শিবগঞ্জের জঙ্গি আস্তানা থেকে বের করা হয়েছে একটি এ্যাম্বুলেন্স

নিজস্ব প্রতিবেদক:

চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার কানসাট ত্রিমহোনী এলাকায় জঙ্গি আস্তানা থেকে এ্যাম্বুলেন্স বের করা হয়েছে।  সে এ্যাম্বুলেন্সটিতে একজন নারীকে বসে থাকতে দেখা যায়। বিকাল ৫টার দিকে জঙ্গি আস্তানার ভেতর থেকে এ্যাম্বুলেন্সটি বের হয়ে দ্রুত গতিতে শহরের দিকে চলে যায়।

 

সেখানে অপর একটি এ্যাম্বুলেন্স থাকতে দেখা যায়। প্রথম এ্যাম্বুলেন্সটি বের হওয়ার পর সেখানে পুলিশের তিনজন মহিলা কন্সটেবলকে ঢুকানো হয়। তবে এখন পর্যন্ত সেখানে অন্য কোন আইন শৃঙ্খলাবাহিনীকে ঢুকতে দেয়া হয়নি।

 

বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় দিনের মতো সকাল নয়টার দিকে অভিযান শুরু হওয়ার পর থেকেই থেমে থেমে এ গুলির শব্দ শোনা যায়। এরপর দুপুর ১২টার দিকে মাইকিং করে ফের জঙ্গিদের আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু তারপরেও তাদের পক্ষ থেকে কোনো সাড়া-শব্দ পাওয়া যায়নি। এরপর গুলির শব্দ আরো বেড়ে যায় ঘটনাস্থল থেকে।

 

সর্বশেষ বিকেল সোয়া চারটার দিকে থামে গুলির শব্দ। বিকাল পৌনে ৫ টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত সেখানে ভেতর থেকে বাইরে বা বাইরে থেকে ভেতরে কোন গোলাগুলির আওয়ায় পাওয়া যায়নি। তবে সেখানে শুধু মাত্র কাজ করছে সোয়াত টিম। অন্যান্য আইনশৃঙ্খলাবাহিনীকেও দূরে রাখা হয়েছে।

 

এর আগে গতকাল বুধবার সন্ধ্যা পৌনে সাতটার দিকে সোয়াট সদস্যরা এ অভিযান শুরু করেন। এরপর থেকেই সেখানে গুলির শব্দ ভেসে আসতে থাকে। মাঝে ৪-৫টি বড় বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। এর কিছুক্ষণ পর রাত নয়টার দিকে অপারেশন স্থগিত করা হয়। রাতের আধারের কারণে গতকাল অভিযান সাময়িক স্থগিত করে সোয়াট।

 

প্রত্যক্ষদর্শীরা সিল্কসিটি নিউজকে জানায়, সকালে অভিযান শুরু হওয়ার পরে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে জঙ্গি আস্তানা থেকে লাশ নিতে কয়েকটি কফিন নিয়ে যাওয়া হয় ঘটনাস্থলের পাশে। এছাড়াও কয়েকজন ডোমকেও ডাকা হয়। কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই ভিতরে জঙ্গিদের কাউকে অবস্থান নিতে দেখা যায় বলে ধারনা করেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এর পর মোইকযোগে তাদের আত্মসমর্পণের জন্য ফের অনুরোধ করা হয়। কিন্তু তাতে কোনো সাড়া-শব্দ না পাওয়ায় পরবর্তিতে শুরু হয় গুলির শব্দ।

এর আগে গতকাল বুধবার সন্ধ্যা পৌনে সাতটার দিকে অপারেশন ‘ঈগল হান্ট’ শুরুর আগে আশ-পাশ থেকে সব মিডিয়াকর্মী ও উৎসক জনতাকে সরিয়ে দেওয়া। এর আগে বুধবার বিকেল ৫টার দিকে ২টি হেলিকপ্টারে করে সোয়াট সদস্যরা শিবগঞ্জ স্টেডিয়ামে অবতরণ করেন। এরপর তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছেন। তার আগে গতকাল ভোর থেকেই শিবগঞ্জের ওই জঙ্গ আস্তানাটি ঘিরে রাখে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট। এরপর তাদের লক্ষ্য করে বাড়ির ভিতর থেকে গুলি ছোড়া হলে ডাকা হয় সোয়াট সদস্যদের।

অপারেশন ‘ঈগল হান্ট’ শুরুর আগে জঙ্গি রফিকুল ইসলাম ওরফে আবুর মা ফুলজানকে নিয়ে যাওয়া তাদের বাড়ির কাছে। তার মায়ের সাহায্যে ওই বাড়িতে অবস্থানকারীদের আত্মসমর্পণের চেষ্টা চালানো হয়। কিন্তু তাতে কোনো সাড়া দেয়নি জঙ্গি আবু। এরপরই অভিযান শুরু করা হয়।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের পুলিশ সুপার মুজাহিদুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, শিবগঞ্জের জঙ্গি আস্তানায় অভিযানের নাম দেওয়া হয়েছে অপারশেন ঈদল হান্ট।

এর আগে শিবগঞ্জের চককীর্তি ইউনিয়নের ত্রিমোহিনী চাতরা বাজারের শিবনগর এলাকায় ভোর সাড়ে ৫টা থেকে ‘জঙ্গি আস্তানা’ সন্দেহের একটি বাড়ি ঘিরে রেখেছে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের সদস্যরা।

দুপুর দেড়টার দিকে দুটি অ্যাম্বুলেন্স ঘটনাস্থলে পৌঁছে। এরই মধ্যে ওই বাড়ির বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে। সেখানে বর্তমানে জঙ্গি রফিকুল ইসলাম ওরফে আবু, তার স্ত্রী সুমাইয়া, দুই শিশুকন্যা রয়েছেন। অন্য কোনো জঙ্গি সদস্য আছেন কিনা বা থাকলেও কতজন সে সম্পর্কে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। আবুর দুই শিশুর নাম সাদিয়া (৪) ও নুরি (৭)। তাদের মধ্যে নুরি প্রথম শ্রেণির ছাত্রী।

পুলিশের রাজশাহী রেঞ্জ ডিআইজি খুরশেদ হোসেন, এডিশনাল ডিআইজি ইসারুল আরেফিনসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছেন। পরে সাধারণ লোকজনের চলাফেরা নিয়ন্ত্রণের জন্য আশপাশের এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে উপজেলা প্রশাসন।

কাউন্টার টেরোরিজমের এক কর্মকর্তা জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সকালে প্রথমে কানসাট ইউনিয়নের আব্বাস বাজার এলাকার তিনটি বাড়ি ঘেরাও করা হয়। তবে সেখানে জঙ্গির কোনও অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। পরে শিবগনগর এলাকায় অন্য একটি বাড়ি ঘেরাও করে তল্লাশি শুরু করতে যায় কাউন্টার টেরোরিজমের সদস্যরা। এসময় ওই বাড়ি থেকে পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়া হয়। জবাবে পুলিশও কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়ে। এখন পর্যন্ত কোনও হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।

 স/আর