‘শীত বাদলায় ম্যালা কষ্ট করছি, প্রধানমন্ত্রী আমগো নতুন ঘর, খাট ও কারেন্ট দিছে’

নিজস্ব প্রতিবেদক:


‘শীত বাদলায় ম্যালা কষ্ট করছি, ভালো কইরা ঘুমাইবার পারিনাই। ওহন ঘর পাইছি, থাকার আর কোনো চিন্তা নাই। প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে ডিসি স্যার সাক্ষাৎ ভগবান শ্রীকৃষ্ণ হইয়ে আমগো নতুন ঘর, খাট ও কারেন্ট দিছে এখন মনের শান্তিতে ঘুমাইবার পারুমু। আমগো প্রধানমন্ত্রী ঘর দিছে হামি তার মঙ্গল ও দীর্ঘায়ু কামনা কইরছি ও পরিবার-পরিজন লইয়ে সুখে থাহুক এই কামনা কইরছি।’No description available.

মঙ্গলবার (৬ জুলাই) দুপুর ১ টায় নতুন ঘর পেয়ে আনন্দে আত্মহারা হয়ে অশ্রুসিক্ত সুবিধাভোগী চর্মকারের স্ত্রী শ্রীমতি টুলু রাণী এই উক্তি করেন । বাড়ির চাবি হস্তান্তরকালে উপস্থিত ছিলেন, নওহাটা পৌর মেয়র মো. হাফিজুর রহমান হাফিজসহ স্থানীয় এলাকাবাসী।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল জানান, মুজিববর্ষে ‘বাংলাদেশের একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না’-প্রধানমন্ত্রীর এমন সিদ্ধান্তের আলোকে রাজশাহী জেলা প্রশাসন আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। সকল সেবা মানুষের দৌঁড়গোড়ায় পৌঁছে দিতে তারা সর্বদা প্রস্তুত আছেন। এরই ধারাবাহিকতায় অসহায় গৃহহীন পরিবারকে খুঁজে বের করে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে ঘর প্রদান করা হচ্ছে।

তিনি আরও জানান, সোনার দেশ পত্রিকার সাংবাদিক পলাশের মাধ্যমে তপন-টুলু দম্পতির নিদারুণ কষ্টের কথা জানতে পারি এবং পবার ইউএনও শিমুল আকতারকে দ্রুত সময়ের মধ্যে তাদের বাড়ি করে দিতে নির্দেশ প্রদান করি। তাদের দুই দিনের মধ্যে বাড়ির কাজ শেষ করে এবং বসবাসের সুবিধার্থে খাট, কারেন্ট ও বাথরুমের ব্যবস্থা করে দেয়া হয়েছে।

তিনি আরও জানান, তপন-টুলু দম্পতি আজকে বাড়ি পেয়ে আমার কার্যালয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে আসে। আমি দম্পতির সঙ্গে কথা বলেছি এবং তাকে এক মাসের খাদ্য সামগ্রী প্রদান করেছি। এছাড়াও তাদের প্রয়োজনীয় আর্থিক সহায়তা দিয়েছি এবং প্রতি মাসে এই আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হবে। মুজিববর্ষ উপলক্ষে তৃতীয় দফায় গৃহহীনদের ঘর দেয়া শুরু হলে এই দম্পতিও একটি ঘর পাবেন বলে জানান জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল।

পবা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. শিমুল আকতার জানান, স্থানীয় সাংবাদিক পলাশ এর মাধ্যমে তপন মুচির সম্পর্কে জানতে পারি। জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল মহোদয়ের নির্দেশে তপনের বাড়ি করে দেয়া হলো।

সুবিধাভোগী তপন দাস জানান, আমি ৬০ বছর ধরে মুচির কাজ করছি এবং আমি নিঃসন্তান। দু’বছর আগে অসুস্থতায় পড়ে বন্ধ হয় আমার আয়-রোজগার। চিকিৎসায় কিছুটা সুস্থ হলেও চোখে কম দেখি ও কানে কম শুনতে পাই। আমার স্ত্রীও অসুস্থ। পড়ে যাওয়ার পর স্ট্রেচারে ভর দিয়ে চলাচল করে।

তিনি আরও জানান, আমার ভিটেমাটি কিছুই নেই। তাই নওহাটা কলেজ মোড় মার্কেটের বারান্দায় বউ টুলুকে নিয়ে রাত কাটাতাম। আমার কাছে বাড়ি ছিল স্বপ্নের মত, ডিসি স্যার আমার স্বপ্ন পূরণ করেছেন। স্যার আমাকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মায়ের নির্দেশে বাড়ি করে দিয়েছেন। আমি আমার শেখ হাসিনা মায়ের জন্য ভগবানের কাছে মঙ্গল কামনা করছি।

পবা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. শিমুল আকতার জানান, জেলা প্রশাসক স্যারের নির্দেশে আমি তপনের বাড়ি করে দেয়ার জন্য টাকা ও টিন প্রদান করি। স্থানীয় সাংবাদিক ও জনগণের উদ্যোগে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করে দুই দিনের মধ্যে বাড়ির কাজ সম্পূর্ণ করি এবং তাকে অস্থায়ীভাবে এইখানে থাকার ব্যবস্থা করি।

তিনি আরও জানান, তপন দম্পতিকে ভবিষ্যতে আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় তৃতীয় দফায় ঘর প্রদান করে স্থায়ীভাবে পুনর্বাসন করা হবে বলে জানান তিনি।

নওহাটা পৌর মেয়র হাফিজুর রহমান হাফিজ জানান, আজ জেলা প্রশাসকের সহযোগিতায় কলেজ মোড়ের ভূমিহীন ও গৃহহীন অসহায় মুচি দম্পতির মাথা গোঁজার ঠাঁই হলো। ৭৭ বছর বয়সী শ্রী তপন দাস অপারেশন করার পর থেকে চোখে দেখতে ও কানে শুনতে খুবই কষ্ট হয়। তার স্ত্রী শ্রীমতি টুলু রাণী শারীরিক অসুস্থতার কারণে লাঠির সহযোগিতা ছাড়া হাঁটতে পারে না। বর্তমানে আয়-রোজগার কমে যাওয়ায় কারণে পেট ভরে তিন বেলা ঠিক মতো খাবার জুটতো না তপন দম্পতির। কোনো দিন এক বেলা আবার কোনো দিন দুই বেলা খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছিল তাদের। কিন্তু মাথা গোঁজার ঠাঁই না থাকার কারণে ঠাঁই হয় নওহাটা মাদ্রাসা মার্কেটের বারান্দায়। ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে গত দুই বছর ধরে রাত কাটছিল এই মুচি দম্পতির।

তিনি আরও জানান, আমি কষ্টের কথা শোনার পর তার জন্য খাবার পাঠানো শুরু করি এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. শিমুল আকতার কে আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় তৃতীয় দফায় ঘর প্রদান করা কথা জানাই।

এছাড়াও তিনি আরও জানান, রাজশাহী জেলা প্রশাসকের সহযোগিতায় নির্মিত প্রধানমন্ত্রীর উপহার স্বরূপ গৃহহীন মুচি দম্পতির বাড়ির স্বপ্ন পূরণ হলো আজ। এই মহৎ কাজটি করার জন্য জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল স্যারকে অসংখ্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।