শুভেচ্ছায় ভাসছেন মলি রানী, লেখা-পড়ার দায়িত্ব নিলেন জেলা প্রশাসক

নিজস্ব প্রতিবেদক, নাটোর:
নাটোরের বাগাতিপাড়ায় একসঙ্গে মা-ছেলে এসএসসি পাশ করায় শুভেচ্ছায় ভাসছেন মা মলি রানী এবং ছেলে মৃন্ময় কুমার কুন্ডু। শনিবার সকালে উপজেলার গালিমপুরের নিজবাড়িতে পৃথক ভাবে মা-ছেলেকে অভিনন্দন জানাতে তাদের বাড়িতে যান স্থানীয় সংসদ সদস্য এ্যাডভোকেট আবুল কালাম ও জেলা প্রশাসক শাহিনা খাতুন। এসময় জেলা প্রশাসক শাহিনা খাতুন মা মলি রানীর উচ্চ শিক্ষার জন্য যাবতীয় পড়া-লেখার দায়িত্ব নেন।

 

সকাল ১০টার দিকে মলি রানীর গালিমপুরের নিজ বাড়িতে যান স্থানীয় সংসদ সদস্য এ্যাডভোকেট আবুল কালাম। এসময় মা-ছেলেকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান তিনি। এছাড়া সংসদ সদস্য মা ছেলের হাতে নগদ অর্থ উপহার দেন এবং পরবর্তীতে আরো সহায়তা প্রদানের আশ্বাস দেন। উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি আবুল হোসেন, সাধারন সম্পাদক সেকেন্দার রহমানসহ বিভিন্ন নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে বেলা ১১ টার দিকে নাটোর জেলা প্রশাসক শাহিনা খাতুন মিষ্টি ও ফুল নিয়ে উদ্যমী নারী মলি রাণীর বাড়িতে পৌঁছেন। বয়সের বাধাকে উপেক্ষা করে ছেলের সঙ্গে একসাথে এসএসসি পাস করায় তিনি মলি রাণীকে অভিনন্দন জানান। মা-ছেলের সফলতায় উভয়কে জেলা প্রশাসক তার নিজ হাতে তাদের মিষ্টি খাওয়ান এবং নিজেও তাদের হাতে মিষ্টি খান। এছাড়াও মলি রাণীর পড়ালেখা চালিয়ে যেতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগীতার আশ্বাস দেন। এসময় তার সঙ্গে ছিলেন অতিরিক্তি জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ড. চিত্রলেখা নাজনীন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লিয়াকত আলী সেখ, সহকারী কমিশনার (ভূমি) আহসান হাবিব জিতু, ওসি মনিরুল ইসলাম, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেনসহ শিক্ষা কর্মকর্তা এবং স্কুলের প্রধান শিক্ষকরা।

 
এদিকে এমপি ও জেলার প্রধান কর্মকর্তার আগমনে উচ্ছ্বসিত হন মা-ছেলে ও তাদের পরিবারের সদস্যরা। ছেলের বউয়ের সাফল্যে কর্তা ব্যাক্তিরা তাদের বাড়িতে আসায় গর্ব অনুভব করেছেন মলি রাণীর শাশুড়ি তুলশী বালা কুন্ডু। আর মলির স্বামী মিষ্টি ব্যবসায়ী দেবব্রত কুমার কুন্ডু ওরফে মিন্টু আগত মেহমানদেরকে নিজের বানানো মিষ্টি মুখ করাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। অন্যদিকে, সকালে এমপি-ডিসির আগমনের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই মলির বাড়িতে ভীড় জমান প্রতিবেশীরা।
উল্লেখ্য, ৩৫ বছর বয়সে ছেলের সঙ্গে পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ ৪ দশমিক ৫৪ পেয়ে এসএসসি পাস করেন মলি রাণী কুন্ডু এবং ছেলে মৃন্ময় কুমার কুন্ডু পান জিপিএ ৪ দশমিক ৪৩। দুজনেই কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের অধীনে পরীক্ষায় অংশ নেয়। মা মলি বাগাতিপাড়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ড্রেস মেকিং এন্ড টেইলারিং ট্রেডের এবং ছেলে মৃন্ময় বাগাতিপাড়া মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের বিল্ডিং মেইনটেনেন্স ট্রেডের শিক্ষার্থী ছিলেন।

 

শুক্রবার  তাদের পাসের খবর বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়। সে সময় মলি রাণী জানিয়েছিলেন, নবম শ্রেণীতে পড়া অবস্থায়  বাবা নঁওগা জেলার মান্দা উপজেলার প্রসাদপুরের অসিত কুন্ডু তাকে বিয়ে দিয়ে দেন। এরপর আর পড়ালেখা করার সুযোগ হয়নি। সংসারের চাপে গৃহিনীই রয়ে যান। এরই মধ্যে দুটি সন্তানের জন্ম দেন। ছোট ছেলের নাম পাপন কুন্ডু। ছেলেদের পড়ালেখা করাতে গিয়ে তিনি অনুভব করেন তার নিজের পড়ালেখা জানা দরকার। সেই ভাবনা থেকেই স্কুলে ভর্তি হন। চলতি বছর মা ও ছেলে একই বইয়ে পড়া-লেখা করে বাগাতিপাড়া ডিগ্রী কলেজ কেন্দ্রে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছেন।

স/অ