনে বিচার করতে হবে। অর্থাৎ বিনিয়োগকারীদের নিশ্চয়তা দিতে হবে। কারসাজির মাধ্যমে কেউ তার পুঁজি হাতিয়ে নিলে তার বিচার হয়। এছাড়াও দুর্বল তালিকাভুক্তি নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি।

বাজার বিশ্লেষকরা বলেছেন, বিনিয়োগকারীদের আস্থা তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। বাজারের ওপর বিনিয়োগকারীদের আস্থা না থাকায় এমন পতন হচ্ছে। এ দরপতনের যুক্তিসঙ্গত কোনো কারণ নেই। বর্তমান দরপতনের চিত্র দেখে মনে হচ্ছে, বড় বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ শেয়ার বিক্রির চাপ বাড়াচ্ছে। হতে পারে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বিক্রি করছেন। আমেরিকা ও ইরানের মধ্যকার অস্থিরতা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক সৃষ্টি করতে পারে। তারা আরও বলেন, আমাদের বাজারে বিদেশিদের বিনিয়োগ বেশি না হলেও, তারা যখন শেয়ার বিক্রি করেন তখন এক ধরনের আতঙ্ক দেখা দেয়। বড় বড় ব্রোকারেজ হাউস থেকেও শেয়ার বিক্রি করে দেয়া হয়; যা সার্বিক বাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। ডিএসইর এক সদস্য বলেন, শেয়ারবাজারে এখন যে বড় দরপতন হচ্ছে তার মূল কারণ, বিদেশিরা শেয়ার বিক্রি করছেন। বিদেশিদের শেয়ার বিক্রির চাপ বাজার নিতে পারছে না। এর সঙ্গে নিয়ন্ত্রক সংস্থার ওপর বিনিয়োগকারীদের আস্থা না থাকায় দরপতন হচ্ছে। শেয়ারবাজারের এ পতনের বিষয়ে বিনিয়োগকারী সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘ইতিমধ্যে বিনিয়োগ করা অর্থের অর্ধেক নাই হয়ে গেছে। কোনোভাবেই লোকসান কাভার করতে পারছি না। এখন যেভাবে পতন শুরু হয়েছে বুঝতে পারছি না, পোর্টফোলিও কী অবস্থায় দাঁড়ায়। মানসিকভাবে প্রচণ্ড ভেঙে পড়েছি। যে শেয়ার কিনছি তাতেই লোকসান হচ্ছে।’ দরপতনের সঙ্গে শেয়ারবাজারে দেখা দিয়েছে লেনদেন খরা। ধারাবাহিকভাবে কমতে কমতে ডিএসইর লেনদেনও তলানিতে নেমেছে। শেষ ২০ কার্যদিবসের মধ্যে একদিনও ডিএসইর মোট লেনদেন ৪০০ কোটি টাকার ঘর স্পর্শ করতে পারেনি। বাজারটিতে লেনদেনের পরিমাণ ২০০-৩০০ কোটি টাকার ঘরে আটকে আছে। এদিন লেনদেন হয়েছে ২৭৯ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৩২৭ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। সে হিসাবে লেনদেন কমেছে ৪৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এদিন ডিএসইতে লেনদেনে শীর্ষে ছিল- লাফার্জ হোলসিম, এডিএন টেলিকম, স্টান্ডার্ড সিরামিক, ব্র্যাক ব্যাংক ও কেপিসিএল। দাম বৃদ্ধির শীর্ষে ছিল- এডিএন টেলিকম, ন্যাশনাল ফিড মিল, অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ, ব্র্যাক ব্যাংক ও স্টান্ডার্ড সিরামিক। দর হারানোর শীর্ষে ছিল- মেঘনাপেট, আনলিমা ইয়ার্ন, বিচ হ্যাচারি, নর্দার্ন ও প্রাইম টেক্সটাইল।

ডিএসইর মতো করুণ দশা বিরাজ করছে অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই)। বাজারটির সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১২২ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১২ হাজার ৮৮৭ পয়েন্টে। লেনদেন হয়েছে ১৪ কোটি ৫৩ লাখ টাকা।