শাহরুখ খানকে কেন মেয়েরা এত পছন্দ করেন!

বলিউডের সুপারস্টার শাহরুখ খানকে কেন মেয়েরা এত পছন্দ করে— এর উত্তর খুঁজতে রীতিমতো গবেষণা চলছে!

তাও আবার গত ২০ বছর ধরে। সম্প্রতি  শ্রায়ানা ভট্টাচার্য নামে এক লেখিকা তার প্রকাশিত ‘ডেসপারেটলি সিকিং শাহরুখ খান‘ নামে বইটিতে এমনটিই দাবি করেছেন। খবর বিবিসির।

মেয়েদের পছন্দের কারণ হিসেবে উঠেছে এসেছে— নায়ক হিসাবে শাহরুখ ‘আকর্ষণীয়‘, তিনি ‘মজা‘ করতে পারেন, বুদ্ধিদীপ্ত ‘ব্যঙ্গ‘ করতে ওস্তাদ, সাক্ষাৎকারে স্পষ্ট করে তার কথা প্রকাশ করতে পারেন এবং খ্যাতি ও অর্থের জন্য তার যে চেষ্টা তা নিয়ে তার কোনো ‘লজ্জা‘ বা কুণ্ঠা নেই।

বইটির লেখিকা শ্রায়ানা ভট্টাচার্য শাহরুখ সম্পর্কে তার ডজন ডজন নারী ফ্যানকে এই প্রশ্ন করে প্রায় একই উত্তর পেয়েছেন। তবে অবাক হলেও এটি সত্যি যে, অনেক নারী শাহরুখ প্রেমের সঙ্গে তাদের আর্থ-সামাজিক বৈষম্যের যোগসূত্র রয়েছে।

কখন, কীভাবে এবং কেন তারা শাহরুখকে পছন্দ করা শুরু করলেন, তার উত্তর দিতে গিয়ে এসব নারী নিজেদের ব্যক্তিগত জীবনে কখন, কীভাবে এবং কেন তাদের হৃদয় ভেঙেছে সে কথা বলেছেন।

তাদের স্বপ্ন, উদ্বেগ, তাদের প্রেম এবং সঙ্গী পছন্দ নিয়ে নারীদের যে নিরন্তর লড়াই ও যন্ত্রণা তার সঙ্গে যেন কোথাও তাদের শাহরুখপ্রীতির যোগসূত্র রয়েছে।

শ্রায়ানা ভট্টাচার্য হঠাৎ করে কোনো সমীক্ষা চালাননি । প্রায় ২০ বছর ধরে বিভিন্নভাবে, বিভিন্ন সময়ে শাহরুখ খানের জনপ্রিয়তা নিয়ে উত্তর ভারতের বহু নারীর সঙ্গে খোলামেলা আলাপচারিতা থেকে লেখক এসব উত্তর পেয়েছেন।

এসব নারীর মধ্যে বিবাহিত-অবিবাহিত, হিন্দু, মুসলিম, খ্রিস্টান— সব ধরনের মানুষ আছেন। তাদের অনেকে পরিবারে সুখী, অনেকে অসুখী ও অতৃপ্ত। তাদের মধ্যে অনেক শ্রমজীবী নারীও রয়েছেন। একটি বিষয়ে তাদের মধ্যে মিল– তারা সবাই শাহরুখ খানের ফ্যান।

শাহরুখ খানের সরব প্রবেশ ১৯৯০-এর দশকে। একই সময়ে ভারতে কোকা-কোলা, কেবল টিভির আগমন। ভারতে নতুন এক ‘উদার অর্থর্নীতির‘ সূচনা তখন। লেখক সেই সময়ের নারীদের গল্প বলতে চেয়েছেন।

২০০৬ সালে পশ্চিম ভারতের একটি বস্তিতে আগরবাতি তৈরির কারখানার নারী শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলেছেন এই লেখক। মজুরি নিয়ে তারা খুবই ক্ষুব্ধ ও হতাশ ছিলেন। কাজের বিরতির সময় ওই নারী শ্রমিকদের সঙ্গে তিনি কথা শুরু করেন। জিজ্ঞেস করেন কোনো বলিউড নায়ক তাদের সবচেয়ে প্রিয়।

তারা সোৎসাহে বলতে শুরু করেন কী কী বিষয় তাদের আনন্দ দেয় এবং তার অন্যতম ছিল শাহরুখ খান।

তার পরের সব এ ধরনের সমীক্ষায় শ্রায়ানা দেখতে পেয়েছেন শাহরুখ খানের ফ্যান এই নারীদের প্রায় সবাই শ্রমবাজারে তাদের বৈষম্যের শিকার। সেই সঙ্গে ঘরে-পরিবারে তাদের সবাইকেই কমবেশি লড়াই করতে হয়। মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত যেসব নারী শাহরুখের ফ্যান, তাদের মুখেও একই কথা শুনেছেন লেখক।

সাধারণ একটি আক্ষেপ এই নারীরা করেছেন— কেন আরও বেশি পুরুষ শাহরুখের মতো হয় না!

এই নারীরাই তাকে তারকা বানিয়েছেন। আর তার পেছনে ছিল তাদের নিজেদের নিত্যদিনের বাস্তবতা, তাদের আকাঙ্ক্ষা, স্বপ্ন ও হতাশা। পর্দায় নায়িকার প্রতি খানের শতভাগ নিষ্ঠা, মনোযোগ নারীদের আকর্ষণ করে।

তার অনেক চরিত্রে তিনি যেভাবে সম্পর্কের পরিণতি, অনিশ্চয়তা নিয়ে তার উদ্বেগ দেখিয়েছেন, তাতে আকৃষ্ট হয়েছেন নারীরা। কারণ তাদের নিজেদের জীবন নিয়েও তারা সবসময় অনিশ্চয়তায় ভোগেন।

পর্দায় আবেগ প্রকাশ করতে গিয়ে শাহরুখ যেভাবে অনেক সময় বেসামাল হয়ে হু হু করে কাঁদেন, যেটি বলিউডে বেশ বিরল– তা পছন্দ করেন নারীরা। কারণ তারা দেখেন শাহরুখ তার আবেগ প্রকাশ করতে, নারীদের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করতে লজ্জা পান না।

মুসলিম এক নারী পোশাক শ্রমিক বলেন, আমি স্বপ্ন দেখি কাভি খুশি কাভি গাম ছবিতে শাহরুখ যেভাবে কাজলের সঙ্গে কথা বলেছে, তাকে স্পর্শ করেছে, আমার সঙ্গেও কোনো পুরুষ যদি তেমন করত! কিন্তু আমার স্বামী এতই রুক্ষ।

ধনী, অভিজাত পরিবারের অসুখী বিবাহিত এক নারী বলেন, তিনি তার ছেলেদের ‘ভালো মানুষ‘ হিসেবে বড় করতে চান। তার কাছে ভালো মানুষের সংজ্ঞা হচ্ছে- তারা যেন কাঁদতে পারে, শাহরুখ যেমন আমাদের মধ্যে যে ভরসা এবং ভালোবাসার বোধ তৈরি করেন, তার ছেলেরাও যেন তাদের স্ত্রীদের মনে একই অনুভূতি তৈরি করতে পারে।

 

সুত্রঃ যুগান্তর