শীতে কাঁপছে রাজশাহী, মিলছে না গরম কাপড়, আজও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৫.৩

নিজস্ব প্রতিবেদক:

‘খুব ঠান্ডা ল্যাগছে। কি আর করবো, কাজ তো করিই খ্যাতি হবে। কাজ না করলে খ্যাতি দিবে কে? তাই কষ্ট হলেও বাড়ির বাহিরে অ্যাসতে হচ্ছ্যে। শীত তো ল্যাগছে। যে শীত, কাজে ল্যাগেও তাড়ানো যাচ্ছ্যে না। খুব কষ্টরে বাবা। এই শীত তাড়াতে কেউ একটা কম্বলও দিচ্ছে না। আর কষ্টও যাচ্ছ্যে না।’ সোমাবার সকাল সাড়ে সাতটার দিকে শীতে কাবু হয়ে নগরীর রেলগেট চত্তরে বসে থেকে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন রাজশাহী নগরীর মতিহারের শ্যামপুর এলাকার বাসিন্দা আকবর আলী।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, খেটে খাওয়া নাজিরুলের মতো এমন রাজশাহীর হাজারো মানুষ গত কয়েক দিনের তীব্র শীতে ভোগন্তিতে পড়ছে। কিন্তু এসব মানুষের পাশে গরম কাপড় নিয়ে সহায়তার হাত বাড়িয়ে প্রয়োজনের তুলনায় এগিয়ে আসছে আসা হচ্ছে না বলেও অভিযোগ উঠেছে। যদিও বিভিন্ন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও সরকারি উদ্যোগে কিছু পরিমাণে গরম কাপড় বিতরণের খবরও পাওয়া যাচ্ছে। তবে সেগুলোর পরিমাণ খুবই কম। ফলে শীতার্ত মানুষদের দুর্ভোগের পরিমাণ বাড়ছেই।

রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের উচ্চ পর্যবেক্ষক আশরাফুল আলম জানান, রবিবার রাজশাহীতে বছরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৫ দশকি ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আজ সোমবার সকালেও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৫ দশকি ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ফলে টানা দুদিন একই তাপমাত্রা রেকর্ড করা হলো।

এর আগে গতকাল শনিবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৫ দশকি ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে রবিবার ছিল চলতি বছরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। গতকাল রবিবার ভোর ৫টা থেকে সকাল ছয়টার মধ্যে এ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। তাপমাত্রা নিচে নামার পাশাপাশি উত্তরের হিমেল হাওয়া ঠান্ডার পরিমাণ আরও কয়েকগুন বেড়ে যায়। পাশাপাশি বয়ে যাচ্ছে শৈতপ্রবাহ। চলতি সপ্তাহজুড়েই এইরকম ঠান্ডা থাকতে পারে বলেও জানান তিনি। এতে করে উত্তরাঞ্চলের জেলা রাজশাহীতে বিজার করছে তীব্র শীত। বলা যায়, শীতে কাহিল হয়ে পড়েছে মানুষ।

এদিকে তীব্র শীতের কারণে একেবারে প্রয়োজন ছাড়া ঘর ছেড়ে বের হচ্ছেন না সাধারণ মানুষ। কিন্তু খেটে খাওয়া মানুষরা ঘরে বসে না থাকতে পারায় তাদের দুর্ভোগের যেন শেষ নেই। তাঁরা কাজের সন্ধানে বের হয়ে তীব্র শীতের মধ্যে কাঁপছেন থর থর। শীত নিবারণ করতে অনেককে খুড়কুটো জ্বালিয়ে রাখতে দেখা যায়। কিন্তু ছিন্নমূল বা খেটে খাওয়া হতদরিদ্র মানুষের মাঝে তেমন সাহায্য নিয়ে হাত বাড়ানোর তেমন কোনো খবর পাওয়া যায়নি। ফলে ভোগান্তিতে পড়েছেন এসব মানুষরা।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, তীব্র শীতের কারণে কাতর হয়ে পড়েছেন কর্মজীবিরা থেকে শুরু করে শিশু ও ছিন্নমূল মানুষগুলো। শীতের কারণে মানুষের চলাফেরা ও কার্যক্রমে দেখা দিয়েছে স্থবিরতা। অনেককে খড়কুটো সংগ্রহ করে আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করতে দেখা গেছে। আবার অনেকেই তীব্র শীত উপেক্ষা করেই কাজের সন্ধানে বেরিয়ে পড়েন রাস্তায়। ফলে শীতে কাহিল হয়ে পড়েন তারা।

রাজশাহী নগরীর ছোট বনগ্রাম বস্তির বাসিন্দা জোহুরা খাতুন বলেন, ‘শীতে আমরা খুব কষ্টে আছি বাপ। কিন্তু এখুনো কেউ কুনো কাপুড় লিয়ে অ্যালো না। ছিঁড়া কাপুড়-চুপপুড় যা আছে-ওই দিয়্যাই কুনমতে দিন পার করছি।’

তিনি আরও বলেন, র‌্যাতে আর সকালে অনেক ঠান্ডা লাগে। ঠান্ডায় ঠিকমুত ঘুম্যাতেও পারি ন্যা। কি যে কষ্ট। বুঝানো যাবে না।’

নগরির রেলওয়ে বস্তি এলাকার বাসিন্দা আকবর আলী বলেন, ‘খুব কষ্টে আছি শীতে। কখনো শীত তাড়াতে চেষ্টা করছি আগুন জ্বালিয়ে। আগুন আর কতক্ষণ জ্বালানো যায়। তাই বেশিরভাগ সময় কষ্টেই কাটছে।’
এদিকে রাজশাহীর দুর্গাপুরের জয়কৃষ্ণপুর গ্রামের বাসিন্দা হাজেরা বেগম বলেন, ‘টানা শীত পড়ছে। কিন্তু আমরা কোনো কম্বল পাইনি।

তবে রাজশাহী জেলা প্রশাসক হেলাল মাহমুদ শরীফ জানান, ৫২ হাজার ৫০০ পিস কম্বল আমরা শহরের বাইরের নয়টি উপজেলার জন্য বরাদ্দ পেযেছিলাম। সেগুলো এরই মধ্যে উপজেলা পর্যায়ে বিতরণ করা হয়েছে। আরও কিছু চাহিদা দেওয়া হয়েছিল, সেগুলোও আজ-কালের মধ্যে পেয়ে যাব। তবে শহরের জন্য আমাদের কোনো বরাদ্দ নাই।’

স/আর