শিনজো আবের নিহতের ঘটনা বদলে দিতে পারে জাপানকে

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্কঃ

জাপানের পশ্চিমাঞ্চলের নারা শহরে নির্বাচনী বক্তব্য দেওয়ার সময় পেছন থেকে গুলি করা হয় ৬৭ বছর বয়সী জাপানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবেকে। হাসপাতালে নেওয়ার পর মারা যান তিনি। জাপানের মতো দেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ওপর হামলার ঘটনায় স্তম্ভিত গোটাবিশ্ব। শিনজো আবের ওপর হামলার ঘটনা শুক্রবার (৮ জুলাই) ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই বন্ধু ও পরিচিত মহলের বার্তা পাচ্ছেন বিবিসির সাংবাদিক রুপার্ট উইংফিল্ড-হায়েস। সবার একটাই প্রশ্ন: এমন ঘটনা জাপানে! কীভাবে ঘটতে পারে?

প্রশ্নটি উইংফিল্ড-হায়েসের মনেও ঘুপাক খাচ্ছিল। যেটির উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছেন এক বিশ্লেষণী প্রতিবেদনে।

শিনজো আবে বর্তমানে জাপানের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন না। কিন্তু জাপানে তিনি বড় এক ব্যক্তিত্বের নাম, ক্ষমতাধর একজন মানুষ। গত তিন দশকের মধ্যে তাকেই জাপানের সবচেয়ে খ্যাতিমান রাজনীতিবিদও বলা হয়।

কে শিনজো আবেকে হত্যা করার চেষ্টা করতে পারে? আর কেনই বা তা করবে?

শিনজো আবের মৃত্যু চরমভাবে ধাক্কা দিয়েছে জাপানের মানুষকে। রুপার্ট উইংফিল্ড-হায়েস এ ধরনের আরেকটি রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের কথা মনে করার চেষ্টা করছিলেন শিনজো আবের নিহতের ঘটনার পর। ১৯৮৬ সালে সুইডেনের প্রধানমন্ত্রী ওলোফ পালমেকেও গুলি করে হত্যা করা হয়।

তিনি বলেন, জাপানে যে সহিংস ঘটনা ঘটতে পারে সেটি প্রায় ভুলেই গেছেন। তিনি বলেন, ‘ইয়াকুজা নামে ভয়ঙ্কর এক অপরাধী চক্র রয়েছে জাপানে তা ঠিকই কিন্তু বেশির ভাগ মানুষকে তাদের মুখোমুখি পড়তে হয় না। এমনকি ইয়াকুজা গ্যাংয়ের লোকজনও বন্দুক হাতে সামনে আসার সাহস করে না, কারণ জাপানে অবৈধ অস্ত্র রাখার যে জরিমানা, সেটা মেটানোর সামর্থ্য সবার নেই।’

জাপানে বৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের মালিক হওয়া অতি সহজও নয়। কেউ লাইসেন্স চাইলে তার অতীত ঘেটে দেখা হয়, কোনো অপরাধের রেকর্ড থাকা চলবে না। বাধ্যতামূলক প্রশিক্ষণ, শুধু তাই নয় মানসিক সুস্থতার পরীক্ষাও দিতে হবে। পুলিশ ওই ব্যক্তির প্রতিবেশীদের কাছ থেকেও তার বিষয়ে খোঁজ খবর নিতে পারেন।

জাপানে অগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে অপরাধ সংঘটিত হওয়ার ঘটনা ঘটে নাই বললেই চলে। গত ১০ বছরে এরকম ঘটনা ঘটে হাতে গোনা কয়েকটি। শুধু ২০১৭ সালে এমন ঘটনা ছিল তিনটি।

কিন্তু শিনজো আবের ওপর হামলা ব্যক্তিও কম আলোচনায় আসছেন না। যে ব্যক্তি একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে গুলি করে মারতে পারে আর যে অস্ত্রটি ব্যবহার করা হয়েছে তা নিয়েও চলছে আলোচনা।

কে এই খুনি? কীভাবে তিনি ওই অস্ত্র পেলেন? কেনই বা এ হামলা চালালো, প্রশ্নের যেন শেষ নেই।

জাপানের গণমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদন বলছে, ৪১ বছর বয়সী ওই হামলাকারী জাপানের নৌবাহিনীতে ছিলেন ৩ বছর। যে অস্ত্র তিনি ব্যবহার করেছেন, সেটি নিয়েও কথা হচ্ছে।

শিনজো আবের ওপর যে অস্ত্র দিয়ে হামলা করা হয়েছে ওই অস্ত্রের যে ছবি পাওয়া গেছে, তাতে সেটা হাতে বানানো একটি অস্ত্র বলেই মনে করা হচ্ছে।

তাহলে এটা কি কোনো পরিকল্পিত রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড? নাকি বিখ্যাত কাউকে হত্যা করে কোনো উম্মাদের হঠাৎ বিখ্যাত হওয়ার চেষ্টা?

উইংফিল্ড-হায়েস বলছেন, ‘আমরা আসলে এখনও কিছুই জানি না।’

যদিও রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড জাপানেও ঘটেছে এর আগে। ১৯৬০ সালে দেশটির সোশালিস্ট পার্টির নেতার ইনেজিরো আসানুমাকে খুনের ঘটনা নাড়িয়ে দিয়েছিল বিশ্বকে।

তবে সম্প্রতি আরেক ধরনের অপরাধ প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে জাপানে। চুপচাপ, একাকী কোনো পুরুষ ভয়ঙ্কর ক্ষোভ থেকে কারো বা কোনো কিছুর ক্ষতির করার চেষ্টা করছে।

২০১৯ সালে কিয়োটো শহরে একটি জনপ্রিয় অ্যানিমেশন স্টুডিওতে আগুন ধরিয়ে দেন এক ব্যক্তি; ওই ঘটনায় মারা যার ৩৬ জন। পরে ওই লোক পুলিশকে জানান, ওই স্টুডিও তার কাজ চুরি করেছিল, সেই ক্ষোভ মেটাইতেই আগুন লাগিয়ে দেন।

২০০৮ সালের আরেকটি ঘটনায় টোকিওর আকিহাবারা জেলায় ভিড়ের মাঝে ট্রাক চালিয়ে দেয় হতাশাগ্রস্ত এক তরুণ। এরপর ছুরি নিয়ে অতর্কিত হামলা চালায়। এতে ৭ জন নিহত হন।

ওই হামলার আগে অনলাইনে একটি বার্তায় তিনি লেখেন, ‘আমি আকিহাবারায় মানুষ খুন করবো। আমার কোনো বন্ধু নেই। আমাকে অবজ্ঞা করা হয়, কারণ আমি দেখতে কুৎসিত। আমি আস্তাকুঁড়ের চেয়েও পচা।’

উইংফিল্ড-হায়েস মনে করেন, ‘আবেকে যিনি হত্যা করেছেন, তার মানসিক অবস্থা ওপরের দুটি ঘটনার মধ্যে কোনটিতে পড়বে তা এখনও বলা যাচ্ছে না। কিন্তু এই হত্যাকাণ্ড জাপানকে বদলে দেবে বলেই মনে হচ্ছে।’

 

সুত্রঃ জাগো নিউজ