শিবগঞ্জে ১১ কোটি টাকা ব্যয়ে সোলার বিদ্যুৎ স্থাপন

নিজস্ব প্রতিবেদক, চাঁপাইনবাবগঞ্জ:
শিবগঞ্জ উপজেলায় গত ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৩ কোটি ৪২ লাখ ৬২ হাজার ৪০৭ টাকা, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৩ কোটি ৬২ লাখ  ৫ হাজার ৫০২ টাকা ও ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৩ কোটি ৭২ লাখ ৫০ হাজার ১৬৪ টাকা।

সব মিলিয়ে তিন অর্থবছরে ১০ কোটি ৭৭ লাখ ১৮ হাজার ৭৫ টাকা ব্যয়ে সরকারের গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ-টিআর ও গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার-কাবিখা প্রকল্পের আওতায় এ সমস্ত স্ট্রিট লাইট স্থাপন হয়েছে। এ সব কাজ বাস্তবায়ন করছে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস।

উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের জনপদ স্ট্রিট লাইট স্থাপনের মাধ্যমে আলোকিত হয়ে উঠেছে। ফলে একদিকে সাশ্রয় হয়েছে বিদ্যুতের, অন্যদিকে তেমনি কমছে অন্ধকারে বখাটের উৎপাত ও মাদকের আড্ডাখানা।

জানা গেছে- গত তিন অর্থবছরে ১০ কোটি ৭৭ লাখ ১৮ হাজার ৭৫ টাকা ব্যয়ে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে ৪ হাজার ৩শ’ ৬২টি বিভিন্ন ক্ষমতা সম্পূর্ণ স্ট্রিট লাইট স্থাপন করা হয়েছে। বেসরকারি সংস্থা ইডকল প্রতিনিধি ও সোলার কোম্পানী থেকে সরবরাহ প্রত্যেকটি উচ্চ ক্ষমতা সম্পূর্ণ স্ট্রিট লাইটের প্রাক্কলিত মূল্য ধরা হয়েছে ৫৬ হাজার ৪শ’ ৯০টাকা। স্থানীয় সংসদ সদস্যের প্রচেষ্টায় প্রত্যন্ত জনপদগুলোকে আলোকিত করতে প্রচুর অর্থ ব্যয়ে উপজেলার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে স্ট্রিট লাইট স্থাপন হয়েছে।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস সুত্রে জানা গেছে- ২০১৬-১৭ অর্থবছর হতে ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে পর্যন্ত তিন অর্থবছরে
বিনোদপুর ইউনিয়নে ২১৪টি, চককীর্তি ইউনিয়নে ২৩১টি, ধাইনগর ইউনিয়নে ১৫৩টি, দাইপুখুরিয়া ইউনিয়নে ২৪৫টি, দূর্লভপুর ইউনিয়নে ২৬৬টি, ঘোড়াপাখিয়া ইউনিয়নে ৩৭টি, কানসাট ইউনিয়নে ৯৮৩টি, মোবারকপুর ইউনিয়নে ১৬টি, মনাকষা ইউনিয়নে ১৯২টি, নয়ালাভাঙা ইউনিয়নে ৯৬টি, পাঁকা ইউনিয়নে ২৮৮টি, শ্যামপুর ইউনিয়নে ৩৪৭টি, শাহবাজপুর ইউনিয়নে ১৮২টি, ছাত্রাজিতপুর ইউনিয়নে ৯৮টি, উজিরপুর ইউনিয়নে ১১৫টি ও শিবগঞ্জ পৌরসভা এলাকায় ৩৫৬টি স্ট্রিট লাইট স্থাপন হয়েছে।

সূত্র অনুযায়ী স্ট্রিট লাইটগুলোকে ক্ষমতা অনুযায়ী তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষমতা সম্পূর্ণ লাইটগুলোকে স্ট্রিট লাইট বলা হয়। এগুলো শতভাগই রাস্তার পার্শ্বে স্থাপন হয়েছে। এতে স্ট্রিট লাইট প্রতি খরচ হয়েছে ৫৬ হাজার ৪শ’ ৯০ টাকা। দ্বিতীয় পর্যায়ের ক্ষমতা সম্পূর্ণ শর্ট স্ট্রিট লাইটগুলো, মসজিদ, মাদ্রাসা, গোরস্থান, শ্মশান ঘাট, মন্দির, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে হয়েছে। এ সমস্ত শর্ট স্ট্রিট লাইট প্রতি খরচ ৪৫ হাজার টাকা করে। তৃতীয় ক্ষমতা সম্পূর্ণ হোম সিস্টেম স্ট্রিট লাইটগুলো বেশির ভাগই বসতবাড়িতে স্থাপন হয়েছে। এগুলো দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে দেয়া হয়েছে। শুধু স্ট্রিট লাইট স্থাপনের ক্ষেত্রে উপজেলায় তিন অর্থবছরে খরচ হয়েছে ১০ কোটি ৭৭ লাখ ১৮ হাজার ৭৫ টাকা।

উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে জানা গেছে, ইতোপূর্বে স্ট্রিট লাইট সম্পর্কে কোন ধারণা ছিল না। বর্তমান সরকারের আমলে স্ট্রিট লাইট স্থাপনের মাধ্যমে প্রকৃতভাবে বিনা খরচে আলোকিত হয়ে অন্ধকার হতে মুক্ত হয়েছি গ্রামবাসি। তবে তাদের দাবি- বিশেষ করে সীমান্ত এলাকার দূর্গম পথগুলো দিয়ে চোরাচালান, মাদক, ছিনতাই ও ডাকাতিসহ বিভিন্ন ধরণের অপরাধ ঘটে থাকে। সে সমস্ত দূর্গম পথগুলোতে এ ধরনের অপরাধমূলক কাজ রোধে স্ট্রিট লাইট স্থাপনের দাবি জানান।

স্থানীয় সমাজসেবক সাবেক যুবলীগ নেতা তোহিদুল আলম টিয়া বলেন- জানা মতে এ পর্যন্ত উপজেলায় উচ্চ ক্ষমতা সম্পূর্ণ তিনশত স্ট্রিট লাইট বিভিন্ন  রাস্তায়, গোরস্থানে ও শ্মশান ঘাটে স্থাপন হয়েছে। আরো ১৫০টি অল্পকিছুদিনের মধ্যে স্থাপন হবে। তবে অনেক বড় বড় রাস্তায় এখনো স্ট্রিট লাইট বসানো হয়নি। তবে বর্তমান সরকারের উদ্যোগে উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে স্ট্রিট লাইট ও শর্ট স্ট্রিট লাইট এবং হোম সিস্টেম লাইট স্থাপন হলে বিদ্যুৎ সাশ্রয় কমে আসবে। পামাপাশি দরিদ্র জনগোষ্ঠীসহ সাধারণ মানুষ উপকৃত হবে।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম জানান, পর্যায়ক্রমে চাহিদা মোতাবেক উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে স্ট্রিট লাইট, শর্ট স্ট্রিট লাইট এবং হোম স্ট্রিট লাইট স্থাপনের মাধ্যমে দরিদ্র জনগোষ্ঠী-বিভিন্নপ্রতিষ্ঠানকে বিনামূল্যে আলোকিত করা হবে। এছাড়া অপরাধমূলক কর্মকান্ড রোধে সীমান্তবর্তী এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকার বড় বড় রাস্তার মোড়ে ও রাস্তার মাঝে স্ট্রিট লাইট স্থাপন হবে।

তিনি জানান, দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে যারা বিদ্যুৎ সংযোগ নিতে পারেন না, তাদের জন্য বিনামূল্যে হোম সিস্টেম লাইট দিয়ে আলোকিত করতে সরকারের নির্দেশ অনুযায়ী প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ (শিবগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য ডাঃ সামিল উদ্দিন আহম্মেদ শিমুল বলেন, জনকল্যাণমুখী সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে সারা দেশের ন্যায় শিবগঞ্জের দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে বিনামূল্যে আলোকিত করতে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিদ্যুৎ সাশ্রয় কমিয়ে আনতে ও সীমান্তবর্তী এলাকায় চোরাচালান-মাদক রোধে বড় বড় রাস্তার মাঝে ছিনতাই-ডাকাতি বন্ধে চাহিদা মোতাবেক স্ট্রিট লাইট, শর্ট স্ট্রিট লাইট ও হোম সিস্টেম লাইটের প্রয়োজন, তা পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন হবে।

স/অ