শিক্ষক রেজাউল হত্যাকাণ্ড: যে তিন আসামি ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক ড. এএফএম রেজাউল করিম হত্যাকাণ্ড। এই হত্যাকাণ্ডর ঘটনার মামলায় আট আসামিকে অভিযোগপত্রভুক্ত করা হয়।  এ আট আসামির মধ্যে তিনজন বিভিন্ন সময় আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন।

নিহতরা হলেন, গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে খায়রুল ইসলাম বাঁধন, ঢাকায় পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ তারেক হাসান ওরফে নিলু ওরফে ওসমান ও নগরীর উপকণ্ঠ খড়খড়ি এলাকায় খায়রুল ডিবি পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নজরুল ইসলাম ওরফে হাসান ওরফে বাইক হাসান নিহত হন।

অধ্যাপক রেজাউল হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) পরিদর্শক রেজাউস সাদিক জানান, সেনা অভিযানে নিহতের প্রায় বছরখানেক আগে খায়রুল বাড়ি থেকে নিরুদ্দেশ হন। নিখোঁজ অবস্থায় তিনি শিক্ষক রেজাউল হত্যায় সরাসরি অংশ নেন। তদন্তে তার নাম বেরিয়ে আসে। খায়রুল বৃ-কুষ্টিয়া দারুল হাদিস সালাদিয়া কাওমি মাদ্রাসায় পড়ালেখা করেছেন। পরে বিহিগ্রাম ডিইউ সেন্ট্রাল ফাজিল মাদ্রাসা থেকে দাখিল পাস করেছিলেন।

খায়রুল ইসলাম বাঁধন: ২০১৬ সালে গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলায় অংশ নিয়েছিলেন। সেদিন সেনাবাহিনীর কমান্ডো অভিযানে অন্য পাঁচ জঙ্গির সঙ্গে তিনিও নিহত হন। খায়রুল বগুড়ার শাজাহানপুরের বৃকুষ্টিয়া গ্রামের দিনমজুর আবু হোসেনের ছেলে। আবু হোসেনের দুই মেয়ে ও এক ছেলের মধ্যে খায়রুল ছিলেন সবার বড়।

নজরুল ইসলাম ওরফে হাসান ওরফে বাইক হাসান: অধ্যাপক রেজাউল হত্যা মামলায় গ্রেপ্তারের পর আসামি মাসকাওয়াত হাসান সাকিব ১৬৪ ধারায় দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে বাইক হাসানের জড়িত থাকার কথা বলেন। এই নজরুল ও মূল পরিকল্পনাকারী শরিফুলকে ধরিয়ে দিতে পত্রিকায় ছবিসহ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে এক লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছিল আরএমপি। ওই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের চার দিন পর, ২০১৬ সালের ৩১ জুলাই রাজশাহী নগরীর উপকণ্ঠ খড়খড়ি এলাকায় খায়রুল ডিবি পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন।

পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জের পুরোহিত মঠ অধ্যক্ষ যজ্ঞেশ্বর রায়, রংপুরে জাপানি নাগরিক কুনিও হোশি, কাউনিয়া মাজারের খাদেম রহমত আলী, রাবির অধ্যাপক রেজাউল করিম সিদ্দিকীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘটিত মোট ১১টি হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশ নেন এই নজরুল ইসলাম ওরফে বাইক হাসান। তিনি এসব কিলিং মিশনে মোটরসাইকেল চালকের ভুমিকা পালন করতেন। তাই জেএমবির এই ক্যাডার সংগঠনের সদস্যদের কাছে ‘বাইক হাসান’ নামে পরিচিত ছিলেন। পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলার সোনারহার গ্রামের আব্দুল্লাহ ওরফে মুন্সীর ছেলে নজরুল। মাদ্রাসা থেকে পড়াশোনা করেছিলেন তিনি।

তারেক হাসান ওরফে নিলু : ২০১৬ সালের জুনে ঢাকায় পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন। তার সঙ্গে সুলতান মাহমুদ ওরফে কামাল ওরফে রানা নামে আরও এক জঙ্গি নিহত হন। জয়পুরহাটের বাসিন্দা ওসমান ছিলেন জেএমবির উচ্চ পর্যায়ের নেতা। অধ্যাপক রেজাউল করিম হত্যাকাণ্ড ছাড়াও দিনাজপুরের কাহারোলে ইসকন মন্দিরে হামলায় জড়িত ছিলেন তিনি।

এর আগে ২০১৬ সালের ২৩ এপ্রিল সকালে রাজশাহী নগরীর শালবাগান এলাকায় নিজের বাড়ি থেকে মাত্র ৫০ গজ দূরে কুপিয়ে ও গলাকেটে হত্যা করা হয় ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ড. এএফএম রেজাউল করিম সিদ্দিকীকে। পরের বছরের ৬ নভেম্বর জেএমবির ৮ সদস্যকে অভিযুক্ত করে আদালতে মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশ।

চাঞ্চল্যকর এ হত্যা মামলার রায় ঘোষণা হলো গতকাল মঙ্গলবার। রায় ঘোষণার পর আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলী (পিপি) অ্যাডভোকেট এন্তাজুল হক বাবু বলেন, এ রায়ে আমরা সন্তুষ্ট। কারণ আসামিরা জঙ্গি ও সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সঙ্গে জড়িত। পলাতক আসামি শরিফুলকে গ্রেফতারের পর তাকেসহ দুইজনের ফাঁসির রায় কার্যকর হোক, পরিবারের মত এটা আমাদেরও দাবি।

তবে আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলাম বলেন, এই রায়ে আমরা সন্তুষ্ট না। রায়ের সার্টিফাইড কপি হাতে পেলে ৩০ দিনের মধ্যেই উচ্চ আদালতে আসামিদের পক্ষে আপিল করা হবে।

এর আগে দুপুরে রাজশাহীর দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শিরীন কবিতা আখতার এক জনাকীর্ণ আদালত রায় ঘোষণা করেন। এর মাধ্যমে মাত্র দুই বছরের মাথায় চাঞ্চল্যকর এ হত্যা মামলার রায় ঘোষণা হলো। ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- প্রধান আসামি শরিফুল ইসলাম (পলাতক) ও মাসকাওয়াত হাসান ওরফে আব্দুল্লাহ ওরফে সাকিব।

যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- নীলফামারীর মিয়াপাড়ার রহমত উল্লাহ, রাজশাহীর নারিকেলবাড়িয়া এলাকার আবদুস সাত্তার ও তার ছেলে রিপন আলী। এ সময় শরিফুল ইসলাম ছাড়া বাকি সব আসামি আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

 

স/আ