শীর্ষ কবি ও লেখকের সৃষ্টি আল মাহমুদ রচনাবলি

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

বাংলাদেশের অন্যতম শীর্ষ কবি আল মাহমুদের সাহিত্য অভিযাত্রা শুরু হয়েছিল কবিতা দিয়ে। সে সঙ্গে গল্প লেখাও শুরু করেন তিনি।

তবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা পূর্বকালে তার প্রধান পরিচয় ছিল- তিনি কবি ও সাংবাদিক। কিন্তু স্বাধীনতাত্তোরকালে বহুমাত্রিক পরিচয়ে নিজেকে বিকশিত করেন আল মাহমুদ।

কর্মজীবনে তিনি হন বিপ্লবী দৈনিক পত্রিকার সফল সম্পাদক, তারপর সরকারি চাকরিজীবী, সে অবস্থায়ই অবসর। আবারও সাংবাদিকতায় নিবেদিত হন কলামিস্ট হিসেবে।

আর সাহিত্য ক্ষেত্রে তার প্রত্যয়ী প্রকাশ ঘটে একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, প্রবন্ধকার, ভ্রমণ কাহিনী রচয়িতা ও ছোটগল্পকার রূপে। অল্প কিছু গানও লিখেছেন বটে। শেষ পর্যন্ত তিনি হয়ে ওঠেন অজস্র প্রসূ লেখক।

নিবিড় অনুরাগী, একান্ত ভক্ত ছাড়া সাধারণ পাঠক আল মাহমুদের এ সাহিত্য কর্মের বিশালতা সম্পর্কে সম্যক জ্ঞাত কিনা আমার জানা নেই। জুলাই, ২০১৮তে তার রচনাবলির প্রকাশকাল পর্যন্ত প্রাপ্ত আল মাহমুদের সব লেখা নিয়ে আল মাহমুদ রচনাবলির ১৩টি খণ্ড প্রকাশিত হয়েছে।

সব মিলিয়ে তার রচনা মুদ্রিত পৃষ্ঠার হিসেবে ছয় হাজার পৃষ্ঠারও বেশি। কম কথা নয়। তার রচনাবলি বলে দেয়, তিনি স্বপ্রতাপে দাঁড়িয়ে থাকা আমাদের অন্যতম শীর্ষ লেখক।

এমনটা মনে হতে পারে যে, আল মাহমুদ রচনাবলি যারা এখনও দেখেননি বা পড়েননি তাদের পক্ষে অনুমান করা হয়তো কঠিন হতে পারে, এত লেখা কবে লিখলেন তিনি।

কে জানে, তার সম্পূর্ণ রচনা কেউ পড়েছেন কিনা। সম্প্রতি একজন গবেষক আল মাহমুদের সাহিত্যের ওপর গবেষণা করে পিএইচডি লাভ করেছেন। সম্ভবত তিনি ছাড়া আর কেউ আল মাহমুদের সম্পূর্ণ রচনাবলি পড়েননি।

আসলে এ রচনাবলি হাতে না নিলে আমাদের প্রচণ্ড শক্তিমান এ লেখক সম্পর্কে প্রকৃত ধারণা লাভ করা অসম্ভব।

আল মাহমুদ রচনাবলি বাংলাভাষী পাঠকদের জন্য অবশ্যই এক আনন্দ সঞ্চারকারী উপহার। আর তা প্রকাশ করে খ্যাতিমান প্রকাশনা সংস্থা ঐতিহ্য সত্যই যে ভালো কাজ করেছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

ঐতিহ্য এ পর্যন্ত প্রচুর মানসম্মত বই বের করেছে। তারা রবীন্দ্র রচনাবলি প্রকাশ করেছে, বিভূতিভূষণ, জীবনানন্দ রচনাবলিও প্রকাশ করেছে। প্রকাশনার আরও অনেক কৃতিই জমা হয়েছে ঐতিহ্যের ভাণ্ডারে। আল মাহমুদ রচনাবলি তাতে নতুন পালক সংযোজন।

বরেণ্য কবি ও লেখক আল মাহমুদের অনেক কাব্য-উপন্যাস-প্রবন্ধ গ্রন্থের সঙ্গে পাঠকদের অনেকেই পরিচিত। রচনাবলি প্রকাশের ফলে সেগুলো একসঙ্গে পাওয়া গেল।

অবশ্য পাঠক কতজন এ রচনাবলি সংগ্রহ করতে পারবেন সে প্রশ্ন থেকেই যায়। যাহোক, আল মাহমুদ রচনাবলির ১ম খণ্ডে পাঠকরা পাবেন আত্মজৈবনিক রচনা ‘যেভাবে বেড়ে উঠি’, উপন্যাস ‘আগুনের মেয়ে’, কাব্য ‘কালের কলস’; রচনাবলির ২য় খণ্ডে পাবেন আত্মজৈবনিক রচনা ‘দিনযাপন’, কাব্য ‘সোনালি কাবিন’, ছোটগল্পগ্রন্থ ‘পানকৌড়ির রক্ত’, উপন্যাস ‘ডাহুকী’; ৩য় খণ্ডে পাবেন কাব্য ‘লোক লোকান্তর’, প্রবন্ধগ্রন্থ ‘কবির আত্মবিশ্বাস’, উপন্যাস ‘নিশিন্দা নারী’, ধ্রিলার উপন্যাস ‘মরুমূষিকের উপত্যকা’, ছোটগল্পগ্রন্থ ‘গন্ধবণিক’; ৪র্থ খণ্ডে পাবেন কাব্য ‘অদৃষ্টবাদীদের রান্নাবান্না‘, উপন্যাস ‘কাবিলের বোন’; ৫ম খণ্ডে পাবেন কাব্য ‘মায়াবী পর্দা দুলে ওঠো’, ‘বখতিয়ারের ঘোড়া’, ‘মিথ্যাবাদী রাখাল’, উপন্যাস ‘পুরুষ সুন্দর’ ও ‘উপমহাদেশ’। ৬ষ্ঠ খণ্ডে রয়েছে ছোটগল্পগ্রন্থ ‘সৌরভের কাছে পরাজিত’ ইত্যাদি। আল মাহমুদ রচনাবলির বাকি খণ্ডগুলোও সমৃদ্ধ তার বাকি সব রচনায়।

রচনাবলির প্রথম খণ্ডের ভূমিকায় কবি আল মাহমুদ লিখেছেন, ‘নিজের জীবনকালে যে লেখক তার সমগ্র রচনাবলির প্রকাশ দেখে যেতে পারেন তার চেয়ে আর ভাগ্যবান কে?’

সত্যিই তো! ক’জন লেখক জীবদ্দশায় তার রচনাবলির প্রকাশ দেখে যেতে পেরেছেন? অবশ্য তিনি একথা বলেছিলেন ২০০১ সালে। তখন তিনি বেশ সুস্থ ছিলেন।

সম্প্রতি তার (সেপ্টেম্বর, ২০১৮) শারীরীক অবস্থার ব্যাপক অবনতি ঘটেছে। যে কোনো সময় তিনি অনন্তের পথযাত্রী হতে পারেন। অনুরাগী-শুভাকাক্সক্ষীরা তার সুস্থতা ও দীর্ঘায়ু প্রার্থনা করে চলেছেন।

যে কথাটি না বললেই নয়। যে কোনো মনস্ক পাঠকই আল মাহমুদ রচনাবলি পাঠের পর বাংলা ভাষার অন্যম প্রধান কবিকেই শুধু নয়, অন্যতম প্রধান ছোটগল্পকার ও ঔপন্যাসিককেও আবিষ্কার করবেন। নিঃসন্দেহে বলা যায়, এ আবিষ্কৃতজনের তুলনা শুধু তিনিই।

চমৎকার প্রচ্ছদে মোড়া সুন্দর ছাপা ও বাঁধাইয়ে আল মাহমুদ রচনাবলি ঐতিহ্যের সুরুচি ও প্রকাশনা পারিপাট্যের পরিচায়ক। বাংলাসাহিত্যের অন্যতম শীর্ষ লেখককে পাঠকদের কাছে পৌঁছে দেয়ার এ প্রচেষ্টা শুধু ব্যবসা নয়, প্রকাশক আরিফুর রহমান নাইমের সাহিত্যের প্রতি গভীর অনুরাগের পরিচয়ও বহন করে। ঐতিহ্যের এ প্রচেষ্টা ব্যাপকভাবে পাঠকপ্রিয় হোক।

আল মাহমুদ রচনাবলি ১৩ খণ্ড

প্রকাশক ঐতিহ্য

প্রকাশকাল জুলাই, ২০১৮

মূল্য ৬৫০০ টাকা