‘শিক্ষক হিসেবে পরিচয় দেয়ার সময় জিজ্ঞেস করে- এমপিওভুক্ত কিনা?’

এক ছেলের প্রেমিকা তাকে “মাফ করে” দিতে বলেছে!

ছেলেটা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স পাশ করে একটা স্কুলে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে পড়াচ্ছে।

এই ছেলের মেসেজ’টা আমার “আদার বক্সে” এসেছে। আমাকে অনেকে’ই মেসেজ পাঠান। উত্তর দেয়া হয়ত সেই অর্থে সম্ভব হয় না। তবে আমি চেষ্টা করি সবার মেসেজগুলো পড়তে।

এই ছেলে যা লিখেছে, মূল কথা দাঁড়ায়- বাংলাদেশের অনেক স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসায় খণ্ডকালীন শিক্ষক আছে। কিন্তু এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা তাদের শিক্ষক হিসেবে দেখেন না। দেখে খণ্ডকালীন হিসেবে!
শিক্ষক হিসেবে পরিচয় দেয়ার সময় নাকি সবাই জিজ্ঞেস করে
-এমপিওভুক্ত কিনা?

এছাড়া করোনা আসার পর এই খণ্ডকালীন অনেক শিক্ষক নাকি বেতন পাচ্ছে না।
অর্থাৎ নিজেদের কাজের জায়গাতেই তারা এক ধরনের বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন।

ছেলেটা এই মুহূর্তে সরকারি চাকরির জন্য চেষ্টা করছে। কিন্তু শিক্ষকতা সে পছন্দ করে।

চাকরি স্থায়ী না হওয়ার কারণে তার প্রিয় মানুষটা, মানে তার প্রেমিকা নাকি তাকে বলেছে
– আমার পরিবার মানবে না। আমাকে মাফ করে দাও।

এইসব লিখে এই ছেলে আমাকে অনুরোধ করেছে
-স্যার, আপনার লেখা লাখো মানুষ পড়ে। আপনি তো পত্র-পত্রিকায় লেখালেখি করেন। টেলিভিশনে কথা বলেন। আমার জন্য নয়, খণ্ডকালীন শিক্ষকদের বছরের পর বছর চাকরি স্থায়ী হয় না। আপনি এই নিয়ে যদি একটু লিখতেন।

ছেলে,
আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি খণ্ডকালীন শিক্ষকদের নিয়ে না লিখে বরং অন্য বিষয় নিয়ে লিখবো।

যে প্রেমিকা স্রেফ চাকরি স্থায়ী না হবার কারণে তোমাকে এখন “মাফ” করে দিতে বলছে সে তো তোমাকে ভালোবাসে না।
তোমার চাকরি, প্রতিষ্ঠিত হওয়াই যদি মূল বিষয় হয়; তাহলে সে কি আদৌ তোমাকে ভালবেসেছে? নাকি তোমার চাকরি, অর্থ, স্ট্যাটাস এইসবকে ভালোবেসেছে? ভালোবাসা কি এতো’ই সহজ?

সমাজে ডিভোর্সের হার অনেক বেড়ে গিয়েছে। অনেক পরিবারে’ই আজকাল দেখা যাচ্ছে- অশান্তি! এর মূল কারণ কিন্তু এটা’ই।
আজকাল ছেলেপেলেরা আর মানুষ’টাকে ভালোবাসে না। ভালোবাসে ভালো চাকরি, গাড়ি-বাড়ি এইসব বস্তুগত বিষয়কে!
অথচ ভালো তো বাসার কথা মানুষটা কীভাবে কথা বলে, তার হাঁটা-চলা, আচার-আচরণ, ভালো-খারাপ ইত্যাদি বিষয়’কে!
ধরে নাও তোমার চাকরি’টা স্থায়ী হয়েছে। ধরে নাও তোমাদের বিয়ে হয়েছে। বিয়ের পর দেখা গেল কোন কারণে তোমার চাকরি’টা আর নেই! কিংবা তোমার কোন সমস্যা দেখা দিয়েছে।

তখন?
তখনও কি এই মেয়ে বলে বসবে- “মাফ করে দাও!”
ডিভোর্স তো সমাজে এই কারণেই বাড়ছে।
সম্পর্কগুলোও আটকে গিয়েছে এইসব বস্তুগত চাওয়া-পাওয়ায়।

আজকাল আর কেউ মানুষটাকে ভালোবাসে না। ভালোবাসে চাকরি, গাড়ি-বাড়ি, স্ট্যাটাস এইসবকে।

আমার ভালোবাসার মানুষ যদি আমাকে এসে বলে- গ্রামে গিয়ে থাকতে হবে। আমি সেখানে গিয়ে’ই থাকার চেষ্টা করবো। কারণ আমি তো মানুষটাকে ভালবেসেছি। এরপর না হয় দুজন মিলে জীবন যুদ্ধে জয়ী হবার চেষ্টা করবো।

আমার ভালোবাসার মানুষটা যদি এসে বলে- ভাঙা ঘরে থাকতে হবে। আমি সেখানে’ই থাকবো। এরপর দুজনে মিলে চেষ্টা করবো যুদ্ধ করে জয়ী হবার।

হ্যাঁ, ভালোবাসা মানে তো মানুষটাকে ভালোবাসা। তার কথা ভালো লাগবে, তার সঙ্গ ভালো লাগবে। কখনো কখনো অনেক কিছু ভালো লাগবে না। ঝগড়া হবে। কিন্তু আবার মিল হয়ে যাবে।

যে কিনা স্রেফ চাকরি স্থায়ী না হবার কারণে বলতে পারে “মাফ করে দাও!” সে কোন দিনও তোমাকে ভালোবাসেনি। কখনো’ই না।
মেয়েটার তো বলা উচিত ছিল- কোন ব্যাপার না। চাকরি নিশ্চয় একটা না একটা সময় হবে। দুজনে মিলে’ই না হয় যুদ্ধ’টা শুরু করি।

চাকরি, অর্থ, গাড়ি-বাড়ি, স্ট্যাটাস; এইসবের দরকার আছে। তবে সেটা কখনোই মানুষ, ভালোবাসা কিংবা সম্পর্কের ঊর্ধ্বে হতে পারে না। কখনো’ই না।

 

(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)

 

সুত্রঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন