শিবগঞ্জে প্রতিপক্ষের হামলায় নিহতের পরিবারকে হুমকির অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক, চাঁপাইনবাবগঞ্জ:
চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে প্রতিপক্ষের হামলায় নিহতের পরিবারকে হুমকির অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার মনাকষা ইউনিয়নের তারাপুর গ্রামে।
প্রথমে প্রেম ও পরে বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখান করায় দুপক্ষের সংঘর্ষে প্রতিপক্ষের ইটের আঘাতে গৃহবধূ রেহেনা নিহত হওয়ার ঘটনায় মামলা করা হয়। মামলার আসামী পক্ষ বাদী পক্ষকে মামলা প্রত্যাহারের জন্য বিভিন্ন ধরনের হুমকী দিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
সরেজমিনে ঘটনাস্থলে গিয়ে বাদী ও এলাকাবাসীর সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার মনাকষা ইউনিয়নের তারাপুর ঢাক্কিপাড়া গ্রামের মকিম উদ্দিনের মাদ্রাসা পড়ুয়া শিক্ষার্থীকে একই গ্রামের পল্লী চিকিৎসক ও শিক্ষক হোসেনের ছেলে কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী বারিকুল্লাহ সাথে প্রথমে প্রেম ও পরে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে রাজী না হওয়ায় মকিম উদ্দিন ও তার সমর্থকদের নাজেহাল করায় সে জামায়াত (গ্রাম্য সমাজ ব্যবস্থা) থেকে বেরিয়ে আলাদা জামায়াত (গ্রাম্য সমাজ ব্যবস্থা) গঠন করলে আবারো একত্রিত হওয়ার জন্য গত ২৪জুন শনিবার ফজলুর রহমানের বাড়ির উঠনে  গ্রাম্য শালিস বসে।
শালিস চলাকালে উভয় পক্ষের কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। এসময় হোসেন মাস্টারের সমর্থকদের ইটের আঘাতে মকিম উদ্দিনের স্ত্রী রেহেনা বেগম(৩৫) মারা যায়। মকিম উদ্দিন ও রেহেনার মেয়ে মাকসুদা বেগম জানান, তিন বছর যাবত হোসেন মাস্টারের ছেলে বারিকুল্লাহ আমাকে জোর পূর্বক বিয়ে করার জন্য উত্যক্ত করলে তাকে বিয়ে করতে রাজী না হওয়ায় ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে তারা চুলের ঝুটি ধরে ঘর থেকে বের করে ঘরে থাকা ৯ লাখ টাকা লুটপাট করে এবং আমার মাকে তারা ইটের আঘাত দিয়ে হত্যা করে ।
এখনো আমাদেরকে বিভিন্ন ভাবে হুমকী দিচ্ছে। আমরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। আমি আমার পরিবারের নিরাপত্তা ও মায়ের হত্যার বিচার দাবী করছি। একই সুরে সুর মিলিয়ে বাদী মকিম উদ্দিন, তার ভাই আব্দুর রাকিব, চাচাতো ভাই হারুন, কামাল, জামালসহ অনেকেই জানান, ইউপি চেয়ারম্যান মির্জা শাহাদাৎ হোসেন খুররম আমাদেরকে মীমাংসার জন্য চাপ প্রয়োগ করছেন।
অন্যদিকে জামালের স্ত্রী সানুয়ারা বেগম, মৃত হাকিমের স্ত্রী মাজেরা বেগম(৬৫) সহ কয়েকজন মহিলা জানান, সংঘর্ষের সময় আমাদের তাদের হামলায় পুরুষেরা পালিয়ে গেলে তারা আমাদের বাড়িতে প্রবেশ করে আমাদেরকে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করে এবং আমাদের বাড়িঘর ভাংচুর ও লূটপাট করে।
সরেজমিনে দেখা গেছে বাদী পক্ষের বাড়ি-ঘরে ইটপাটকেল পড়ে আছে, ঘরের টিনগুলোতে একাধিক ছিদ্র দেখা গেছে এবং ঘরের মধ্যে বাক্স ও ট্রাকগুলো ভাংচুর করা অবস্থায় পড়ে আছে। বাড়ির লোকজন আতংকিত রয়েছে। ২জন গ্রাম পুলিশ এলাকা পাহাড়া দিচ্ছে। আসামী পক্ষের লোকজন পলাতক ও বাড়িতে তালাবদ্ধ থাকায় যোগাযোগ করা সম্ভব না হলেও হাসান আলি জানান, আমি দীর্ঘদিন যাবত শিবগঞ্জ পৌরসভার পার্শে নিজ বাড়িতে বসবাস করছি এবং ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্টতা ও ঘটনাস্থলে অনুপস্থিত থাকলেও বাদী পক্ষ ষড়যন্ত্রমূলকভাবে আমাকে মামলার আসামী করায় আমি খুব বিপদে আছি। তিনি আরো জানান, আমি সংশ্লিষ্ট উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
এদিকে ইউপি চেয়ারম্যান মির্জা শাহাদাৎ হোসেন খুররম উক্ত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, কোন চাপ প্রয়োগ নয় বরং তারা যদি মীমাংসা করতে চাই তাহলে আমরা উদ্যোগ নিব বলেছি।
তিনি আরো জানান, ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ঊভয়পক্ষকে শান্ত থাকার অনুরোধ জানিয়েছি এবং ৪জন গ্রাম পুলিশ ঘটনাস্থলে পাহাড়া দিচ্ছে।
এব্যাপারে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই রবিউল করিম জানান, নিহতের পরিবার গরীব হওয়ায় আসামী পক্ষ তাদের ব্যাপক হুমকীর মুখে রেখেছে। এমনকি আমাকেও আসামী সহকারী অধ্যাপক হাসান ও তার স্ত্রী মুঠো ফোনে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। তিনি আরও জানান, আসামী অধ্যাপক হাসানই তাদের হত্যাকান্ডের মূল ইন্দনদাতা। ৩জন আসামীকে আটক করা হলেও বাকী আসমীদের ধরার চেষ্টা চলছে তবে বেশীরভাগ আসামী চোরাই পথে পার্শবর্তী দেশ ভারতে পালিয়ে যাওয়ায় ধরা সম্ভব হচ্ছে না।
উল্লেখ্য যে, গত ২৪ জুন রাতে তারাপুর ঢাক্কিপাড়া গ্রামে গ্রাম্য শালিস চলাকালে দুই পক্ষের সংঘর্ষে গৃহ বধু রেহেনা নিহত হন। এঘটনায় নিহতের স্বামী বাদী হয়ে শিবগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
স/অ