শুধু ট্রান্স নারী বলে আমার করোনা পরীক্ষা হয়নি

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

শুধু ট্রান্স নারী বলে তাঁর করোনা পরীক্ষা করা হচ্ছে না বলে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য নারী, শিশু ও সমাজকল্যাণ দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেছেন রাজ্য ‘ট্রান্সজেন্ডার ট্রান্সপার্সন বোর্ড’-এর সহ-অধ্যক্ষ, ঢোলা মহাবিদ্যালয়ের অধ্যাপিকা মানবী বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর অভিযোগ, শনিবার এবং রবিবার করোনা পরীক্ষার জন্য কলকাতা শহরের বিভিন্ন জায়গায় হন্যে হয়ে ফোন করেছেন। এমনকি বাঙুর হাসপাতালেও গিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর করোনা পরীক্ষা করা হয়নি। নারী, শিশু ও সমাজকল্যাণ দপ্তরের প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি সংঘমিত্রা ঘোষের কাছে ওই বিষয়ে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন মানবী।

শনিবার দুপুর ১২টা নাগাদ মানবী বাঙুর হাসপাতালে যান তাঁর এবং তাঁর স্বামীর করোনা পরীক্ষা করাতে। স্বামীর করোনা পরীক্ষা করা হলেও তাঁর পরীক্ষা সেই মুহূর্তে করা সম্ভব নয় বলে জানিয়ে দেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সোমবার মানবী বলেন, হাসপাতালে করোনা পরীক্ষা করাতে গিয়েছিলাম। জ্বর ছিল। আমার স্বামীর পরীক্ষা হলো। অথচ আমাকে ‘মেন্টাল’ বলে তাড়িয়ে দিল। আমি ট্রান্স নারী। ফলে আমার করোনা পরীক্ষা হলো না। পুরো ঘটনায় আমি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছি।

মানবীর স্বামীর করোনা পরীক্ষার ফল পজিটিভ এলেও মানবীর করোনা পরীক্ষা এখনো হয়নি। তাঁর অভিযোগ, বাঙুর হাসপাতালের ইমার্জেন্সির দোরগোড়ায় পৌঁছতেই একজন মহিলা নিরাপত্তারক্ষী উগ্রমূর্তিতে তেড়ে আসেন তাঁর দিকে। সরকারি হাসপাতালে যাওয়ার পূর্ব-অভিজ্ঞতা না থাকায় তিনি ঘাবড়ে যান। এরপর সবুজ অ্যাপ্রন পরা কিছু মানুষ তাঁর সামনে আসেন। মানবীর কথায়, তাঁরাও উঁচু স্বরে কথা বলতে আরম্ভ করেন। আমি তখন হাসপাতালের সুপারের খোঁজ করতে থাকি।

মানবীকে সুপারের বক্তব্যের কথা জানালে তিনি বলেন, ওই অপমানের পর, পাগল শোনার পর আমি আর ওখানে পরীক্ষা করাইনি। প্রতিবাদ না করে আমি মরব না। সরকারি সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের মানুষজনের এই মানসিকতা? আমি কার্ড দেখিয়েও অপমানিত! সাধারণ মানুষ কোথায় যাবে? নারী, শিশু ও সমাজকল্যাণ দপ্তর থেকে তাঁর চিঠির নিরিখে মানবীর সঙ্গে অবশ্য যোগাযোগ করা হয়েছে। মানবী যদিও এখনো সুপারের সঙ্গে যোখাযোগ করতে পারেননি। ট্রান্সজেন্ডার বোর্ড সুপারের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ করিয়ে দেয়নি বলে অভিযোগ তাঁর। মানবীর কথায়, ‘সরকারি হাসপাতালের অভব্যতা এবং অপমানে আমার টেস্ট হলো না। এদিকে আমি অসুস্থ হয়ে পড়লাম !

ক্ষুব্ধ গলায় তিনি জানাচ্ছেন, এত তিক্ত অভিজ্ঞতার পর আর কখনো সরকারি হাসপাতালে যাবেন না! মানবীর প্রশ্ন, ‘সরকার হাজার চেষ্টা করলেও কী হবে? আমরা প্রত্যেকে কি ব্যক্তিগতভাবে সৎ?’

সূত্র : আনন্দবাজার