শুরু করেছিলেন পাঁচ হাজার রুপি দিয়ে, আর এখন আয় দু’হাজার কোটি!

নাম তার হিতেশ। একজন ভারতীয় ব্যবসায়ী। তিনি যখন ব্যবসা শুরু করেছিলেন কোনও ক্ষেত্রে প্রথম হওয়ার কথা তিনি একবারও ভাবেননি। পেটের খিদে মেটানোই ছিল তার একমাত্র লক্ষ্য।

ব্যবসা শুরু করার পুঁজিও তার কাছে ছিল না। পাঁচ হাজার রুপি ধার নিয়ে ব্যবসা শুরু করেছিলেন হিতেশ।

গত ৩১ বছরের পরিশ্রম আর অধ্যাবসায় দিয়ে আজ সেই পাঁচ হাজার রুপির সংস্থার মালিক প্রতি বছর দু’হাজার কোটি রুপির ব্যবসা করছেন।

চীনকে কড়া প্রতিযোগিতায় ফেলে দিয়েছে তার সংস্থা। এত দিন ভারতের বাজারের সিংহভাগই চীনের দখলে ছিল। এবার তাতেই ভাগ বসিয়েছে হিতেশের সংস্থা।

প্রথম থেকে যদিও এই ব্যবসায় হাত লাগাননি তিনি। ১৯৮৯ সালে পাঁচ হাজার রুপির ধার নিয়ে তাপ পরিবহণ সংক্রান্ত যন্ত্রপাতির ব্যবসা শুরু করেন।

অনভিজ্ঞ হিতেশকে ব্যবসা দাঁড় করাতে পদে পদে বিপদে পড়তে হয়েছে। একে তো বাজার ধরার ব্যবসায়িক প্রতিযোগিতা, তার ওপর ব্যবসা শুরু করার নানা নিয়ম-কানুন।

চাপ নিতে না পেরে প্রথমে ভেঙে পড়েন তিনি। তাই বলে কঠিন রাস্তা ছেড়ে বেরিয়ে আসেননি। ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে এগিয়ে গিয়েছেন।

এগিয়েছিলেন বলেই এক সময় তাপ পরিবহণ সংক্রান্ত যন্ত্রপাতি তৈরির ব্যবসাতেও পসার জমিয়েছিলেন। কিন্তু এই ব্যবসায় বেশি দিন তার থাকতে ইচ্ছা করল না। নতুন কিছু শুরু করতে চাইছিলেন তিনি।

তিনি এমন কিছু করতে চাইছিলেন যা দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে কাজে লাগবে। ব্যবসার জন্য একবার জার্মানির একটি সৌর প্যানেল সম্মেলনে গিয়েছিলেন হিতেশ। সেই সম্মেলন থেকেই নতুন ব্যবসার দিশা পেয়ে যান।

পুরনো ব্যবসার পাশাপাশি ২০০৭ সালে গুজরাটের সুরতে সৌর প্যানেল তৈরির কারখানা খোলেন তিনি।

তিন বছর সৌর প্যানেল তৈরি করে হিতেশ বুঝেছিলেন ভারতের বাজারের অধিকাংশই চীনের নিয়ন্ত্রণে। তার মতো আরও অনেক ভারতীয় ব্যবসায়ী তো লড়াইয়ে ছিলেনই।

সৌর প্যানেল ব্যবসাতেও তাই কড়া প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হতে হয়েছে তাকে।

২০১০ সালে তাপ পরিবহণ সংক্রান্ত যন্ত্রপাতি উৎপাদনের কারখানা তিনি বিক্রি করে দেন। সেই অর্থ কাজে লাগান নতুন ব্যবসায়। সৌর প্যানেলের ব্যবসার ক্ষমতা ৩০ মেগাওয়াট থেকে উৎপাদন ক্ষমতা বাড়িয়ে নিয়ে যান আড়াইশ’ মেগাওয়াটে।

শুধু প্রতিযোগিতাই এই ব্যবসার বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে এমন একেবারেই নয়। সৌর প্যানেলের জন্য কাঁচামাল পাওয়াও ছিল কঠিন। যেমন যে ধরনের কাচের প্রয়োজন হয় তা ভারতে একমাত্র বোরোসিল সংস্থাই তৈরি করে থাকে। এই একটি সংস্থার ওপর ভরসা করে রয়েছে একাধিক সৌর প্যানেল তৈরির সংস্থা।

ফলে প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম কাঁচামাল দেশ থেকে পেতেন হিতেশ। বাকি সবই বিদেশ থেকে আমদানি করতে হত।

আরও একটি সমস্যা ছিল, গ্রাহকদের ভরসা অর্জন করা। তা সত্ত্বেও এখনও দেশের এক নম্বর সৌর প্যানেল তৈরির সংস্থা এটি। এই মহামারীর সময়েও দু’হাজার কোটি রুপির ব্যবসা করেছে হিতেশের সংস্থা।

 

সূত্রঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন