শীতের শুরুতেই রাজশাহীতে লেপ বানানোর ধুম

ফাতেমা বিনতে করিম:

রাজশাহী জেলা শহরের বিভিন্ন এলাকায় লেপ তোষকের দোকানগুলো বর্তমানে ক্রেতাদের আনাগোনায় জমজমাট। শীতের আগমনের সাথে লেপ তোষকের দোকানে বেড়েছে কারিগরদের কাজের চাপ। দিনের বেলা গরম থাকলেও সূর্যাস্তের পর থেকে শীতের তীব্রতা অনুভব করা যায়। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে কার্তিকের শেষে এবার রাজশাহীতে শীতের আগমন ঘটে। ফলে লেপ তোষকের কারখানাগুলোতে পুরোদমে লেপ তৈরির কাজ শুরু হতে দেখা গিয়েছে।

নগরীর গণকপাড়ায় এখন লেপ বানাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কারিগরেরা। মুলত লেপ বানানোর সুখ্যাতির জন্য গণকপাড়া এলাকার একটি বিশেষ ভাগ তুলাপট্টি নামে পরিচিত।সেখানকার কারিগরদের সাথে কথা বলে জানা যায়, একটি লেপ বানাতে প্রতিটি কারিগরের প্রায় তিন থেকে চার ঘন্টা সময় লাগে। এভাবে একজন কারিগর দিয়ে প্রায় ৪ থেকে ৫ টি লেপ বানিয়ে থাকেন। বিগত কয়েক দিনের রাতের ঠান্ডা আবহাওয়ায় লেপ বানানোর জন্য অর্ডার আসা শুরু হয়েছে বেশি।তাই এখন অভার টাইম নিয়ে প্রতিদিনের অর্ডার শেষ করছেন কারিগরেরা।

শুধু গণকপাড়া নয় নগরীর কুমারপাড়া, লক্ষীপুর, কোর্ট স্টেশনসহ বিভিন্ন স্থানে লেপ বানানোর জন্য অর্ডার নেন কারিগরেরা। তারা সবাই কোন না কোন প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত আছেন। কেউ কেউ এই লেপ বানান প্রায় ২৫ থেকে ৩০ বছর ধরে।শুধু তাই-্ই নয় লেপ বানাতে বিভিন্ন কারিগরেরা ফেরি করে যন্ত্রপাতি নিয়ে যান বিভিন্ন এলাকাতে। তারা বিভিন্ন বাসা বাড়ির পুরোনো লেপ ভেঙ্গে নতুন করেও লেপ তৈরী করে থাকেন।

প্রতিটি লেপ তৈরীতে খরচ হয় আকার ভেদে প্রায় ১ হাজার থেকে ১৫ শ টাকা।বাজারে চার-পাঁচ রকমের তুলা দিয়ে লেপ তৈরি হলেও শিমুল ও কার্পাস তুলার চাহিদা বেশী।বর্তমান বাজারে কার্পাস তুলার মুল্য কেজি প্রতি ১৬০ টাকা আর শিমুল তুলা প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকায়। বাজারে বর্তমানে রেডিমেড লেপের মুল্য ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা। আর একটি লেপে তুলার প্রয়োজন হয় আকার ভেদে ৪ থেকে ৫ কেজি তুলা।

কুমার পাড়া এলাকার সুধাংশু কর্মকার নামের লেপ তৈরীর কারিগর প্রায় ২৫ বছর ধরে লেপ তৈরী করে আসছেন। তিনি বলেন, বর্তমানে রাজশাহীর আবহাওয়া কিছুটা ঠান্ডা হতে শুরু করেছে। যার কারণে এই সময়ে বেশ অর্ডার আসা শুরু করেছে। অর্ডার অনুযায়ী দিনে প্রায় ৫ টা লেপও সেলাই করে থাকেন তিনি।

গনক পাড়া মোড় এলাকার একটি কারখানার কারিগর আকবর হোসেন বলেন, সারা বছর তোষক তৈরীর প্রতি মানুষের ঝোঁক থাকে। শীত এলে লেপের চাহিদা বেড়ে যায়। প্রায় ৩০ বছর থেকে এই লেপের বানানোর কাজ করে যাচ্ছি। এর চেয়েও পুরোনো কারিগর আছেন। তবে লেপ বানান না  তারা বয়সের ভারে আবার লেপের চাহিদা সিজিনাল হওয়ায় পেশা বদল করেছেন।

শীতের হাত থেকে বাঁচার জন্য লেপের তুলনা নেই। তাই শীতের শুরু থেকে কারিগররা মাঝারি সুচ হাতে নিয়ে লেগে পরে লেপ তৈরির কাজে। শুধু মাত্র শীতের দুই থেকে তিন মাস চলে লেপ তৈরির কাজ। তবে বর্তমানে বাজারে আধুনিক কম্বল আসার ফলে ক্রেতাদের লেপের প্রতি চাহিদা কিছুটা হলেও কমে এসেছে বলে জানান কারিগরেরা।